ঋত্বিক প্রধান, শঙ্করপুর: প্রকাশ্য সভায় শিশির অধিকারীর পা ছুঁয়ে নমস্কার, তাঁকে 'গুরুদেব' বলে সম্বোধন করে বিপাকে পড়েছেন সুবল মান্না। কাঁথি পৌরসভায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও আনা হয়েছে। পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। সেই বিতর্কে নয়া মাত্রা সংযোগ করলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। শঙ্করপুরে বিজেপি নেতার হাত ধরতে দেখা গেল তাঁকে। সেই নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সুবলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হলে, অখিলের বিরুদ্ধে নয় কেন, প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই। (Akhil Giri)
সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের শঙ্করপুরের গঙ্গামেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন অখিল। সেখানে গত বিধানসভা নির্বাচনের তাঁর বিরুদ্ধে রামনগরে প্রার্থী হওয়া বিজেপি নেতা স্বদেশ নায়কও উপস্থিত ছিলেন। একসঙ্গে পতাকা উত্তোলন, খোশগল্প থেকে অখিল এবং স্বদেশকে হাত ধরাধরি করে মঞ্চে উঠতেও দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। সেই নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। (Purba Medinipur News)
তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন, সুবলকে যদি পদত্যাগ করতে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে যদি কড়া পদক্ষেপ করা হয়, তাহলে অখিলের বিরুদ্ধে নয় কেন? বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে, সুবল বলেন, "ভগবান সব দেখছেন। উপরতলায় দলীয় নেতৃত্ব রয়েছেন। জেলা সভাপতি রয়েছেন। ওঁরা দেখে যা করার করবেন।" কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি পীযূস পান্ডাকেও এ নিয়ে ফোন করা হয়, পাঠানো হয় মেসেজ। কিন্তু জবাব দেননি তিনি।
অখিলের সমর্থকরা যদিও তাঁর হয়ে সাফাই দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান ছিল ওই দিন। তাই সেখানে গিয়েছিলেন অখিল। সকলের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু সুবলের প্রেক্ষাপট একেবারে আলাদা। উনি তো শিশির অধিকারীর প্রশংসা করেছিলেন, তা দলের গায়ে লেগেছিল। ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানের কোনও তুলনা চলে না।
এর আগে, কাঁথিতে একটি বেসরকারি স্কুলের অনুষ্ঠানমঞ্চে একই সঙ্গে দেখা যায় সুবল এবং শিশিরকে। সেখানে পায়ে হাত দিয়ে শিশিরকে প্রণাম করেন সুবল। বক্তৃতা করার সময় শিশিরকে 'গুরুদেব' বলে সম্বোধনও করেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "বাবা-মা জন্ম দিয়েছেন। পথচলা, আজ যে জায়গায় এসে পৌঁছেছি...পূজ্যপদ গুরুদেব এখানে রয়েছেন। তাঁকে আমার প্রণাম। মাননীয় শিশির অধিকারীকে।"
বিষয়টি সামনে আসতেই দলের অনেকে সুবলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। দলের তরফে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয় যেমন, কাঁথি পৌরসভার কাউন্সিলররা সুবলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। যদিও সুবলের বক্তব্য ছিল, শিশির তাঁর চেয়ে বয়সে বড়। বয়সে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে হয় বলেই শিক্ষা পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই। আগেও পরীক্ষা দিয়েছেন, আবারও পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছিলেন সুবল। সেই আবহেই অখিলকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।