বিজেন্দ্র সিনহা, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও অভিজিৎ চৌধুরী,কলকাতা: সারদাকাণ্ডে রাজীব কুমারের জামিন মামলা, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। '৬ বছর ধরে মামলা ঝুলে রয়েছে, এটা বিস্ময়কর। গত ৬ বছরে তদন্তের জন্য রাজীব কুমারকে ডাকাও হয়নি। ৬ বছর ধরে মামলা ঝুলে রয়েছে, কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি', CBI-এর উদ্দেশ্যে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের।
আরও পড়ুন, 'ধৃতর বাবা তৃণমূলের স্থানীয় নেতা' ! দুর্গাপুর গণধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের TMC যোগ, বিস্ফোরক শুভেন্দু
'কেন ৬ বছর ধরে মামলা ঝুলে রয়েছে, বিষয়টি শুনলে অবাক হবেন', সওয়াল সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার। '২০১৯ সালেই আগাম জামিন পেয়েছেন রাজীব কুমার। এখনও পর্যন্ত সিবিআই ডাকেনি, ভাবমূর্তি কালিমালিপ্তের চেষ্টা', রাজীব কুমারকে হেনস্থা করছে CBI, সুপ্রিম কোর্টে সরব DGP-র আইনজীবী। এদিন কুণাল ঘোষ বলেন, এখন যদি কোনও মামলা, দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ শীতঘুম ভেঙে জেগে ওঠে, তাহলে তার উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের, প্রশ্ন থাকবেই। এবং সেই প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করেছে।' অপরদিকে, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, কোর্টের ব্যাপার, এবিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। শুধু এটুকুই বলব, যে এই সমস্ত অফিসাররা যেভাবে সংবিধানকে তাকে রেখে কাজ করেছে, আদালতের এদের জামিন দেওয়ার আগে ১০বার ভাবা উচিত।'
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ৬ জুন, সারদা মামলায় FIR করে CBI...তাতে মোট ৬টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে একমাত্র সারদা কনস্ট্রাকশনের মামলা, যাতে চিটফান্ডের কোনও সম্পর্ক নেই, সেই মামলাতেই চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সারদার মূল মামলায় এখনও পর্যন্ত ৭টি চার্জশিট জমা পড়েছে। কিন্তু, চূড়ান্ত চার্জশিট আজ অবধি জমা পড়েনি। বিচারপক্রিয়াও শুরু হয়নি।২০১৩ সাল থেকে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে ED...প্রথমে মামলাটি ছিল ব্যাঙ্কশাল কোর্টে CBI-এর ৩ নম্বর স্পেশাল কোর্টে। পরে সেটা CBI-এর ২ নম্বর স্পেশাল কোর্টে গেছে। কিন্তু কেস নম্বর ও কোর্ট বদলে গেলেও, এখনও পর্যন্ত চার্জগঠন হয়নি।বিস্ময়কর! মামলাটি ৬ বছর ধরে বিচারাধীন। গত ৬ বছর ধরে তদন্তের সময় আপনারা তাকে ডাকেননি।সারদাকাণ্ডে, বর্তমান রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের জামিন মামলায়, CBI-এর ভূমিকা নিয়ে এভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর বয়ান রেকর্ড করে সিবিআই। এরপর তাঁর বাসভবনেও পৌঁছে যান সিবিআই অফিসাররা। যা নিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। শিলংয়ে গিয়ে তাঁকে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপরই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজীব কুমার। মঞ্জুর করা হয় আগাম জামিন। হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় CBI। ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর নোটিস ইস্যু করে সর্বোচ্চ আদালত। তার ৬ বছর পর সোমবার ফের সেই মামলার শুনানি হল সুপ্রিম কোর্টে। এদিন রাজীব কুমারের আইনজীবী সওয়াল করেন, আজ পর্যন্ত CBI তলব করেনি। তদন্তে সহযোগিতা করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন রাজীব কুমার। শর্ত সাপেক্ষে আগাম জামিন মঞ্জুর করা হয়, তা লঙ্ঘন করা হয়নি। শিলংয়ে তাঁকে ৪৮ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন কেন তারা আদালত অবমাননার আবেদন করছে? রাজীব কুমারের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার জন্য। সবচেয়ে যোগ্য আইপিএস অফিসারকে হয়রান করছে CBI।
CBI-এর আইনজীবী, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, CBI পশ্চিমবঙ্গে তদন্তের জন্য গিয়েছিল। স্থানীয় পুলিশ, একজন অফিসারকে মারধর করে। কলকাতা পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছে। CBI অফিসারের বাসভবন ঘেরাও করা হয়েছে। এটি একটি গুরুতর বিষয়। এই মামলার সঙ্গে অবমাননার আবেদনের সম্পর্ক রয়েছে।এরপর CBI-এর আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই বলেন, অবাক করার মতো বিষয়, মামলাটি ৬ বছর ধরে বিচারাধীন। গত ৬ বছর ধরে তদন্তের সময় আপনারা তাকে ডাকেননি। ৬ বছরে এটি তালিকাভুক্ত করার জন্য আপনারা কোনও পদক্ষেপ নেননি।