রাণা দাস, পূর্ব বর্ধমান: মা কালী এই গ্রামের সব থেকে উঁচু। তাই অর্থ থাকলেও এই গ্রামে দোতলা বাড়ী করে না কেউ। মায়ের উচ্চতা থেকে বেশি উচ্চতার বাড়ি করলে ঘটে দুর্ঘটনা । সেই ভয়ে আজও কেউ দোতলা বাড়ি করার সাহস দেখায় না মন্তেশ্বরের খরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা। এমনকি পাকা বাড়ির  ছাদে ওঠার সিঁড়িও থাকে না  ছাদে উঠলে যে মায়ের সমান দাঁড়ানো হয়ে যাবে। তাই মা কালীর স্থান এই গ্রামে সকলের ঊর্ধ্বে।


প্রায় ৪০০ বছর আগে এই কালীপুজো সূচনা হয়। কথিত আছে মায়ের এক সাধক গ্রামবাসীদের জানিয়েছিল মায়ের উচ্চতার বেশি কেউ যাতে বাড়ি না করে। প্রথমে এই গ্রামে সকলেরই মাটির একতলা বাড়ি ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে এখন অনেক পাকা বাড়ি হয়েছে। তবে তাদের উচ্চতা কুড়ি ফুটের কম। টিনের ছাউনি থেকে মায়ের  কংক্রিটের মন্দির হয়েছে। মায়ের এই মন্দিরে উচ্চতা গ্রামের সবথেকে উঁচু। গ্রামের অনেকেই অর্থশালী ,যারা ইচ্ছা করলে তিন চার তলা বাড়ি হাঁকাতেই পারে। কিন্তু কালী মাকে শ্রদ্ধা জানাতে হোক,বা ভয়েই হোক একতলার বেশি কেউ বাড়ি করতে সাহস দেখায়নি। 


আরও পড়ুন, 'রুদ্রমূর্তি থেকে সংহাররূপী', কালীর নামেই লুকিয়ে আছে পুরাণের ভয়ঙ্কর সব কাহিনি


এক গ্রামবাসীর কথায় তিনি একতলা বাড়ি করে ছাদে ওঠার জন্য সিড়ি করতে গেছিলেন। তখনই বাজ পরে তাদের বাড়িতে। এরপরে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিড়ি তৈরির কাজ। তারপর থেকে গ্রামে আর কেউ সাহস দেখায়নি সিঁড়ি করার বা দোতলা বাড়ি করার। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, মা এই গ্রামের সবথেকে উঁচু তাই মায়ের নিচে থাকলে মায়ের কৃপা পাওয়া যাবে। আরো উঁচুতে থাকলে মা রুষ্ট হবে।


এদিকে, কঙ্কালের চেহারা অদ্ভুত দর্শন এখানে দেবীর।তাই দেবী এখানে কঙ্কালেশ্বরী কালী হিসাবেই পরিচিত। মানবশরীরে শিরা-উপশিরা, অস্থি, পেশী, যেভাবে থাকে ঠিক সেইভাবে দেবীমুর্তি কষ্টিপাথরে খোদাই করা হয়েছে। কালীমূর্তি এখানে কঙ্কালের রূপে রয়েছেন। তাই কঙ্কালেশ্বরী মা কালী বলেই পরিচিত শহর  বর্ধমানে। তাই প্রতি বছরই মহাধূমধাম সহকারে দেবীর আরাধনাতে বর্ধমানের সহ দূর-দূরান্তের মানুষজন আসেন। পুজো উপলক্ষে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। কালীপুজোর দিন গোধূলী লগ্নে পুজো হবার পর ভোগ খাওয়ানো হয় ভক্তদের।এছাড়াও মন্দিরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামাজিক উৎসবও হয় এখানে।নিয়মিত ভাবে প্রচুর পর্যটকরা প্রতিনিয়ত আসেন।   


বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর এলাকায়  মা কঙ্কালেশ্বরীর কালীমন্দি অধিষ্ঠিত রয়েছে। মা এখানে অষ্টভূজা, তাই চামুণ্ডা রূপে দেবী কঙ্কালেশ্বরী পুজো হয় রীতি রেওয়াজ মেনেই।