কলকাতা: অভিনয় থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন।  গোড়ার দিকে ঠিকঠাক চললেও, বিতর্কে জেঁকে ধরে তাঁকে। শেষ মেশ যন্ত্রণা, উপেক্ষা সঙ্গে নিয়েই মারা যান অভিনেতা তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল (Tapas Paul)। রাজনৈতিক সভায় বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তার আগে থেকেই যদিও তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল তৃণমূলের (TMC)। এতদিন পর তাপসের প্রতি দলের আচরণ নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেতার পরিবার। 


কৃষ্ণনগরের সাংসদ ছিলেন তাপস। ওই কৃষ্ণনগরের সাংসদ পদ থেকেই সম্প্রতি বহিষ্কৃত হয়েছেন মহুয়া মৈত্র। টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এই গোটা পর্বে আগাগোড়াই মহুয়ার পাশে ছিল তৃণমূল। তাপস কেন একই ধরনের আচরণ পেলেন না, কেন তাঁকে দূরে ঠেলে দেওয়া হল, এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাপসের পরিবার। 


বিতর্কিত ওই মন্তব্য এবং সারদাকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর থেকেই তাঁদের প্রতি দলের আচরণ পাল্টে যাচ্ছিল বলে দাবি করেছেন তাপসের স্ত্রী নন্দিনী পাল (Nandini Paul)। তাঁর বক্তব্য, "তাপস যখন চলে গেলেন, দিদির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করি। নবান্নে তিন বার চিঠি দিয়েছি। ডেরেক, দোলা, কাজরী বন্দ্য়োপাধ্যায়, যাঁকে বৌদি বলতেন  তাপস, তাঁর অফিসেও চিঠি দিই। এক ঘণ্টা বসে থেকে হাতে চিঠি দিয়ে আসি। ওঁর কাছে দিলে উত্তর পাওয়া যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি।" লাগাতার চিঠি লিখেও মমতার থেকে তাপস জবাব পাননি বলেও জানিয়েছেন নন্দিনী এবং তাঁর কন্যা সোহিনী।


আরও পড়ুন: Tapas Paul Family: মহুয়ার পাশে দল, তাপসকে কেন দূরে ঠেলা হল, বিস্ফোরক প্রয়াত অভিনেতার পরিবার


তাপসের প্রতি ফিরহাদ হাকিমের আচরণও সঠিক ছিল না বলে দাবি করেছেন নন্দিনী। তাঁর কথায়, "তাপস তখন বিধায়ক, উনি কাউন্সিলর। দ্বিতীয় বার বিধায়ক হওয়ার টিকিট যখন পেলেন তাপস, শুনেছি ববি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।  সামনে যদিও মিষ্টি ব্যবহার করতেন। কী করব জানতে চেয়েছিলাম। উনিয়ও মলয়কে বলে দিয়েছেন বললেন। সোহিনীকে সিনেমায় সুযোগ করিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। তার পর বললেন, 'তাপসের মাথাটা শেষ দিকে খারাপ হয়ে গিয়েছিল না'!  পাগল হয়ে গিয়েছিল!" সেহিনী জানিয়েছেন, তাঁর সামনেই ওই কথা বলা হয়। অত্যন্ত দুঃখ পান তিনি। কিন্তু তাঁর বাবা পাগল হননি।


যে বিতর্কিত এবং কুরুচিকর মন্তব্যকে তাপসের রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে ধরা হয়, সেই নিয়েও এদিন মুখ খোলেন নন্দিনী। বলেন, "ওই মন্তব্যের জন্য কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারেননি তাপস। পরিবার হিসেবে আমরাও ক্ষমা করিনি। আজও লজ্জিত এবং দুঃখিত আমরা। যতটা দুঃখিত উনি ছিলেন, ততটাই। এর কোনও অজুহাত হয় না। তাপস বলেছিলেন, উনি পাপ করেছেন। তাই জেলযাত্রার পর বলেন, 'ভালই হয়েছে,পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে'।"


নন্দিনীর দাবি, চিটফান্ডের সঙ্গে কোনও যোগ ছিল না বলে বার বার তাঁকে জানিয়েছিলেন তাপস। শুধু একটি ছবি করেছিলেন। বাড়তি কোনও সুবিধা বা অযাচিত টাকা গ্রহণ করেননি। এক কোটি টাকার বন্ডে জামিন পেয়েছিলেন তাপস। আজও সেই টাকা সিবিআই-এর ঘরে পড়ে বলে জানিয়েছেন নন্দিনী। তিনি জানিয়েছেন, ওই টাকাই তাঁর সম্বল। সেটা ফেরত চান যেনতেন প্রকারে। নন্দিনী আরও জানিয়েছেন, নিজের আঁকা দু'টি ছবি তাপসকে উপহার দিয়েছিলেন মমতা। কেউ ১ কোটি টাকা দিলে ওই ছবি দু'টিও বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত তিনি।


এই গোটা বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর দাবি, নন্দিনী ফোন করলে ধরেন তিনি। সাধ্যমতো সাহায্যও করেন। তিনি একা নন, দলের সকলেই সব রকম চেষ্টা করেন। মমতাও অত্যন্ত সহমর্মী তাপসের পরিবারের প্রতি। কিন্তু সব সময়, সব কাজ করা যায় না। তাই হয়ত অভিমান হয়ে থাকতে পারে তাপসের পরিবারের। মমতা তাপসের পরিবারকে ভালবাসেন, কিছু ব্যাপারে পরিবারের অভিমান হয়ে থাকতে পারে বলে মত কুণাল ঘোষেরও।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।