অনির্বাণ বিশ্বাস ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা: বিদ্রোহে ইতি টেনে সুর নরম করেছিলেন। এবার ফের দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ হুমায়ুন কবীরের (Humayun Kabir)। 'শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমনটাই মেনে চলবেন', অঙ্গীকার ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুনের। শোকজের পরই সুর নরম করে ক্ষমা চান হুমায়ুন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তলবে আজ তৃণমূল ভবনে এসেছিলেন। বৈঠকে ছিলেন হুমায়ুন এবং তাঁর যুযুধান পক্ষ জেলা নেতৃত্ব। (Kolkata News)


তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবে, তেমনটাই মেনে চলবেন বলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে  অঙ্গীকার করেছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন। আজ মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলার নেতা-নেত্রীদের একজোট হয়ে চলার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অন্যথায় কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।


তৃণমূল ভবন থেকে বেরনোর সময় এদিন হাসিমুখেই দেখা যায় হুমায়ুনকে। তাহলে কি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কড়া বার্তাতেই কি গলল বরফ? শনিবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরে, ভরতপুরের হুমায়ুনের ভাব-ভঙ্গি দেখে অন্তত তেমনই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।


তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, এদিনের বৈঠকে হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, সেটাই তিনি মেনে চলবেন। কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলে, সে ব্যাপারে দলের মধ্যেই জানাবেন বলেও অঙ্গীকার করেছেন হুমায়ুন।


আরও পড়ুন: Buddhadeb Bhattacharjee: সংক্রমণ থেকে মুক্ত, ভাল আছেন বুদ্ধবাবু, তবে আরও দু’দিন রাখা হবে পর্যবেক্ষণে


শনিবার কলকাতার কার্যালয়ে মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে হুমায়ুনকে নিয়ে জটিলতা পুরোপুরি কাটেনি। তবে দলের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, রাজনৈতিক ময়দানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে লড়তে হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, যুযুধান সবপক্ষই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।

হুমায়ুনের বিদ্রোহের সূত্রপাত, গত পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট বণ্টন নিয়ে। বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, দলের ঘোষিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একের পর এক আসনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেন হুমায়ুন। কখনও মুর্শিদাবাদে সংগঠন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানান। কখনও আবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তি নিয়ে সরাসরি তৃণমূলনেত্রীকে প্রশ্ন ছোড়েন।

সেই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি, বিধানসভায় নাম না করে হুমায়ুনকে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, "রেজিনগরে একজন আছেন যিনি গুন্ডামি করেন। আমাদের হলেও, আমি এটাকে সমর্থন করি না।" এর দু'দিন পর ভরতপুরের বিধায়ককে শোকজ করে দলীয় নেতৃত্ব। কিন্তু তার পরেও থামেননি মুর্শিদাবাদের এই তৃণমূল নেতা। বরং নতুন দল গড়বেন বলে ঘোষণা করেন। 

দলীয় সূত্রের খবর, শনিবার কলকাতায় সবপক্ষকে বৈঠকে ডেকে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কড়া বার্তা দিয়ে বলা হয় যে, দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে সবাইকে। না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি কে হবেন, তা নিয়ে জেলা নেতৃত্ব আলোচনা করে রাজ্য নেতৃত্বকে জানাবেন। সেই মতো সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্ব।

সামনে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। 'ইন্ডিয়া' জোট গঠনের প্রেক্ষাপটে মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের স্রোত কোন দিকে বইবে, তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। সেই আবহেই হুমায়ুনকে কড়া বার্তা দেওয়া হল দলেরপ তরফে।