বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: নেতাজি নেই। কিন্তু তাঁর স্মৃতি আঁকড়ে আজও বেঁচে আছেন বহু মানুষ। চেয়ার সংরক্ষণ করে নেতাজিকে সম্মান জানিয়েছে তমলুক পুরসভা। অন্যদিকে, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির কর্মকার পরিবারে ঠাকুরঘরে রেখে রীতিমতো পুজো করা হয় সুভাষচন্দ্র বসুর স্মৃতিবিজড়িত চেয়ার।
নেতাজির স্মৃতি জড়িয়ে আছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক পুরসভাতে। পুরসভা সূত্রে খবর, ১৯৩৮-এর ১১ এপ্রিল তমলুকে এসেছিলেন কংগ্রেসের তত্কালীন সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু। কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তমলুক পুরসভায়। সেই সময় যে চেয়ারে বসেছিলেন, সেটিকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত সেই চেয়ার এখন চেয়ারম্যানের ঘরে কাচের ঘেরাটোপের মধ্যে রাখা। প্রাক্তন অধ্যাপক ব্রহ্মময় নন্দ জানিয়েছেন, উনি তখন নেতাজি হননি কংগ্রেসের সভাপতি। পাঁশকুড়া থেকে এসে সভা করতে যান। ব্রিটিশ পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় রাজবাড়িতে এসে সভা করেন। পথে মহিলারা পুষ্পবৃষ্টি করেন।
তমলুক পুরসভার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের কথায়, পুরসভায় বৈঠক করেন। ১১ এপ্রিল স্মরণ করি। চেয়ারটাকে সংরক্ষণ করে রেখেছি। নেতাজির স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরেও। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একান্ন পীঠের অন্যতম এই মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। মন্দিরের নামফলকে আজও জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম।
স্মৃতির সরণি বেয়ে ইতিহাসকে ফিরে দেখা। ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে দেশজুড়ে নেতাজি-স্মরণ। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির ছবিটা একেবারে অন্যরকম। সেখানে কর্মকার বাড়িতে নিভৃত প্রাণের দেবতার বাস। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ১৯৪০ সালের ২৮ এপ্রিল গঙ্গাজলঘাটিতে সভা করতে এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।
নেতাজির বসার জন্য রানিগঞ্জ থেকে আনা হয়েছিল সোফা। কিন্তু সোফা ফেলে সকলের মতো কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন সুভাষচন্দ্র। কর্মকার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ রামরূপ কর্মকারের ওষুধের দোকান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সেই চেয়ার। সভা শেষে চেয়ার মাথায় করে বাড়ি ফেরেন রামরূপ।
সেই থেকে নেতাজির স্মৃতিধন্য চেয়ারের স্থান হয়েছে কর্মকার পরিবারের ঠাকুরঘরে কুলদেবতার পাশে। পরিবারের সদস্য নিরঞ্জন কর্মকারের দাবি, সুভাষচন্দ্র যখন আসেন তখন ওঁর জন্য সোফা আনা হয়েছিল। উনি কাঠের চেয়ারে বসেন। বাবার ওষুধের দোকান থেকে আনা হয় চেয়ারটা। বাবা চেয়ার মাথায় করে বাড়ি ফেরেন। চেয়ার ঠাকুরঘরে রেখে আমরা রোজ পুজো করি।