উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সোমনাথ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: শিক্ষা থেকে কয়লা, গরু পাচার-দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিশানায় তৃণমূল। 'নো ভোট টু মমতা' লেখা জামা পরে তৃণমূলকে আক্রমণে শুভেন্দু। 'সাফ করতে হবে তৃণমূলকে, মমতাকে একটাও ভোট নয়। বাম আমলে মেধা অনুযায়ী চাকরি হয়নি, তৃণমূল জমানায় চাকরি বিক্রি হয়েছে।' ডবল ইঞ্জিন সরকার ছাড়া বাঁচবে না বাংলা, চন্দ্রকোণায় দাবি বিরোধী দলনেতার।


১০০ দিনের প্রকল্প নিয়েও তোপ দেগেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, '১০০দিনের প্রকল্পের টাকাও চুরি করেছে তৃণমূল সরকার।' হাওড়া, রিষড়ায় রাম নবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তি হয়েছে। তা নিয়েও তৃণমূলকে নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। হুঁশিয়ারি দিয়ে শুভেন্দুর দাবি, 'রেড রোডের ধর্না থেকেই অশান্তিতে উস্কানি তৃণমূলনেত্রীর?' সংখ্যালঘুরা ধাপ্পাবাজি ধরে ফেলেছে, হাওড়া-রিষড়াকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আক্রমণ। একসঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট ভাল করে করতে হবে, হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর।


বিরোধী দলনেতার জেলায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যেদিন বাম-বিজেপিকে নিশানা করলেন। সেদিন পাশের জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় সভা করে, তৃণমূলকে উৎখাতের স্লোগান তুললেন বিরোধী দলনেতা। সঙ্গে পরের সোমবার খেজুরিতে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা সভা করার হুঙ্কার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'সাফ করব তৃণমূলকে। নো ভোট টু মমতা। নো ভোট টু মমতা। নো ভোট টু মমতা। নো ভোট টু মমতা। এইটা বলতে পারবেন।' তাঁর পরনে নো ভোট টু মমতা টি শার্ট। মুখে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক।


পঞ্চায়েতের যুদ্ধের ডঙ্কা বাজালেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। তিনি বলেন, 'মোদি, শাহ, নাড্ডা দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যে শুভেন্দু 
নন্দীগ্রামে মমতাকে হারাতে হবে। পারিনি কি বলুন। বাকি একটা কাজ আছে, মমতাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে। আপনারা আছেন তো সবাই? যতদিন পর্যন্ত মমতাকে না উৎখাত করতে পারছি, ততদিন এই গেঞ্জি পরে যাব সব জায়গায়।' এবার নতুন স্লোগান যুক্ত করলেন, নো ভোট টু মমতা, তবে এই স্লোগানে তিনি কতটা বিরোধীদের জড়ো করতে পারবেন, তা কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহের। সিপিএম-কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, তারা নেই বিজেপির সঙ্গে। এদিন চন্দ্রকোণার ঝাঁকরায় শুভেনদু অধিকারীর সভার অনুমতি ঘিরে ব্যাপক টানাপড়েন শুরু হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমে সভার অনুমতি দিলেও, পরে তা বাতিল করে দেয় স্কুলের পরিচালন সমিতি। এরপর সভার অনুমতি চেয়ে বিজেপি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা, শর্তসাপেক্ষে সভার অনুমতি দিয়ে নির্দেশ দেন শান্তিপূর্ণভাবে সভা করতে হবে। যতটা সম্ভব পুলিশ মোতায়েন করবে রাজ্য সরকার। কোনওরকম উস্কানি দেওয়া যাবে না। সভা হয়ে যাওয়ার পরে, সভাস্থল সাফ করতে হবে। আদালতের অনুমতির খবর পেতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মীরা।


বিরোধী দলনেতার হুঁশিয়ারি:
পরে সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলকে চাঁচাছোলা ভাষায় নিশানা করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, 'প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই সব হচ্ছে। ভাইপো আর পিসিকে সন্তুষ্ট করতে ওসি সভা বাতিল করেছে।' এদিন খেজুরিতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে যেমন বাম আমলের প্রসঙ্গ শোনা গেছে, ঠিক তেমনই চন্দ্রকোণার সভা থেকে নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে বাম-তৃণমূলকে একসুরে নিশানা করেন শুভেন্দু। একই সঙ্গে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ২৫টি আসন জয়ের লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, 'মোদিকে ২৫ টা আসন দেব। আরামবাগ, তমলুক, কাঁথি ,ঘাটাল, এই চারটিতে জিতব। মমতা আজ যেখানে সভা করছেন আগামী সোমবার সেখানে সভা করে জবাব দেব।'


গত লোকসভা নির্বাচনে, হুগলির আরামবাগ, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি - এই ৪টি লোকসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয় তৃণমূল। এর মধ্যে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী। আর তমলুকের সাংসদ শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। এই প্রেক্ষাপটেই শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।


আরও পড়ুন: 'বাম আমলে মেধা অনুযায়ী চাকরি হয়নি, তৃণমূল জমানায়..' ? বিস্ফোরক শুভেন্দু