ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, সন্দীপ সরকার: তৃণমূলে (TMC) আসার জন্য কি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল তাঁর উপর! ফোনে কার কার কাছ থেকে হুমকি পাচ্ছিলেন। ঝালদায় (Jhalda Murder) কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু (Tapan Kandu Murder) হত্যায় এখনও অধরা বহু প্রশ্নের উত্তর। তার মধ্যেই মঙ্গলবার ঝালদা পুরসভার বোর্ড গঠন (Jhalda Municipal Corporation)। ত্রিশঙ্কু পুরসভা দখলের প্রতিবাদে কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। কালো ব্যাজ পরে ঝালদা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখাবে তারা। কালো ব্যাজ পরেই শপথ নেবেন নিহত কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু-সহ চার কংগ্রেস কাউন্সিলর।


পুরসভা হাতছাড়া হওযার আশঙ্কায় তৃণমূলের তরফে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ


এ বছর পুরসভা নির্বাচনে ঝালদা পুরসভায় কংগ্রেস পাঁচ, তৃণমূল পাঁচ এবং নির্দলরা দু’টি আসনে জেতে। এর মধ্যে এক নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে জানান। কংগ্রেসের দাবি, অপর নির্দল কাউন্সিলর তাদের দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। গোটা প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করছিলেন নব নির্বাচিত কাউন্সিলর তপন। আর তাতেই, পুরসভা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় তাঁকে খুন করা হয় বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। তৃণমূল যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে গোটা পর্বে তপুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।  


ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর খুনের ঘটনায় শুরু থেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি করে আসছিল পরিবার। সেই মতো সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আর তার পরই একটি নতুন অডিও ক্লিপ সামনে আনল পরিবার। তাদের অভিযোগ, শুধু ঝালদা থানার আইসি নন, তৃণমূল কর্মীরাও কংগ্রেস কাউন্সিলরকে হুমকি দিচ্ছিলেন। নিহতের পরিবারের দেওয়া অডিও ক্লিপে এক যুবককে তপন কান্দুকে ফোনে হুমকি দিতে শোনা যায়।তবে তার সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ।


পরিবারের দাবি, ওই কণ্ঠস্বর অমল কান্দু নামে এক তৃণমূল কর্মীর। অডিও ক্লিপ সিবিআইকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নিহত তপন কান্দুর পরিবার। কণ্ঠস্বর আমার তবে তা অনেক আগের, দাবি অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী অমল কান্দুর। একদিনের ঘটনা নয়, আগেও হুমকি দিয়েছে তৃণমূল, দাবি নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলরের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুর।


যে কথোপথন ধরা পড়েছে অডিও ক্লিপে


ওই অডিও ক্লিপে যে কথোপকথন ধরা পড়েছে, তা হল—



  • কণ্ঠস্বর ১ (তপন কান্দু): বেশি মুখ খারাপ করিস না।

  • কন্ঠস্বর ২ (অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী অমল কান্দু): কোথায় আমি মুখ খারাপ করছি।

  • কণ্ঠস্বর ১ (তপন কান্দু): আমি বলছি বেশি মাথা খারাপ করিস না। ফোনটা রাখ।

  • কন্ঠস্বর ২ (অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী অমল কান্দু): ফোনটা রাখব কেন, তুমি ফালতু লোকজনকে বলছ অমল তোমায় ফোন করছে। তুমি প্রমাণ দেখাও। তোমার প্রমাণ আমি দেখাব।

  • কণ্ঠস্বর ১ (তপন কান্দু): তুই আমায় ফোন করছিস কেন?

  • কন্ঠস্বর ২ (অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী অমল কান্দু): তুমি আমার কাউন্সিলর। তোমাকে ভোট দিয়েছি। কাল তো তুমিও তৃণমূল হবে। সেটা আমি জানি না!

  • কণ্ঠস্বর ১ (তপন কান্দু): পয়সার লেনদেন নিয়ে তুই আমায় ফোন করবি? তোকে আমি একটাকাও দেব না।

  • কন্ঠস্বর ২ (অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী অমল কান্দু): তোকে তৃণমূলে আসতেই হবে রে। তুই দুটো সিট চেয়েছিলি। তোকে একটা সিট দিয়েছিল। মাথা খারাপ করছিস। কালকের দিনে তোকে তৃণমূলে আসতেই হবে। তোর কেসটা থামাবে কে? তুই চুপচাপ থাক। তোর সুগারটা আস্তে আস্তে বাড়ছে।


আরও পড়ুন: Siliguri News: 'আমাদের আলাদা করবেন না', আর্তি সুইসাইড নোটে, শিলিগুড়িতে এক শাড়িতে ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী দুই তরুণী


এই অডিও ক্লিপ ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তপনের খুন হওয়া এবং ফোনে হুমকিকে এক যোগসূত্রে বাঁধছেন বিরোধীরা। গোটা ঘটনায় তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলছেন তাঁরা।