Ranjendra Bharud: দারিদ্র্য, যন্ত্রণা, অভাব কখনও সাফল্যের পথে অন্তরায় হতে পারে না। দরকার শুধু সফল হওয়ার ইচ্ছে আর অদম্য নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম। আর সেই কথাই যেন প্রমাণ করে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের রাজেন্দ্র ভরুধ (Rajendra Bharud)। মদের ভাটির খদ্দেরদের দেওয়া বকশিশের টাকা জমিয়ে বই কিনতেন, ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে ছিল রাজেন্দ্রর। তারপর এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়ে ছুটলেন UPSC-র লক্ষ্যে। সেই লক্ষ্যও জয় হল। দুরন্ত কষ্টের জীবন পেরিয়ে কীভাবে আলোর দিশারী হয়ে উঠলেন রাজেন্দ্র ভরুধ ?
বেড়ে ওঠা
মহারাষ্ট্রের সকরি তালুকের অন্তর্গত সামোড়ে গ্রামে ১৯৮৮ সালের ৭ জানুয়ারি জন্ম হয় রাজেন্দ্রর। মায়ের পেটে থাকাকালীনই তাঁর বাবা মারা যান। তাঁর পরিবার এতটাই দরিদ্র ছিল যে তাঁর বাবার একটা ছবিও তোলা হয়নি কখনও। ভাটিতে মদ বিক্রি করেই দিন চলত তাঁদের। থাকতেন একটা ছোট্ট কুঁড়েঘরে। এক সাক্ষাৎকারে রাজেন্দ্র (Rajendra Bharud) তাঁর ভয়ঙ্কর ছেলেবেলার কথা স্মরণ করেন। যে তাঁর যখন তিন বছর বয়স, খিদের জ্বালায় ভাটির মধ্যে খুব চিৎকার করতেন তিনি। আর সেই চিৎকার থামাতে মদ খেতে আসা লোকেদের কেউ কেউ তাঁর মুখে খানিক মদ ঢেলে দিত। এমনকী যাতে খিদে না পায় সেজন্য তাঁর ঠাকুমাও তাতে দুধের বদলে দেশি মদ খাওয়াতেন। কিছুদিনের মধ্যেই মদের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন রাজেন্দ্র। তাঁদের পরিবারে সর্দি-কাশি হলেও ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হত মদ। আর এই মদ খেতে এসে কিছু কিছু লোক বাইরে থেকে চাট জাতীয় খাবার আনার জন্য কিছু অতিরিক্ত টাকা বকশিশ দিতেন রাজেন্দ্রকে আর সেই সেই টাকা থেকে অল্প অল্প করে বাঁচিয়েই কিছু বই কিনেছিলেন তিনি। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় এভাবেই ৯৫ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ নম্বর পান রাজেন্দ্র ভরুধ (Rajendra Bharud)। ২০০৬ সালে মেডিকেল পরীক্ষায় বসেন তিনি।
ডাক্তারি পড়তে গিয়ে IAS
মুম্বইয়ের কেইএম হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন রাজেন্দ্র। পাবলিক হেলথ বিভাগের কাছে তিনি একজন আদর্শ হয়ে ওঠেন কিছুদিনের মধ্যেই। গিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়তে আর ডাক্তারির শেষ বছরে প্রবল পড়াশোনার চাপের মধ্যেই UPSC পরীক্ষায় বসেন রাজেন্দ্র ভরুধ (Rajendra Bharud)। আশ্চর্যজনকভাবে একবারের চেষ্টাতেই UPSC উত্তীর্ণ হন রাজেন্দ্র। তবে প্রথমবার তিনি IRS-এর জন্য নির্বাচিত হলেও পরের চেষ্টায় ২০১৩ সালে IAS হিসেবে নিযুক্ত হন।
এক সাক্ষাৎকারে রাজেন্দ্র জানিয়েছেন যে, ছোটবেলা থেকে এত দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হওয়ার কারণে তিনি সবসময় চাইতেন ডাক্তার হয়ে দরিদ্রদের সেবা করবেন। আর তারপর ভেবে দেখেন যে শুধু সেবা করাই নয়, দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে তাঁদের শিক্ষিত করে তোলাটাও জরুরি। আর এই লক্ষ্যেই UPSC উত্তীর্ণ হয়ে IAS হন রাজেন্দ্র ভরুধ। মুসৌরিতে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৫ সালে অ্যাসিসট্যান্ট কালেক্টর পদে কাজ শুরু করেন তিনি এবং ২০১৮ সালে নন্দারবারে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের পদে আসীন হন রাজেন্দ্র।
প্রত্যাশীদের জন্য কী বললেন রাজেন্দ্র ?
২০১৪ সালে একটি বই লেখেন রাজেন্দ্র (Rajendra Bharud) যেখানে তাঁর জীবনের সংগ্রামের কথা লিখেছেন তিনি। লিখেছেন কীভাবে ঝড়-ঝাপটা সয়ে প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যেও তিন সন্তানকে লালন-পালন করেছেন তাঁর মা। রাজেন্দ্র ভরুধ কেবলমাত্র কোনও আদর্শ-অনুপ্রেরণার নাম নয়, বরং যারা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে পিছিয়ে যায় তাদের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আরও পড়ুন: IAS Success Story: মুদির দোকান চালাতেন বাবা, অভাবের মধ্যেও ২৮ লক্ষের চাকরি ছেড়ে IAS আয়ুষ !
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI