করুণাময় সিংহ, মালদা: মন ভ্রমরা বেড়ায় মেতে, কালী (Kali Puja 2021) নামের কমলেতে। মালদার জহরা মন্দিরে এসেই চলেছেন পুণ্যার্থীরা। বাংলার অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দিরে গমগম করছে ঢাকের শব্দ। 


ইংরেজবাজার শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে আমবাগানে ঘেরা এই কালী মন্দির। মূল বিগ্রহ প্রচলিত মূর্তির মতো নয়। লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে একটি মুখোশ। ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। দেবীর নাম জহরা। তিনি এখানে চণ্ডীরূপে পূজিতা হন। তবে আর পাঁচটা কালী মন্দিরের মতো দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে পুজো রাতে হয় না এখানে। দিনের আলোয় পুজো হয় দেবী জহরার। 

সেবায়েত প্রবীর তেওয়ারি জানালেন, ' দিনের আলোতেই পুজো হয় এখানে। সন্ধের পর পুজো হয় না। শুকনো বাতাসা, সন্দেশ ভোগ হয়। ছাগবলির প্রচলন আছে। ' 

আরও পড়ুন :


ভূত চতুর্দশীর দিন কি সত্যিই নেমে আসে পূর্বপুরুষের আত্মা ? কেনই বা খাওয়া হয় ১৪ শাক?


মন্দিরের গায়ে যে পাথরের ফলক রয়েছে, তা থেকে জানা যায় ১২১৩ বঙ্গাব্দে সূচনা হয়েছিল এই পুজোর। কথিত আছে, ছল্ল তিওয়ারি নামে উত্তরপ্রদেশের এক মাতৃ সাধক দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। স্বপ্নাদেশে রায়পুর গ্রামের এই আমবাগানে দেবী জহরা চণ্ডীর বেদী স্থাপন করেছিলেন তিনি।

তারপর থেকে বংশ পরম্পরায় সেই তিওয়ারি পরিবারই কাজ করে আসছে। দেবীর জহরা নামকরণ নিয়েও রয়েছে জনশ্রুতি। কথিত আছে, এই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। ডাকাত দল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ও পরে পুজো দিত জহরা কালী মন্দিরে। 


লুঠের বহু মূল্যবান ধনরত্ন এনে মন্দিরে মাটির তলায় পুঁতে রাখা হোত। ওই ধনরত্নের ওপরেই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিহার-ঝাড়খণ্ড লাগোয়া মালদার রায়পুর গ্রামে হিন্দি ভাষার চল রয়েছে। ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’।  দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত । তা থেকে দেবীর নামও হয়ে যায় জহরা বা জহুরা কালী।

পুজোর প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য কল্যাণ তিওয়ারি জানান, ' ডাকাতরা এক সময় পুজো দিত এখানে। শুধু এদেশের মানুষ নন,জহুরা মাকে পুজো দিতে আসেন ভিন দেশের বাসিন্দারাও। বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে 
পুজো দিতে আসেন অনেকে।' 


ঐতিহাসিকদের একাংশের ধারণা, জহরা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাজা বল্লাল সেন। জনশ্রুতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য --- সব গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রয়েছে এখানে। মাহাত্ম্যে ও বৈচিত্রে অনন্য মালদার জহরা মন্দির।