কলকাতা: রাজ্য-রাজপাল সংঘাতে এবার নয়া মোড়। দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ ঘিরে টানাপোড়েন অব্যাহত। সেই আবহেই এবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বরানগরের বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। সায়ন্তিকা জানিয়েছেন, উপনির্বাচনে জিতে দু'জন বিধায়কের শপথ নেওয়ার কথা। অথচ রাজ্য়পাল শুধু তাঁকে আহ্বান জানিয়েছেন। একা তাঁকেই ডেকেছেন। (Sayantika Banerjee)
বিধানসভায় এসে যাতে রাজ্যপাল শপথবাক্য পাঠ করান, তার জন্য বুধবার বিধানসভার সিঁড়িতেই চার ঘণ্টা ধর্নায় বসেন সায়ন্তিকা এবং ভগবান গোলার বিধায়ক রেয়াত হোসেন সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভা চত্বরে অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তৃমমূলের অন্য বিধায়করাও রয়েছেন সেখানে। আর ওই অবস্থান বিক্ষোভ থেকেই রাজ্যপালের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সায়ন্তিকা। (CV Ananda Bose)
এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে সায়ন্তিকা বলেন, "রাজভবনে যাব না। উনি আমাদের বাধ্য করছেন এই সিদ্ধান্ত নিতে। কাল অনেক কথা বলিনি আমরা, বলতে চাইনি। অনেক সন্দেহ রয়েছে। রাজ্যপালের চেয়ারটিকে সম্মান করি বলেই কিছু বলিনি। ২১ তারিখ স্পিডপোস্টে এবং ইমেলে আমার একার কাছে কেন চিঠি পৌঁছবে? স্পিড পোস্টে ভগবানগোলায় চিঠি পৌঁছতে ৪০-৫০ ঘণ্টা লাগতে পারে। কিন্তু ইমেলে চিঠি পৌঁছতে দেরি হওয়ার কথা নয়। ভগবানগোলার বিধায়কের কাছে তো ইমেল পৌঁছয়নি!"
সায়ন্তিকা আরও বলেন, "উপনির্বাচন তো দুই জায়গায় হয়েছে! তাহলে আমাকে একা কেন ওখানে ডাকা হচ্ছিল? বিধানসভা, বিধানসভার স্পিকার, কাউকে কিছু জানানো হয়নি যে কাকে পাঠানো হবে, কী ব্যবস্থাপনা হবে, সেই নিয়ে কিছু করা যায়। আমাকে একা জানানো হয়েছে। সন্দেহজনক তো বটেই। আমি নিরাপদ বোধ করছি না এভাবে রাজভবনে যেতে।"
রাজভবনের এক মহিলা কর্মী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন, এদিন তারও উল্লেখ করেন সায়ন্তিকা। জানান, রাজভবন থেকে অনেক ঘটনার কথা শুনেছি। ওঁর সম্মান রেখেই কিছু বলছি না। সত্য হোক বা মিথ্যা, শুনেছি তো! একজন মহিলা হিসেবে, আর একজন মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনা শুনেছি। ভয় তো লাগেই! রাজভবনে যাব না।"
নব নির্বাচিত বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানো নিয়ে অম্বেডকর সংবিধানে যা লিখে গিয়েছেন, তা-ও এদিন পড়ে শোনান সায়ন্তিকা। সায়ন্তিকা বলেন, "রাজভবনে যাব না। উনি বিআর অম্বেডকরের ঊর্ধ্বে নন, সংবিধানের ঊর্ধ্বে নন। উনি নিজের মতো করে সংবিধান পাল্টাচ্ছেন। এমনকি যাব না বলেছি বলে ভয় দেখিয়ে চিঠিও দিয়েছেন। না গেলে কী কী সাজা হতে পারে বলে জানিয়েছেন। কী সাজা হবে? কী অন্যায় করেছি? আমরা নির্বাচিত হয়ে এসেছি, আপনার মতো মনোনীত নই। আমাদের কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে।" রাজ্যপাল সংবিধানের ঊর্ধ্বে উঠে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন সায়ন্তিকা।
এ নিয়ে রেয়াত বলেন, "আমরা প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানাব। আমরা কি শপথ নেওয়ার যোগ্য নই? একসঙ্গে লোকসভা-বিধানসভা উপনির্বাচন হয়েছে। লোকসভার বিজয়ীরা প্রোটেম স্পিকারের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেছেন। আমরা পারছি না। আমাদের সব কাজ পড়ে রয়েছে। মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না।"
নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এদিন একই কথা শোনা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও। তিনি জানান, রাজভবনে যা ঘটেছে, তাতে সেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না মেয়েরা। তাঁর কাছে এ নিয়ে নানা অভিযোগও এসেছে। সায়ন্তিকাও সেই কথাই বললেন। ফলে দুই সাংসদের শপথ নিয়ে সংঘাত বাড়ছে।