পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: বাংলার আমে মালদা-মুর্শিদাবাদের একচেটিয়া মৌরসিপাট্টা এখন আর নেই। অনেকদিন আগেই সেই জায়গায় ভাগ বসিয়েছে বাঁকুড়া। কিন্তু এবার বাদ সেধেছে আবহাওয়া। তীব্র গরমে বাঁকুড়ায় এবার আম উৎপাদনে ঘাটতি দেখা গিয়েছে। ফলে এবার জেলা থেকে আম বাইরে যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল। যদিও সেই সমস্যা আর নেই, জেলা উদ্যান পালন দফতরের হাত ধরে দিল্লি পাড়ি দিচ্ছে বাঁকুড়ার আম।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ রাজ্যের আম মানচিত্রে পরিচিত নাম বাঁকুড়া (Bankura)। বাঁকুড়ার লাল মাটিতে উৎপাদিত আম্রপালি (Mango Farming) ও মল্লিকার স্বাদে-গন্ধে মজেছেন বাংলার মানুষ। সেই স্বাদে মজেছেন দেশের অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাও, দাবি চাষিদের। মধ্য প্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও বাঁকুড়ার আম গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। গত কয়েকবছর ধরে দিল্লির আমমেলায় মালদা ও মুর্শিদাবাদকে টপকে একের পর এক মেডেল ছিনিয়ে নিয়েছে বাঁকুড়ার আম্রপালি ও মল্লিকা। বাঁকুড়ার সহ উদ্যান পালন আধিকারিক সেলিম আলি বলছেন, 'প্রতি বছরের মতো এবারও দিল্লিতে আমের মেলা হচ্ছে। বিভিন্ন ধাপে ধাপে ট্রেনে করে আমরা আম পাঠাব। মালদা-মুর্শিদাবাদ, হুগলির পাশাপাশি যে বাঁকুড়ার লালমাটিতে আম হয়। বিশেষ করে আম্রপালি- এখানকার আম্রপালির মতো স্বাদ অন্য জায়গায় পাওয়া যাবে না। গতবার আমরা প্রথম পুরস্কার নিয়ে এসেছি। আশা করছি এবারও আমরা পারব।'
এবার আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় জেলা জুড়ে আমের ফলন কমেছে অনেকটাই। স্বাভাবিক ভাবেই জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র আম পাঠানো যাবে কিনা তা নিয়ে আশা আশঙ্কা ছিল উদ্যান পালন দফতরের। তবে শেষ পর্যন্ত এবারও রাজ্যের বাইরে পাড়ি দিল বাঁকুড়ার আম্রপালি ও মল্লিকা। উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক ড. পায়েল পাঁজা বলছেন, 'আমাদের এই বছর মোট ৭ টন আম দিল্লি যাচ্ছে। এবার গোটা বাংলায় আমের উৎপাদন অনেকটাই কম। গত বছরের তুলনায় তার ৬০ শতাংশ আম এবার হয়েছে। বাঁকুড়ার আম্রপালি খুবই নামী, সেটাই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যাচ্ছে। হিমসাগর, মল্লিকা, গোলাপখাস যাচ্ছে। এখানে কিছু চাষি এক্সোটিক ভ্যারাইটি চাষ করেছেন- মিয়াজাকি, কোহিতুর চাষ হয়েছে। সেগুলিও কিছু যাচ্ছে। বাঁকুড়ায় জমি রুক্ষ, মূলত ল্যাটেরাইট মাটি, জলেরও অভাব রয়েছে। তাই এখানে ধান, পাট, সবজি, ফুল চাষের সমস্যা রয়েছে। তাই এই মাটিতে ফল চাষ হলে ভাল হয়। গত কয়েকবছর ধরে আমরা ভাল ফল পেয়েছি।'
১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দিল্লির জনপথে আয়োজিত আম মেলায় অংশ নিচ্ছে বাঁকুড়ার আম্রপালি ও মল্লিকা। এই সাফল্যে খুশি চাষিরাও। আম চাষি নিত্যানন্দ গরাই জানাচ্ছেন, 'দিল্লি যাব ভাবিনি প্রথমে। এখন আমার ফল দিল্লি যাচ্ছে। বিদেশি ফলও চাষ করেছি, সেটাও যাচ্ছে। সব আম জৈবসারে চাষ হয়েছে। এখন ট্রেনে আম যাবে। আমরাও যাব। ওখানে গিয়ে প্যাকিং করে সাজানো হবে। জাপানের মিয়াজাকি আম নিয়ে যাচ্ছি। আমার আশা ৫ হাজার টাকা প্রতি পিস বিক্রি করব।' আরও এক আমচাষি সুশীল মান্ডি বলছেন, '১০-১২ বছর ধরে চাষ করছি এখানে। এখানের মাটিতে আম্রপালি, মল্লিকা খুব ভাল হয়। এই আম যে দিল্লি যাচ্ছে, আমরা খুব খুশি।'
গত কয়েকবছরের মতো এবারও কি বাঁকুড়ার আম আম দিল্লিবাসীর মন জয় করবে? আশা ছাড়তে নারাজ উদ্যান পালন দফতর। দিল্লির আম মেলায় জেলার আম যাওয়ায় ভাল দাম পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন জেলার শতাধিক আম চাষি।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: বার্ড-ফ্লু এর আবহেই ডেঙ্গি বিপদ মালদায়! বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা