পূর্ব বর্ধমান: বছর শেষে মায়াবী রঙের যাদুতে দৃষ্টি আকর্ষণ করল তাঁরা, আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রঙ ছড়াল ময়ূর ও ময়ূরীদের  দল পূর্ব বর্ধমানে। আউশগ্রামে জঙ্গলের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ময়ূর ও ময়ূরী ( Peacock In  Ausgram)। বন দফতরের ধারাবাহিক প্রচারে গ্রামবাসীরা সচেতন হতেই আউশগ্রামের জঙ্গলমহল এলাকার অখ্যাত গ্রাম 'হেদোগড়িয়া' এখন ময়ূর-ময়ূরীর অবাধ বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যার টানে ভিড় জমাচ্ছেন দূরদুরান্তের পর্যটকরা।  


বর্তমানে প্রায় ৫০০ বেশি ময়ূর..


হেদোগড়িয়া গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে ইতিউতি ঘুরে বেড়ায় ময়ূরের দল। কখনও আবার দলবেঁধে চলে আসে লোকালয়ে।ওদের একঝলক দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন পর্যটকরা। বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে আউশগ্রাম সংলগ্ন কাঁকসার দেউল এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি ময়ূর ছাড়া হয়েছিল।স্থানীয়দের সহযোগীতায় তাঁদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করতেই ময়ূরের বংশবিস্তার ঘটে।তাঁরা এখন আশেপাশের জঙ্গলেও ছড়িয়ে পড়েছে।দেউল ও আদুরিয়া জঙ্গলকে কেন্দ্র করে ৩০ কিমি বৃত্তের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৫০০ বেশি ময়ূর রয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।গত ৩ বছর আগে যার সংখ্যা ছিল সীমিত।


ময়ূর-ময়ূরীর দলে রয়েছে শাবকরাও


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,আউশগ্রামের হেদোগরিয়া ছাড়াও প্রেমগঞ্জ, রাঙাখুলা,আদুরিয়া প্রভৃতি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে দলে দলে ময়ূর ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, দুবছর আগে মাঝেমধ্যে চোখে পড়লেও এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ময়ূর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।আউশগ্রামের আদুরিয়ায় লোকালয়ের কাছাকাছি ময়ূরের দল চলে আসছে।একটি একটি দলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি ময়ূর থাকছে।জঙ্গল থেকে ছেড়ে মাঝেমধ্যে পাশের মাঠগুলিতে চলে আসছে তাঁরা।ময়ূর-ময়ূরীর দলে রয়েছে শাবকরাও।আর অনেকেই এখন জঙ্গলে আসছেন ময়ূরের দল দেখার জন্য।অনেকে ছবিও তুলছেন। 


কড়া নজরদারি বন দফতরের তরফেও


এরকমই ময়ূরের টানে আসা পর্যটক শ্রীলেখা রায় জানান, আউসগ্রামের জঙ্গলমহল এমনতেই আকর্ষণের জায়গা। তার উপর উপরিপাওনা দলে দলে ময়ূরের দেখা পাওয়া। এটা দেখে খুবই ভাল লাগছে। স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন কোনার ও সুশান্ত রায়রা জানান, আগে ময়ূরগুলি জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াত। এখন মানুষের কাছাকাছি চলে আসছে।তবে আমরা স্থানীয়রা সবসময় খেয়াল রাখি। অপরিচিত কেউ এলে যাচাই করে দেখে নিই তাঁরা চোরা শিকারি কিনা। বনবিভাগ থেকেও ময়ূরগুলির ওপর সবসময়ই নজর রাখা হয়। বন দফতরের কড়া নজরদারি ও গ্রামবাসীদের সচেতনার ফলেই এটা সম্ভবপর হয়েছে।


আউশগ্রামের জঙ্গলে আরও কী কী ?


আউশগ্রামের জঙ্গলে ইন্ডিয়ান উলফ বা হেঁরোল, খরগোশ, অজগর, বনমুরগি, বনবিড়াল, থেকে শুরু করে প্যাঙ্গোলিন, সজারু প্রভৃতি প্রাণীও দেখা যায়।ওইসব জীবজন্তুর সংখ্যাও এখন বেড়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।তবে ময়ূর এখন পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। বর্ধমানের ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, আউশগ্রামে ময়ূরের সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে। যদিও সঠিকভাবে গণনা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এছাড়া জঙ্গলে আগুন লাগা যাতে বন্ধ হয়, তার জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালাচ্ছি। জঙ্গলের আগুনেই ময়ূরের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু আগুনের হাত থেকে জঙ্গলকে রোখা গেছে তাই ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে। জঙ্গলে অন্যান্য জীবজন্তু রক্ষা পাচ্ছে।গ্রামবাসীদের সহযোগিতা এটা আমাদের কাছে একটা বাড়তি পাওনা।যার ফলে এই কাজ খুব সহজে করা যাচ্ছে।


আরও পড়ুন, নিউটাউনে মহিলাকে কুপিয়ে 'খুন', স্বামীর দেহ উদ্ধার, ধারাল অস্ত্রের কোপ মেয়েকেও !


প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলে ময়ূরের টানে পর্যটকরা আসায় খুশি গ্রামবাসীরাও।প্রকৃতিকে বাঁচানোর মধ্য দিয়ে জঙ্গলমহলে হারিয়ে যাওয়া পশুপাখিদের আনাগোনায় খুশি তারা।এরসঙ্গে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে সম্ভবনাময় এই এলাকায় ইকোটুরিজম গড়ে তোলার দাবী স্থানীয়দের।