সোমনাথ মিত্র, হুগলি: আগামীকাল চৈত্র সংক্রান্তি। পরের দিন শুক্রবার বাংলা নববর্ষ (Bengali New Year)। পুরনো সমস্ত মলিনতা ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় গোটা বাংলা। করোনা অতিমারির কারনে দুটো বছর বন্ধ থাকার পর এবছর পালিত হচ্ছে চৈত্রের গাজন উৎসব। সেই উপলক্ষ্যে তারকেশ্বর মন্দির জুড়ে এমনিতেই সন্ন্যাসীদের ভিড়। তার উপর আজ নীলষষ্ঠী (Nil Sasthi)। আজকের দিনে বিশেষ রীতিনীতি পালিত হয় তারকেশ্বর মন্দিরে। সেই উপলক্ষ্যে তারকেশ্বর মন্দিরে আজ সকাল থেকেই উপচে পড়েছে ভক্তের ঢল। বাংলা বছরের বিদায় লগ্নে আজকের বিশেষ তিথিতে পূণ্যার্থীদের ভিড়ে তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে তারকেশ্বর মন্দির (Tarakeswar Mandir)।
তারকেশ্বর মন্দিরে নীলষষ্ঠী পালন-
নীলষষ্ঠী। পৌরাণিত মতে জানা যায়, আজই শিব-পার্বতীর বিবাহ উৎসব। পালিত হচ্ছে চৈত্রের গাজন উৎসব। আগামীকাল শিবের গোত্র ত্যাগ করে সন্ন্যাস ভঙ্গ করে আবার নিজ গোত্রে ফিরে আসবে সন্ন্যাসীরা। তার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ আজ নীলষষ্ঠী পালিত হয় বঙ্গে। তারকেশ্বর মন্দিরে আজকের দিনে বিশেষ রীতিনীতি পালন করা হয়। আজকের দিনে নিত্য পুজো হলেও দুপুরের ভোগ আরতি ও সন্ধ্যা আরতি হয় না তারকেশ্বর মন্দিরে। রাত ৮টার পর বাবাকে টোপর পরিয়ে বিশেষ পুজো অর্চনা সমস্ত কিছু আরতি এক সঙ্গে সম্পন্ন হয় আজকের এই বিশেষ দিনে। তারকেশ্বর মঠ ও মন্দিরের মঠাধীশ মহন্ত মহারাজ ও মন্দিরের প্রধান পুরোহীত গর্ভগৃহে থেকে এই বিশেষ রীতিনীতি সম্পন্ন করেন। এবং আজকের দিনে বাবার ভোগ হয় না। দুধ, ফল দেওয়া হয় বাবাকে। পূরাণ মতে জানা যায়, দেশ ও দশের মঙ্গল কামনায় নীলষষ্ঠী উপলক্ষ্যে বঙ্গের নারীরা উপবাস করেন। উপবাসে থেকে বাবার মাথায় জল, ফুল, বেলপাতা ঢালতে সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছেন তারকেশ্বর মন্দিরে। বাবার মাথায় জল ঢেলে ধুপ, বাতি জ্বালিয়ে ফলাহার গ্ৰহণ করে উপবাস ভঙ্গ করেন তাঁরা। তাই সকাল থেকে লোকারন্য তারকেশ্বর মন্দির।
আরও পড়ুন - Hooghly News: হুগলিতে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট, প্রতিবাদে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের
তারকেশ্বর মন্দিরে তৎপর প্রশাসন-
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তারকেশ্বর মন্দিরে তৎপর পুলিশ প্রশাসন। তারকেশ্বর মন্দির পুরোহিত মন্ডলীর সভাপতি সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, 'আজকের দিনেই শিব-পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। আজকের দিনে প্রতিদিনের নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটে। দুপুরের ভোগ আরতি ও সন্ধ্যা ভোগ আরতি হয় না। তার পরিবর্তে রাত আটটার পর বাবার বিশেষ অভিষেক পুজো সম্পন্ন হয়। এবং আজকের বিশেষ দিনে বাবাকে টোপর পরানো হয়।' নীলষষ্ঠী উপলক্ষ্যে পুজো দিতে আসা ভক্ত রেখা রায় বলেন, 'আজকে নীলষষ্ঠীর বিশেষ দিন। তাই উপবাস থেকে বাবাকে পুজো দিলাম। তার সঙ্গে সকলের সুস্থতা কামনা করলাম।'
অন্য এক ভক্ত সম্পা মিত্র বলেন, 'সকল মানুষের মঙ্গল কামনায় ও সকলের অর্থনৈতিক উন্নতি কামনা করলাম আজকের বিশেষ দিনে। নীলষষ্ঠী উপলক্ষ্যে উপবাস থেকে আমরা বাবার চরণে জল, ফুল , বেলপাতা, সিদ্ধি ঢাললাম। গত দু বছর করোনার জন্য আজকের দিনে জল ঢালতে পারিনি। আজকে জল ঢালতে পেরে মন খুব শান্তি হল।'