মুম্বই:  ইন্টারনেট আর সমাজমাধ্যম যেভাবে দুনিয়াকে ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছে, সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসার পর যেন প্রযুক্তির জগতে একেবারে মেরুকরণ হয়ে গিয়েছে। শিল্প এবং ব্যক্তির মধ্যে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেন একটা বিভেদ গড়ে দিয়েছে, এমনটা যেমন সত্য তেমনি এর পাশাপাশি আমাদের চিন্তা ভাবনা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এবিপি নেটওয়ার্ক আয়োজিত আইডিয়াস অফ ইন্ডিয়া ৩.০ সম্মেলনে এসে এমনই মত প্রকাশ করেন জাকির হুসেন দিল্লি কলেজের অধ্যাপক বিজেন্দ্র সিং চৌহান। এমনকী তার সঙ্গে একই মত প্রকাশ করেন লেখক, ইংরেজির শিক্ষক, কেডি ক্যাম্পাস ও কেডি লাইভের উদ্ভাবক নীতু সিংও। সমাজমাধ্যমের অ্যালগোরিদম, এআই প্রযুক্তির সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের বাবা-মায়েদের চিন্তাশক্তির যে সম্পর্ক, প্রভাব তা নিয়ে আলোচনা করেন নীতু সিং এবং বিজেন্দ্র সিং চৌহান।


চৌহানের মতে, সমাজমাধ্যমে নিরন্তর যে বিজ্ঞাপন ও পোস্ট আসছে একের পর এক তা কোনও ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তাশক্তিকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করছে। চিন্তাকে প্রভাবিত করছে, তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করছে এই অ্যালগোরিদম। তিনি বলেন, 'এখন সবথেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাটাও মানুষের হাত থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে AI'।


তাঁর মতে, 'সমাজমাধ্যমে AI মূলত একই ধরনের কনটেন্ট সাইক্লিক মোডে বারবার দেখায় যা একধরনের প্ররোচনামূলক প্রযুক্তি। রিলস বা অন্যান্য পোস্টে যা দেখানো হচ্ছে সেরকমই আপনাকে স্বপ্ন দেখতে প্ররোচিত করা হচ্ছে, আপনাকে জোর করা হচ্ছে ঐরকম স্বপ্ন দেখতে। আমরা এটিকে স্বীকার করে নিচ্ছি এমনভাবে যেন এটাই আমাদের স্বাধীন পছন্দ। এটা আমাদের সমস্ত ধরনের পছন্দকে প্রভাবিত করছে। সম্পর্ক, কর্মজীবন, রাজনীতি, শিক্ষা সর্বত্র এর প্রভাব পড়ছে।'


বিজেন্দ্র সিং চৌহান এ প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, 'আমরা কখনই নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে AI-এর কাছে তুলে দিতে পারি না। AI অ্যালগোরিদম কখনও জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমরা তা হতে দিতে পারি না।'


নীতু সিং তাঁর নিজের ছন্দে নিজের ধরনে সমাজমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে কিছু কথা ভাগ করে নেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, আগে অপ্সরাদের কথা শোনা যেত যারা স্বর্গ থেকে নেমে আসতেন মুনি ঋষিদের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য। এখন সেইসব অপ্সরাদের জায়গায় এসে গেছে ইনস্টাগ্রাম।


চাকরির দুনিয়ায় AI-এর বিপদ


নীতু সিং তাঁর বক্তব্যে এদিন একটা বিষয়ে জোর দিতে চান যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের বাবা-মায়ের প্রত্যাশার বোঝা না হয়ে নিজেরা নিজেদের মত পথ নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে যাতে অনুসরণ করে চলতে পারে। তিনি বলেন, 'বাবা-মায়েরা তাঁদের নিজেদের স্বপ্ন ছেলেমেয়েদের উপর চাপিয়ে দেবেন না। এখনকার দিনে ছেলেমেয়েদের কাছে চাকরির সুযোগ সম্পর্কে বেশি জোর দেওয়া উচিত, এখনকার প্রজন্ম অনেক বেশি অবগত এবং কৌতূহলী, তাঁদের কাছে যথাযথ সুযোগ তুলে ধরাটা জরুরি।'


একই ধরনের কথার সুর লক্ষ্য করা যায় বিজেন্দ্র সিং চৌহানের কথায়। তিনিও ছেলে-মেয়েদের উপর চাকরি-বাকরি নিয়ে সমাজের একটা আলাদা চাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, 'সন্তানদের কখনও বাবা-মায়ের নিজেদের প্রজেক্ট ভাবা উচিত নয়। আমরা অনেক সময়েই লক্ষ্য করেছি বড় বড় প্রতিষ্ঠানে যেমন কোটা, আইআইটি, আইআইএমে যারা পড়ে তাঁরা অনেকেই নিজেদের ইচ্ছেয় নয়, বরং বাবা-মায়ের ইচ্ছেয় ভর্তি হয়েছেন।'


এছাড়াও চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে চৌহান সতর্ক করে দিয়েছেন আমাদের। উন্নত প্রযুক্তির দুনিয়া কীভাবে চাকরির বাজারকে সঙ্কুচিত করছে সেকথা জোর দিয়ে বলেন তিনি। তিনি বলেন, AI চাকরির বাজারে কিছু অংশের কর্মসংস্থান আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই বিলুপ্ত করে দিতে চলেছে। চৌহান আশঙ্কা প্রকাশ করেন, 'আমাদের জাতির তরুণদের স্বপ্ন অনেক বেশি সীমিত হয়ে পড়ছে ক্রমশ। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এমন সব পেশায় যুক্ত আছেন যেগুলি কয়েক দশকের মধ্যে AI-এর কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।'  


এবিপি নেটওয়ার্কের আইডিয়াজ অফ ইন্ডিয়া ৩.০ সম্মেলনে এদিন এই আলোচনায় মূলত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি, ব্যক্তিগত কর্মজীবন পছন্দ করা, আসন্ন প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের স্কিল বাড়িয়ে তোলার দিকে জোর দেওয়া হয়। আলোচকরা দুজনেই এই বিষয়গুলিতে জোর দেন। আর এর মাধ্যমেই ভারতের অর্থনীতি উন্নত হবে, সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।


আরও পড়ুন: Ideas Of India 3.0: 'অফিস বন্ধক রেখে 'দ্য কেরালা স্টোরি' তৈরি করেছিলাম', বললেন প্রযোজক বিপুল শাহ


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI