কলকাতা: সোশ্যাল মিডিয়াতে সম্প্রতি একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টিভেজা কলকাতার রাস্তায় ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে একজন বাসচালকের হাত থেকে কিছু একটা নিচ্ছে কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মী। ছবিটিতে কলকাতার ওই ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী (Kolkata Traffic police) বাসচালকের থেকে ঘুষ (bribe) নিচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
যদিও পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে দাবি করা হয় যে ওই ছবির সঙ্গে যে দাবি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়ো। আরও জানানো হয় যে উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের একজন সার্জেন্ট রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করার জন্য একটি বেসরকারি বাসচালকের থেকে স্পট ফাইন নিচ্ছিলেন। আর ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ অগাস্ট। নিজেদের দাবির স্বপক্ষে কলকাতা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে কলকাতা পুলিশ একটি চালানের ছবিও পোস্ট করে। যাতে দেখা যাচ্ছে যে স্পট ফাইনের একটি কাগজ এবং তাতে লেখা রয়েছে ২০২৪ সালের ২৫ অগাস্ট। ওই ছবিটি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে ওই ট্র্যাফিক পুলিশ সার্জেন্ট ঘুষ নিচ্ছিলেন না বরং সরকারি কোষাগারে টাকা জমা করার জন্য বাসচালকের থেকে স্পট ফাইন নিচ্ছিলেন।
যদিও ভাইরাল হওয়া ছবি ও পোস্টটি খতিয়ে দেখে বোঝা যায় যে ঘটনাটি এই বছরের ২৫ অগাস্টের নয় বরং গত বছরের। ২০২৩ সালের ৬ অগাস্ট ফেসবুকে আমরা বেহালাবাসী নামে একটি ফেসবুক পেজে ভাইরাল ওই ছবিটি সহ আরও একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন একজন ব্যক্তি। তাতে নিমতা-সল্টলেক সেক্টর ৫ রুটে চলা ২০১ নম্বর একটি বাসের চালকের হাত থেকে টাকা নিতে দেখা যাচ্ছে একজন ট্র্যাফিক
পুলিশ কর্মীকে। ছবিটি পোস্ট করে ওই ব্যক্তি লিখেছিলেন, এভাবে এইমাত্র একজন বাস চালকের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন একজন সহৃদয় পুলিশ কর্মী। চালকের সঙ্গে চিরকূট আদান প্রদানের পর অন রোড ক্যাশের লেনদেন হল ওই বাসের কন্ডাক্টরের হাত দিয়ে। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অলিখিত অনুমতিপত্র এভাবেই স্বাক্ষরিত হয়। রাস্তায় বের হলেও এসব দেখা যায়।
সম্প্রতি পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশের তরফে পোস্ট করে জানানো হয়, "নীচের ছবিটি ভালো করে দেখুন। ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই হয়তো ছবিটি দেখেছেন। অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা আবার ছবিটি ভালো করে দেখুন। যাঁরা এখনও দেখেননি, তাঁরা দেখুন। ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি আমাদের সহকর্মী উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট। যিনি ২৫ অগাস্ট সকাল ১০টা নাগাদ খান্না মোড়ের কাছে একটি বেসরকারি বাস আটক করেছিলেন। আর পথচলতি যানবাহনের অসুবিধা ঘটনার জন্য চালককে জরিমানা করেছিলেন। তার পরিমাণ ছিল ৫০০ টাকা। যার রশিদও দেওয়া হয়েছিল। স্পট ফাইনের যে টাকা উনি নিচ্ছিলেন তা বিধি অনুসারে জমা হবে সরকারি কোষাগারে। যাঁরা সত্যিই সত্যিটা জানতে চান তাঁদের জন্য বাকি ছবিগুলিতে কেস নম্বর, ধারা ইত্যাদি তথ্য দেওয়া রইল। অথচ সত্যিটা না জেনেই নেটিজেনদের একাংশে ছবিটি ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যঙ্গ, কটাক্ষ ও গালাগাল। 'ঘুষখোর' পুলিশকে নিয়ে বানিয়ে ফেলা হয়েছে মিম। যত বেশি, গলাগলি, তত বেশি লাইক, তত বেশি শেয়ার। শেষে বলার, ভালোমন্দ সব পেশাতেই আছে, পুলিশেও আছে। কাজে ভুলত্রুটি বা অন্যায় হলে নিশ্চয়ই তা আমাদের গোচরে আনুন,সমালোচনা, আমরা সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেব। তবে পুরোটা না জেনে ভুল তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। অনুরোধ এই টুকুই। সত্যিটা দিনের শেষ সত্যি, আর মিথ্যেটা মিথ্যেই।"
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Bankura News: বিজেপি নেতাদের ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার হুমকি বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতার, কেন জানেন?