কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও দীপক ঘোষ, কলকাতা : ২০২২ সালের প্রাথমিক টেট-এর ফল বেরিয়ে গেছে, কিন্তু নিয়োগ হয়নি। ২০২৩-এর টেটের ফল এখনও বেরোয়নি। আর ২০২৪ সালে কোনও টেট-ই হয়নি প্রাথমিকে। কিন্তু কেন? প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে দাবি, OBC সংরক্ষণ মামলার জটেই আটকে রয়েছে প্রাথমিক টেটের ফলপ্রকাশ থেকে নিয়োগ। পর্ষদ সূত্রে এও দাবি করা হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের থেকে শূন্যপদের সংখ্যা চাইলেও এখনও তা মেলেনি। এই অবস্থায় আতান্তরে চাকরিপ্রার্থীরা। 

আরও পড়ুন, খেজুরির ২ BJP কর্মীর মৃত্যুতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে 'ফারাক', প্রথম রিপোর্টে 'বিদ্যুৎস্পৃষ্ট' লেখা, দ্বিতীয়টায়, 'দেহে আঘাত'!

রাজ্যে হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকার!তাঁদের মধ্য়ে একটা বড় অংশ শিক্ষকতার চাকরির জন্য জীবনপণ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনও প্রাইমারি টেট হচ্ছে। কখনও হচ্ছে না। পরীক্ষা হলে লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে কই ? বারবার প্রশ্ন উঠছে, কেন নিয়োগ হচ্ছে না? পথে নেমে বারবার আন্দোলন করছেন টেট উত্তীর্ণরা! কিন্তু উত্তর মিলছে না!এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দাবি, ২০২২ সালের টেটের নিয়োগ এবং ২০২৩-এর টেটের ফলপ্রকাশ- দুটোই থমকে রয়েছে OBC সংরক্ষণ জটের কারণে!    

পর্ষদ সূত্রে খবর, প্রাথমিকে শূন্যপদ কত রয়েছে, সরকারের থেকে সেই তালিকা চাওয়া হলেও, তা এখনও মেলেনি।  চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি,পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়, সুপ্রিম কোর্টে OBC সংক্রান্ত মামলাটি বিচারাধীন থাকায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্য়ালয় শিক্ষা অধিকার থেকে শ্রেণিভিত্তিক শূন্য়পদের সংখ্য়া পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পর্ষদও প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারছে না। পর্ষদ সূত্রে দাবি, সেই পরিস্থিতি এখনও পাল্টায়নি! আর এরইমধ্য়ে বিজ্ঞপ্তি, টেট , OBC জট। এই গোলকধাঁধার মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বেড়েই চলেছে। ২০১৪ সালের প্রাথমিকের টেটে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। যার তদন্ত করছে CBI। সেই মামলায়, ২০২৩ সালের ১৬ মে দুর্নীতির অভিযোগে, প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়।  যে নির্দেশকে চ্য়ালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরিহারা শিক্ষকরা। তাতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্য-র ডিভিশন বেঞ্চ।সিঙ্গল বেঞ্চের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে আরও নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৩ মাসের মধ্যে ৩২ হাজার পদে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। সেই নির্দেশ বহাল রাখে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

তারপর সেই অংশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। নতুন করে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরপর এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টে ফেরত পাঠিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।বর্তমানে এই মামলা বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন।