সোমনাথ মিত্র, হুগলি: বাংলা পঞ্জিকা (Bengali Panjika) মতে আজ শ্রাবণ মাসের (Shravaan Month) প্রথম সোমবার। তারকেশ্বরে (Tarakeswar) শিবের (Shiva) মাথায় জল ঢালতে লক্ষাধিক ভক্তের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে গোটা তারকেশ্বর এলাকা। তবে প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারেও গুরু পূর্ণিমার থেকে মেলা চলাকালীন ভক্তদের জন্য গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। মহাদেবকে জল নিবেদন করতে হচ্ছে চোঙার মাধ্যমে। 


শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে মন্দিরকে ঘিরে গোটা তারকেশ্বর চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখতে বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছে পৌরসভা। গোটা মাস জুড়ে প্রত্যেক সপ্তাহে রবিবার ও সোমবার ৬জোড়া করে স্পেশাল ট্রেন চালাচ্ছে পূর্ব রেলওয়ে।


উল্লেখ্য গুরু পূর্ণিমা থেকে রাখী পূর্ণিমা অবধি একমাস ধরে শ্রাবণী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবারে শ্রাবণ মাসে দুটি অমবস্যার কারণে শ্রাবণ মাসকে "মল মাস" বলে উল্লেখ আছে পঞ্জিকায়। তাই রাখী পূর্ণিমা একমাস পিছিয়ে গিয়েছে, ফলে কার্যত এবারে দু'মাস ব্যাপী চলবে শ্রাবণী মেলা। ভক্তরা মোট ৮টা রবিবার ও ৮টা সোমবার পাবে বাবার মাথায় জল ঢালার জন্য।


বৈদ্যবাটি নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে জল নিয়ে তারকেশ্বর মন্দির পর্যন্ত যান পুণ্যার্থীরা। প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা বাঁক কাঁধে "ভোলে বাবা পার করেগা" আওয়াজ তুলে হেঁটে চলে লক্ষ লক্ষ ভক্ত। পুরাণ মতে, শ্রাবণ মাসের সোমবার শিবের জন্মবার। তাই শ্রাবণ মাসের প্রত্যেক সোমবার লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয় তারকেশ্বর মন্দিরে। গঙ্গা থেকে তোলা জল ৩০কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে বাবার মাথায় ঢেলে পরম শান্তি পান ভক্তরা। 


এবারেও সেই নিয়মের এতটুকু ব্যতিক্রম ঘটেনি। আজ সোমবার লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমাগম হয়েছে তারকেশ্বর মন্দিরে। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে রাখা চোঙে জল ঢালছেন পরম আনন্দে। সেই সঙ্গে মোমবাতি-ধূপ জালিয়ে মনস্কামনা ও জানাচ্ছেন ভক্তরা। পসরা সাজিয়ে বসেছে বহু মানুষ।


আরও পড়ুন, তারকনাথকে জল নিবেদন করতে কেন নিমাই তীর্থ ঘাটেই ছুটে আসেন পুণ্যার্থীরা?


এদিকে শ্রাবণী মেলা উপলক্ষ্যে নজরদারী বাড়িয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। গোটা তারকেশ্বর এলাকা সিসিটিভিতে চলছে ২৪ ঘন্টা নজরদারি। তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্ন দুধপুকুরে রাখা হয়েছে স্পিড বোট, রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এছাড়া বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর রাস্তার প্রায় সব জায়গাতেই আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, পাশাপাশি রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।


দমদম থেকে তারকেশ্বরে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে প্রত্যেক বছর শ্রাবণ মাসে আসেন সোমনাথ দে ও সুচরিতা ধর দে । তারা জানান, 'মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলে আবারও এসেছি। সবাই আনন্দে থাক, সবার শরীর সুস্থ থাক এই কামনাই করলাম। জল ঢেলে আনন্দ পেলাম, বাবার দর্শন হল, সবই বাবার ইচ্ছা।'


তারকেশ্বর মন্দিরের পুরোহিত অমিতাভ হাজরা জানালেন, শ্রাবণ মাস মল মাস হলেও ভক্তের আগমন চলতেই থাকবে। আজ প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়েছে মন্দিরে।