ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, বরানগর: ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল বরানগরের বিশেষভাবে সক্ষমদের হাসপাতাল (NILD)। বুধবারও পড়ুয়াদের বিক্ষোভ অব্যাহত। গেট আটকে বিক্ষোভের জেরে  ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। প্রবল ভোগান্তির মুখেও অনড় পড়ুয়ারা। পরিষেবা থামিয়ে বিক্ষোভ চলার মধ্য়েই ওঁদের মধ্য়ে থেকেই একজনকে বলতে শোনা যায়, মানবিকতার খাতিরে রোগী দেখা হবে কিনা। তখন সমস্বরে না বলতে শোনা যায় বড় অংশের পড়ুয়াদের।


তীব্র ক্ষোভ:
এক পড়ুয়া বলেন, 'এখানে কোনও আপৎকালীন পরিকাঠামো নেই। এমন নয় যে একদিন আমরা চিকিৎসা না করলে সব রোগীরা মারা যাবেন। এখানে সব ক্রনিক কেস আসে। আপনি আমায় বলুন, যখন আমরা সব ক্রনিক কেস দেখি, যখন শনিবার ও রবিবার আমরা কলেজ আসি না। আমরা রোগী দেখি না। তখন কতজন রোগীদের দেহ এখান থেকে বেরোয়। আমরা রোগীদের নিরাপত্তা দেখি। আমাদের নিরাপত্তা কে দেখবে?' তিনি আরও বলেন, 'আমরা যদি এখন গেট খুলে দিই, তখন যদি রোগীরা আমাদের উপর হামলা করে তাহলে কে আমাদের বাঁচাবে?' আর এক পড়ুয়া বলেছেন, 'গেটের বাইরে হাসপাতালের কর্মীরা রয়েছেন। তাঁরা রোগী দেখুন। ভিতর থেকে টেবিল চেয়ার আমরা পাঠিয়ে দেব। ওঁরা বাইরে বসে দেখুন। আমরা গেট খুলব না।'


সোমবার এই হাসপাতালের ছাত্রাবাসে এক পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। পড়ুয়াদের দাবি দেহ উদ্ধারের সময় প্রাণ থাকলেও হাসপাতালে কোনও আপৎকালীন পরিকাঠামো না থাকায় কোনও চিকিৎসা করা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফেও কোনও সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত মারা যান ওই পড়ুয়া। ব়্যাগিংয়ের শিকার হয়েই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।  পড়ুয়াদের অভিযোগ, হাসপাতালে কোনও রকম ইমার্জেন্সি ব্যবস্থা নেই। সেই কারণে সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছিল প্রিয়রঞ্জন সিংহ নামে ওই পড়ুয়াকে। মাঝরাস্তায় মারা যান তিনি। এর পরই হাসপাতালের গেট বন্ধ করে এবং পরিষেবা বন্ধ রেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্র-ছাত্রীরা। এতেই শেষ নয়। তাঁদের অভিযোগ, খবর পেয়েও দেরিতে এসেছে বরানগর থানার পুলিশ। ফলে তাঁদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। ছাত্ররা জানাচ্ছন, প্রিয়রঞ্জনের হস্টেল রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। কিন্তু তাঁকে ঝুলতে দেখেছিলেন সহপাঠীরা। ফলে দরজা ভেঙে ঢুকে প্রিয়রঞ্জনকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের বক্তব্য, তখনও পর্যন্ত ওই ছাত্র বেঁচে ছিলেন। তাঁর জন্য কলেজ প্রশাসনের কাছে সাহায্য় চাওয়া হয়। কিন্তু কারও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে ক্ষোভ ছাত্রছাত্রীদের। কলেজে কোনও অ্যাম্বুল্য়ান্সও ছিল না বলে দাবি করছেন তাঁরা। একদিকে পড়ুয়ার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। অন্যদিকে তারই জেরে রোগীদের চরম ভোগান্তির ঘটনা ওই হাসপাতালে। 

আরও পড়ুন: বিরাট খুশির খবর, বড়দিনে পরপর তিনদিন ছুটি দিয়ে দিল রাজ্য