মঞ্জরী পালসেন
গণিত শিক্ষিকা
রানী বিনোদমঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়,ঝাড়গ্রাম


ঝাড়গ্রাম: দুবছর ধরে চলেছে করোনা পরিস্থিতি। এই সময়ে দীর্ঘদিন ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে এসে স্বাভাবিক পঠনপাঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এরই মধ্যে শুরু হচ্ছে অফলাইনে মাধ্যমিক। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় অঙ্ক নিয়ে অনেকেরই ভয় থাকে। কিন্তু ছোট ছোট কিছু বিষয়ে নজর রাখলে এবং মাথা ঠান্ডা রাখলে সহজেই ভাল করে অঙ্ক পরীক্ষা দেওয়া যায়। কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তারই খুঁটিনাটি বলে দিলেন অঙ্কের শিক্ষিকা মঞ্জরী পালসেন।


এই বছরের মাধ্যমিকের গণিত সিলেবাসে ত্রিকোণমিতি, রাশিবিজ্ঞানকে বাদ রাখা হয়েছে। তাই পুরো ৯০ নম্বরের প্রশ্নই পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি,পরিমিতি থেকে করা হবে। মনে রাখতে হবে ৩৬ নম্বরের অবজেক্টিভ প্রশ্ন থাকবে,যার মধ্যে এমসিকিউ (MCQ) ৬টি, ফিল ইন দ্য ব্ল্যাঙ্ক ৫টি, সত্য/মিথ্যা  ৫টি,  একাধিক ছোট প্রশ্নও থাকবে। তাই অঙ্ক পরীক্ষায় নম্বর তুলতে ছোটপ্রশ্নের এই অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মনে রাখতে হবে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরে মূলধাপগুলি সংক্ষেপে করে দেখাতে হবে। অঙ্ক করার প্রয়োজনে যাবতীয় রাফ ওয়ার্ক লাইন টেনে খাতার ডানদিকে করতে হবে।


পাটিগণিতে মোট ১০ নম্বর থাকবে। তাই পাটিগণিতের অঙ্কের প্রতিটি ধাপ স্পষ্ট করে দেখাতে হবে। শেষে প্রশ্নের ভাষায় উত্তর দিতে হবে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে চক্রবৃদ্ধি সুদ/সমহার বৃদ্ধির অঙ্ক করার সময় যাবতীয় গণনার কাজ সাবধানে করতে হবে, কারণ এই অঙ্কে অধিকাংশ নম্বর গণনার ওপরই নির্ভর করছে।


বীজগণিতে থাকবে ১৫ নম্বর। ৩×২+৩×২+৩×১=১৫ এই ভাগে প্রশ্নগুলি থাকবে। এক্ষেত্রেও খুব সহজেই ছাত্র,ছাত্রীরা নম্বর তুলতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে,সমীকরণ সমাধানের অঙ্ক করার সময় প্রতিটি ধাপে বামদিকে “বা/or” লিখতেহবে।


পরিমিতিতে ৪×৪ ভাগে ১৬ নম্বর থাকবে। প্রতিটা অধ্যায়ই ত্রিমাত্রিক ঘনবস্তুকে নিয়ে। অঙ্কের প্রয়োজনে ছবি আঁকতে হলে ছবির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আগে দিয়ে দিতে হবে।
কোনওভাবেই সঠিক একক লিখতে যেন ভুল না হয়। প্রশ্নে একই রাশির বিভিন্ন একক থাকলে খেয়াল করে যেকোনও একটি একক (যা চাওয়া হয়েছে বা যেটি সুবিধাজনক) নিয়ে অঙ্কটি কষতে হবে।


জ্যামিতির উপপাদ্য থেকে ৫+৩ =৮ নম্বর থাকবে। অর্থাৎ একটি উপপাদ্য ও একটি প্রয়োগ। উপপাদ্য সিলেবাসের মধ্যে থেকেই আসবে। তাই একটু ভাল করে উপপাদ্যগুলি বই থেকে তৈরি করলে খুব সহজেই পুরো নম্বর পাওয়া যাবে।


উপপাদ্য লেখার সময় যা যা খেয়াল রাখতে হবে:


১. চিত্র যেন অবশ্যই থাকে। সেটা পেনসিল দিয়ে আঁকতে হবে।


২.যদি প্রশ্নে নামকরণ করে দেওয়া না থাকে তাহলে নিজেদের মত করে নামকরণ করে সেই অনুযায়ী লিখতে হবে। প্রশ্নে নামকরণ করে দেওয়া থাকলে অবশ্যই সেই নাম দিয়ে চিত্র অঙ্কন করতে হবে ও সেই অনুযায়ী উপপাদ্যটি লিখতে হবে।


৩.সাধারণ ও বিশেষ নির্বচন,প্রামাণ্যবিষয়,অঙ্কন,প্রমাণ যথাযথ ক্রমে লিখতে হবে।


এর সঙ্গেই ৫ নম্বরের একটি সম্পাদ্য করতে হয়। সম্পাদ্যের প্রশ্নে দেওয়া মাপ অনুসরণ করে পেনসিল দিয়ে আঁকতে হবে। যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে অঙ্কন করতে হবে। অঙ্কন শেষে অঙ্কনচিহ্ন দিলেই হবে। মধ্যসমানুপাতি অঙ্কনের ক্ষেত্রে উত্তর লেখার সময় মধ্যসমানুপাতীর দৈর্ঘ্যেরএকক লিখতে হবে, কিন্তু একই অঙ্কনপদ্ধতি অনুসরণ করে বাস্তবসংখ্যার বর্গমূল নির্ণয় করতে হলে উত্তরে বাস্তব সংখ্যার বর্গমূলের মানের কোনও একক থাকবে না।


যে দিকে নজর:
১. উপপাদ্য ও সম্পাদ্য আলাদা আলাদা ভাবে উত্তরপত্রের একটা পাতায় করলে ভাল।
২. সরকারি গণিতবইয়ের প্রতিটা উদাহরণের অঙ্ক,অনুশীলনীর অঙ্ক ভাল করে অনুশীলন করতে হবে।
৩. সম্পূর্ণ উত্তরপত্র পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৪. Objective প্রশ্নের উত্তর প্রথম দিকে করতে পারলে ভাল।
৫. পরীক্ষার শুরুতেই যেহেতু প্রশ্নপত্র পড়ার আলাদা সময় থাকছে, তাই পরীক্ষার্থীরা খুব ভালভাবে প্রশ্ন পড়ে দেখে নেবে কোন অঙ্কগুলো বিনাবাধায় খুব সহজেই করতে পারবে। ৬. সেই অঙ্কগুলো শুরুতেই করে নেবে। তারপর যে অঙ্কগুলো একটু চেষ্টা করে করতে হবে সেগুলো করবে।
৭. তবে কোনও অঙ্ক করতে সমস্যা হলে তার জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে তার বিকল্প প্রশ্ন বা অন্য প্রশ্নের উত্তর করা উচিত। তাহলে সময়ের অপচয় হবে না এবং তার জন্য অকারণে মানসিক চাপও তৈরি হবে না।
৮. যদি কোনও অঙ্ক অসমাপ্ত থাকে তাহলে কখনও সেটা শেষ করতে না পারার জন্য কেটে দেবে না।
৯. সকল পরীক্ষার্থীরা চেষ্টা করবে পরীক্ষা শেষে কিছুটা সময় (কমপক্ষে ১৫/২০ মিনিট) রিভিশনের জন্য রাখতে, যাতে অঙ্ক করতে কোনও ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করতে পারো।


গণিত একটি logical subject, তাই সঠিক পদ্ধতি ও ধাপ অনুসরণ করে অঙ্ক করলেই পুরো নম্বর পাওয়া সম্ভব। নির্ভয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে শরীর সুস্থ রেখে অঙ্ক পরীক্ষা দিলে সাফল্য মিলবেই।


আরও পড়ুন: যথাসম্ভব নিয়মিত লেখার অভ্যাস প্রয়োজন, মাধ্যমিকে ইংরেজি পরীক্ষার আগে কিছু টিপস দিলেন শিক্ষিকা


লাস্ট মিনিট টিপস সাজেশন মাত্র। বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শ পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে। তবে একইসঙ্গে নিজস্ব প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাসের উপর আস্থা রাখতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। শুভেচ্ছা। 


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI