বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: খড়গপুরে দুঃসাহসিক ডাকাতি। প্রোমোটারের বাড়িতে ঢুকে, সদস্য়দের দড়ি দিয়ে বেঁধে, মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে, ২০ ভরি সোনা-সহ কয়েক লক্ষ টাকা লুঠের অভিযোগ উঠেছে। দুষ্কৃতীরা অধরা হলেও, টাকাভর্তি একটি ব্যাগ ও আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করেছে খড়গপুর লোকাল থানার পুলিশ।
ভর সন্ধেয় পশ্চিম মেদিনীপুরপের খড়গপুরে, প্রোমোটারের বাড়িতে এভাবেই দুঃসাহসিক ডাকাতি হয়ে গিয়েছে। গোটা ঘর লন্ডভন্ড। সব কটা আলমারি তছনছ করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে লকারও। লুট করা হয়েছে টাকা-গয়নাও। ঘরে এককোণে পড়ে রয়েছে জামাকাপড়। বাড়ির লোকেদের আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা-গয়না লুঠ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
কখন ডাকাতি:শনিবার সন্ধে প্রায় ৭টা। প্রবল শীত। ঘরের সব দরজা-জানলা বন্ধ করে ছিলেন প্রোমোটার স্বপন মজুমদার ও তাঁর বাড়ির লোকেরা। সেই সময়েই বাড়িতে আচমকা হানা দিয়েছে ডাকাতের দল। পরিবারের দাবি, ৩টি মোটরবাইকে ৮ জন মুখ ঢাকা সশস্ত্র দুষ্কৃতী এসেছিল। বাইরে দাঁড়িয়ে প্রোমোটারের ডাক নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকে। তখন দরজা খুলে দেয় স্বপন মজুমদারের ছেলে। সেইসময়েই তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে ডাকাতের দল। অভিযোগ, এরপর পরিবারের সদস্য়দের দড়ি দিয়ে বেঁধে, মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে, আলমারি ভেঙে টাকা গয়না লুঠ করে ডাকাতরা।
প্রোমোটারের স্ত্রী তপতী মুখোপাধ্যায় বলেন, 'আমি পিছন দিক দিয়ে দেখছি ৩ টি ছেলে এসেছে। হিন্দিতে বলছে মিঠুন দা বাড়িতে আছে? প্রথমে ৩ জন। পরে আরও ৩-৪ জন। ৩টে বাইক। কুকুর দুটোকে মেরে দিতে চাইছিল। আমি বলেছি ওদেরকে সরিয়ে রাখছি। একজন আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে ছিল। ছেলেকে বেঁধে রাখে। টাকা নিয়ে গিয়েছে। গয়নাগাটি নিয়ে গিয়েছে। ২০ ভরির বেশিই হবে।' ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে প়ড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
খড়্গপুরের বাসিন্দা অশোক দাস বলেন, 'গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ একটা দুঃসাহসী ঘটনা ঘটে, যেটা কল্পনার বাইরে। সন্ধ্যায় একটা ডাকাতি হয় বাড়িতে ঢুকে বনদুক দেখিয়ে শোনা গহনা লুট করে নিয়ে চলে যায়। এটা নজরবিহীন ঘটনা এই কারণে এলাকাবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। নিরাপত্তা নেই, নিরাপত্তা যদি থাকতো তাহলে এরকম ডাকাতির ঘটত না। আমাদের এলাকার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছি।'
আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দা:খড়্গপুরের বাসিন্দা শেখ শাহজাহান বলেন, 'নিরাপত্তা তো আমাদের নেই। গতকাল সাড়ে ছটা, সাতটা নাগাদ এতবড়ে একটা ঘটনা ঘটে গেল। সাথে সাথে পুলিশকে বলা হলো কিন্তু পুলিশ এলো এক ঘন্টা পর। এই এলাকায় নিরাপত্তা চাই আমাদের। এত বড় বাজার সেখানেও কোন নিরাপত্তা নেই। কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। যখন হোক অঘটন ঘটতে পারে। এখন আমরা পুরো আতঙ্কে আছি। ভাবছি কিভাবে দোকানদারি সামাল দেব।'
এদিকে, রাতভর তল্লাশি চালিয়ে, দুষ্কৃতীদের দুটি মোটরবাইকের খোঁজ পেয়েছে খড়গপুর লোকাল থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে দাবি, পালানোর সময় আড়াই লক্ষ টাকা ভর্তি একটি ব্য়াগ ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র পড়ে যায়। সেগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা। মুখে মাফলার বেঁধে, প্রোমোটারকে ডাকনামে ডেকে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢোকায়, এই ঘটনায় পরিচিত কারও হাত রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নেপথ্য়ে ব্য়বসায়িক কারণ রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে খড়গপুর লোকাল থানা।
আরও পড়ুন: কাটোয়ায় ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা, মৃত ১, আহত শিশু-সহ ৫০ জন