কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: গোবিন্দভোগ ও আতপ চালের উপর ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক বসানোয় ব্যপক ব্যবসায়ীক ক্ষতির মুখে শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমান সহ সমগ্র রাজ্যের আতপ ও গোবিন্দভোগ চাল উৎপাদনকারী রাইস মিল মালিকরা। এমনটাই অভিযোগ রাজ্য রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশনের।


অন্যদিকে, এই টানাপোড়েনে সমস্যায় পড়েছেন চাষীরাও। চাষিদের দাবি, রফতানি বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন রাইস মিলগুলো চাষীদের কাছ থেকে ধান কেনা একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে তেমনই আর কয়েক দিনের মধ্যে নতুন ধান উঠতে শুরু করলে দাম আরও কমার সম্ভাবনা বেশি। তখন ধানের খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন চাষীরা।
    
কয়েক দিন আগে গোবিন্দভোগ চালের রফতানি শুল্ক মকুবের জন্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক। রাইসমিল মালিক ও পশ্চিমবঙ্গ রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে,  ইউরোপীয় এবং সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরিনের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গোবিন্দভোগ চালের বিপুল চাহিদা। কিন্তু ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক বসানোয় আতপ ও গোবিন্দভোগ চাল রফতানি করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সমস্যায় পড়ছেন রাইসমিল মালিকরা।


দামের তারতম্যের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এই চালের জায়গা করে নিচ্ছে অন্যান্য কয়েকটি দেশ। ফলে ভারতের ব্যবসায়ীরা প্রভূত ব্যবসায়ীক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তার প্রভাব পড়ছে রাজ্যের চাষিদের উপার্জনেও। 


    
এদিকে, গোবিন্দভোগ চাল পাঁচ বছর আগে ‘জি আই’ তকমা পেয়েছে। গোবিন্দভোগ রফতানিকারীদের দাবি, গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র সরকার গোবিন্দভোগ চালের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে, অথচ দেশের আরেক সুগন্ধী চাল বাসমতির উপর কোনও শুল্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রী বাসমতি চালের মতো গোবিন্দভোগ থেকেও শুল্ক তুলে নেওয়ার দাবি করেছেন। প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন গোবিন্দভোগ চাল রফরানি করা হত। কিন্তু তা বর্তমানে ব্যাহত হচ্ছে। ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক বসানোর পর আর্ন্তজাতিক বাজারে ভারতের গোবিন্দভোগ ও আতপ চালের যে দাম দাড়াচ্ছে তাতে গুণগতমান ভালো হওয়া সত্বেও তা প্রতিযোগীতায় পেরে উঠতে পারছে না। স্বভাবতই ভারতের গোবিন্দভোগ ও আতপ চালের জায়গায় অনান্য কয়েকটি দেশের চাল সেই বাজার দখল করছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে রাজ্যের রাইসমিল গুলিতে।


আরও পড়ুন, ডিএ আন্দোলনে হাইকোর্টের কয়েকজন কর্মী গ্রেফতার, 'দুর্ভাগ্যজনক', মন্তব্য বিচারপতির



এমতো অবস্থায় বাংলার রাইসমিল শিল্প ও কৃষকদের জীবন-জীবিকা বাঁচাতে এদিকে যেমন রফতানিকারী ব্যবসায়ীরা অন্যদিকে বাংলার কৃষককূলও চাইছেন রফতানি শুল্ক প্রত্যাহার করুক কেন্দ্র। এদিকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। 


তৃণমূলের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র দেবু টুডু জানিয়েছেন, বিজেপি বাংলা দখল করতে এসেছিলো কিন্তু পারেনি তাই বাংলার ব্যবসায়ীদের বিপদে ফেলে পুজিপতি বেনিয়াদের সুযোগ করে দিতেই এই চক্রান্ত করছে বিজেপি। আসলে ওরা চায় না বাংলা সুখে থাকুক তাই বাংলার মানুষকে আহ্বান জানাবো এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। যদিও বিজেপি বর্ধমান জেলা কমিটির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তৃণমূলের কাজই হল কেন্দ্রের বিরোধিতা করা তাই ওরা করছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে থেকে এইসব ঠিক হয়। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন। আশা করি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন।