সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। হাওড়া-হুগলির পাশাপাশি ডেঙ্গি বিপদ ঘনাচ্ছে কলকাতাতেও। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গির কারণে গিয়েছে প্রাণ। পরিস্থিতি সামলাতে আগেভাগে বৈঠকে বসল কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। আর সেই ডেঙ্গি-বৈঠকে একগুচ্ছ পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। সূত্রের খবর, বৈঠকে বলা হয়েছে, কলকাতায় সিঙ্গাপুরের মতো ডেঙ্গি থ্রি এসেছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। কলকাতা পুরনিগম (Kolkata Municipal Corporation) এলাকায় ফিভার ক্যাম্প, ২৪ ঘণ্টার ডেঙ্গি পরীক্ষা কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে।


ডেঙ্গির নয়া ভ্যারিয়েন্ট:
কোভিডের মতো ভ্যারিয়েন্ট প্রশ্ন এখন ভাবাচ্ছে ডেঙ্গি নিয়েও। সিঙ্গাপুরে মিলেছে ডেঙ্গি-থ্রি ভ্যারিয়েন্ট যার মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। কলকাতাতেও কি হানা দিয়েছে ভয়ঙ্কর মারণ ক্ষমতার নতুন ডেঙ্গি ভ্যারিয়েন্ট? সোমবার কলকাতা পুরসভার ডেঙ্গি নিয়ে জরুরি বৈঠকে উঠেছে এই প্রশ্ন। সূত্রের খবর, পুর আধিকারিকরা বৈঠকে জানান, সিঙ্গাপুরে এ বছর ভয়ঙ্কর 'ডেঙ্গি থ্রি' ভ্যারিয়েন্ট মিলেছে। কলকাতায় যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেদিকে ভেবেই পুর আধিকারিকদের প্রশ্ন উঠেছে এখানেও হানা দিয়েছে 'ডেঙ্গি থ্রি'? স্বাস্থ্য দফতরের অফিসাররা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের রিপোর্ট উল্লেখ করে জানিয়েছেন, রাজ্যে ডেঙ্গি '২.৭৩' ভ্যারিয়েন্টের হদিশ মিলেছে। সূত্রের দাবি, তখন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের বলা হয়, নাইসেডের সাহায্য নিয়ে এটা 'ডেঙ্গি থ্রি' কি না, তা নিশ্চিত করতে। 


কোনও ল্যাবে কোনও নমুনা ডেঙ্গি পজিটিভ ধরা পড়লে সরকারকে জানানোর নিয়ম। কিন্তু কোনও কোনও ল্যাব জানাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এদিন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, 'যে সমস্ত ল্যাব ডেঙ্গি পজিটিভ হলে সরকারকে জানাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'


মেয়রের বার্তা:
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'কেন্দ্র দেশের বিভিন্নরাজ্যে পতঙ্গবাহিত রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাব খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের রাজ্যে এই ল্যাব খোলা হবে কলকাতায়। কলকাতা পুরসভা জায়গা চিহ্নিত করে কেএমডিএ-কে জানিয়েছে। কেএমডিএ তা কেন্দ্রকে জানাবে।'


কলকাতায় কোথায় ডেঙ্গি?
কলকাতা পুরসভার রিপোর্ট বলছে, কলকাতার ২৫টি ওয়ার্ডে সবথেকে বেশি ডেঙ্গির প্রকোপ। উত্তর কলকাতায় ২৪ শতাংশ ও দক্ষিণ কলকাতায় ৭৬ শতাংশ ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। কিন্তু ডেঙ্গির প্রকোপ এতটা বাড়ল কেন? সূত্রের দাবি, বৈঠকে পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আদ্র আবহাওয়া ও বৃষ্টি এর অন্যতম কারণ। পাশাপাশি ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা তার প্রজননের ধরন বদলে ফেলেছে। রিপোর্টে উঠে এসেছে গাফিলতির কথাও। সেখানে দাবি করা হয়েছে, কলকাতা পুরসভার কিছু ওয়ার্ডে মশা দমনের কাজ সেরকম হয়নি।


ডেঙ্গি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ:
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে কলকাতার ২৫টি ওয়ার্ডে খোলা হবে ফিভার ক্যাম্প (Fever Camp)। ৪টি সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে ডেঙ্গি পরীক্ষা কেন্দ্র (Dengue Test Centre)। বেলেঘাটা আইডি ও এমআর বাঙুরে ৮০ বেডের ডেঙ্গি ওয়ার্ড (Dengue Ward) খোলা হচ্ছে। শিশুদের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। বিসি রায় হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুদের জন্য ১০টি সিসিইউ (CCU) থাকবে।


আরও পড়ুন:  'আমাদের কর্মসংস্থান লক্ষ্য, কর্মসঙ্কোচন নয়, বাংলা বিনিয়োগের গন্তব্য', সাফ বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর