রাণা দাস, পূর্ব বর্ধমান: হঠাৎ শুনলে মনে হবে যেন সিনেমার দৃশ্য। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় রাজকুমার রাও ও কৃতি খরবন্দা অভিনীত 'শাদি মে জরুর আনা' (Shaadi Mein Zaroor Aana)। দুই বাড়ির সায়ে, কথা বার্তা পাকা হয় বিয়ের। কিন্তু বিয়ের আসরে বর পৌঁছে দেখেন যে কনে নেই। তিনি পালিয়েছেন বাড়ি ছেড়ে, সরকারি চাকরির খোঁজে পড়াশোনা করে হতে চান বড় অফিসার। হুবহু মিলে না গেলেও মূল ঘটনা অনেকটা একরকম। নদিয়া (Nadia) থেকে পূর্ব বর্ধমানে (Purba Bardhaman) বিয়ে করতে এসে আর হবু স্ত্রীর কোনও খোঁজ পাচ্ছেন না নয়ন ঘোষ (Nayan Ghosh) ও তাঁর বাড়ির লোক। বাধ্য হয়ে এবার তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ। 


ঠিক কী ঘটেছে?


নদিয়ার যুবক নয়ন ঘোষ, বর্ধমানের যুবতী বিউটি। বন্ধুদের মাধ্যমে আলাপ, তারপর ফোনে ফোনে বন্ধুত্ব, প্রেম। প্রেমের সম্পর্ক গড়িয়েছে বিয়ে পর্যন্ত। দেখা হয়েছে মাত্র একবারই। ফোনে ফোনেই দুই বাড়ির মধ্যে বিয়ের পাকা কথাও হয়ে যায়। বিয়ের দিন সকালে সমস্ত আচার নিয়ম মেনে হয়েছে অনুষ্ঠান, এমনকী গায়ে হলুদের ছবিও নাকি প্রেমিকা পাঠিয়েছিলেন হবু স্বামীকে। এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। ঘেঁটে ঘ হল, বিয়ের দিন সন্ধ্যায়। নদিয়া থেকে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া পর্যন্ত বরযাত্রী-সহ বর এসে আবিষ্কার করে যে বউ নেই। কয়েক ঘণ্টা আগেও যাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন, আর তাঁর খোঁজ মিলছে না। নয়ন ঘোষের দাবি, পূর্ব বর্ধমানে বিউটির মাসির বাড়ি। সেখানেই সব আয়োজন হওয়ার কথা। কিন্তু বিয়ে করতে আসেনি সে, এমনকী তাঁদের কারও সঙ্গেই আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। যুবকের দাবি, এক বন্ধুর মারফৎ তিনি জানতে পেরেছেন যে হবু স্ত্রীকে মারধর করে ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। কী কারণে কী হল কিছুই তাঁরা এবার বুঝে উঠতে পারছেন না।


বিয়ে করতে এসে এবার বউকে খুঁজে না পেয়ে কাটোয়া থানার দ্বারস্থ নয়ন ঘোষ। ফোনে আজই বিয়ের দিন ঠিক হয়। পাত্রী গায়ে হলুদের ছবিও পাঠিয়েছেন ফোনে। ধুতি পাঞ্জাবী পরে টোপর পরে বরের সাজে এসে কাটোয়া থানায় উপস্থিত হতে হয়েছে নয়নকে। থানায় পাত্র জানান, পাত্রীর ফোন সুইচড অফ, ঠিকানাও যা দেওয়া হয়েছে সেটি ভুল। ঘণ্টা দুই পাত্রীকে খুঁজে না পেয়ে অবশেষে কাটোয়া থানায় পাত্র। কিন্তু সেখানেও হল না সুরাহা। নয়ন ঘোষের অভিযোগ, থানার তরফে বলা হয়েছে যদি বিউটির লোকেশন ঠিক করে না বলতে পারা যায়, তাহলে তাদের কিছুই করার নেই। স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন নয়ন। হতাশ তাঁর বাড়ির লোকজনও। 


হতাশ হয়ে বরের বেশে গাড়িতে বসে নয়ন। তাঁর কথায়, 'কাটোয়ায় বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তাই এসেছি। এসে দেখছি বাড়ির লোক আর কোনও যোগাযোগ করছে না। মেয়ের বান্ধবী বলছে মেয়েকে আটকে রেখেছে বাড়িতে, মারধর করছে।' অন্যদিকে পাত্রের ঠাকুমা আরতি ঘোষের দাবি, তাঁদের ঠকানো হয়েছে। পাত্রের ঠাকুমার কথায়, 'মেয়েটি ঠকালো, বাড়ির লোক ঠকালো আমাদের। নাতির সঙ্গে আমাদেরও মন খারাপ।' যদিও প্রেমিকা ঠকিয়েছে, এ কথা মানতে নারাজ নয়ন। তাঁর স্পষ্ট কথা, 'না না। ওঁরা তো মাসি, মেসো, মা, বাবা, দিদা, দাদু সকলেই কথা বলেছেন।' তবে সকলের সঙ্গেই ফোনে কথা হয়েছে, সামনাসামনি না। ফোনে পাকা কথা বলে, আজ আর তাঁদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 


আরও পড়ুন: Coochbehar News: ইচ্ছা থাকলেই উপায়! দিনহাটার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা, কলেজছাত্রী এবার অংশ নেবেন প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারাডে


বিয়ে করতে না পেরে থানায় গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরতে হয় নয়ন ঘোষকে। নিমন্ত্রিতদের গিয়ে সব খুলে বলবেন, জানান নয়নের ঠাকুমা। সিনেমায় যদিও সবশেষে মিল হয়েছিল রাজকুমার ও কৃতির। সব বাধা পেরিয়ে জয় হয়েছিল ভালবাসার, চার হাত এক হয়েছিল নায়ক-নায়িকার, দর্শক পেয়েছিলেন 'হ্যাপি এন্ডিং'। কিন্তু এক্ষেত্রে কী হবে নয়নের ভবিষ্যৎ, তার উত্তর এখনও অজানা। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।