কলকাতা: তাঁর জন্য একসময় রাস্তায় ধর্নায় বসে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল,আইপিএস অফিসার রাজীব কুমার ফের সক্রিয় ভূমিকায়। এবার রাজ্য পুলিশের ডিজি হচ্ছেন তিনি। বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্নের তরফে রাজীবকে ভারপ্রাপ্ত ডিজিপি হিসেবে নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে। আর তার পরই রাজ্য রাজনীতিতে জোর তরজা শুরু হয়েছে। সারদাকাণ্ডে রাজ্য পুলিশের গঠিত সিটের দায়িত্বে ছিলেন রাজীব। সাক্ষী হিসেবে পরবর্তী কালে বার বার তাঁকে তলব করে সিবিআই। তিনি নথিপত্র লুকিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই রাজীবকুমারকে রাজ্যের ডিজি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রমাণলোপাটের পুরস্কার দিলেন বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। (Rajeev Kumar WB DG)


বুধবার সন্ধেয় নবান্নের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত ডিজি হিসেবে রাজীবের নিযুক্তির কথা জানানো হয়। বুধবারই রাজ্য পুলিশের বর্তমান ডিজি মনোজ মালব্যের মেয়াদ শেষ। আর এই দিনই রাজীবের নিযুক্তির ঘোষণা হল। মনোজকে আগামী তিন বছরের জন্য রাজ্য পুলিশের উপদেষ্টা করার কথাও জানানো হয়েছে রাজ্যের তরফে। বিষয়টি সামনে আসতেই রাজ্যের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজীবকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার নেপথ্যে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলেও দাবি তাঁদের। (West Bengal DGP)


এদিন রাজীবকে নয়া দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "সারদার প্রমাণ নষ্ট করে রাজীব কুমার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখনও বাইরে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি প্রতিদান দিচ্ছেন। আমি সিবিআই-কে বলব, সুপ্রিম কোর্টে মামলা উঠছে না কেন? সুপ্রিম কোর্টে যা মামলা পড়ে রয়েছে, তা তোলার ব্যবস্থা করুন। নইলে আমরা বাংলার মানুষ সুপ্রিম কোর্টে মামলা তোলার জন্য যা করার করব।"


আরও পড়ুন: Rajeev Kumar: তাঁর জন্য ধর্নায় বসেছিলেন মমতা, সেই রাজীব কুমারই এবার রাজ্যের ডিজি


প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ও বিষয়টি  নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "রাজীব কুমারের জন্য ধর্না দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীব কুমারকে এখন তাঁর জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের কষ্টার্জিত টাকা লুঠ হয়েছে। সেই লুঠের ভাগীদার এঁরা সবাই।"


ঘটনাচক্রে রাজীবের নিয়োগে নতুন করে সারদা-বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন তৃণমূলেরই রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। রাজীবের নিযুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, "রাজীব কুমার একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার। মাঝখানে কিছু টানাপোড়েন গিয়েছিল। ওঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল আমার কিছু নির্দিষ্ট কারণে। কিছু দিন আগে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় দেখা হয়েছিল। সৌজন্য বিনিময় হয়। আমি ওঁকে ভাল থাকতে বলি, উনিও আমাকে ভাল থাকতে বলেন। উনি ডিজি পদে এসেছেন। নিশ্চয়ই ভাল খবর। একজন দক্ষ আইপিএস অফিসার উনি। ভাল থাকুন ভাল কাজ করুন। শুধু খেয়াল রাখুন, আমার মতো কোনও নির্দোষকে কারও নির্দেশে বলি দিতে যাবেন না যেন! তাহলে পরের দিন গুলি ভাল দেন না ভগবান।" কুণালের এই মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে। সারদা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর সরাসরি তৃণমূলনেত্রীর দিকে আঙুল তুলেছিলেন তিনি। তিনি সব জানেন, সারদার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তিনি বলে অভিযোগ করেছিলেন। তাই কংগ্রেসের সৌম্য প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁকে যদি ফাঁসানোই হয়ে থাকে, তাহলে কেন সত্য খোলসা করছেন না কুণাল? আসেল গোটাটাই আইওয়াশ বলেও দাবি করেন সৌম্য।