কলকাতা: প্রাথমিক থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির বয়স ১২। তাই বলে ১২ বছর বয়সে অধ্যাপক! বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, আমেরিকা নিবাসী সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর এই পরিচয় সর্বজনবিদিত, তা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে যথেষ্ট। তবে এবার নয়া উচ্চতা ছুঁতে চলেছে সুবর্ণ। আগামী সপ্তাহেই সুবর্ণ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে চলেছে। ইতিমধ্যেই নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পেয়ে গিয়েছে সে। তাই সুবর্ণর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন থেকেই প্রত্যাশা বাড়ছে। (Soborno Isaac Bari)


প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারে ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল জন্ম সুবর্ণের। বাবা রশিদুল বারী এবং মা শাহেদা বারীর সঙ্গে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের নাসাও কাউন্টিতে বাস। ছোট্ট বয়সেই সুবর্ণ নিজের প্রতিভার জানান দিতে শুরু করে বলে দাবি তার পরিবারের। শোনা যায়, মাত্র ছ'মাস বয়সেই সুবর্ণ পূর্ণবাক্যে কথা বলতে শুরু করে সে। দু'বছর বয়সে পদার্থবিজ্ঞান, গণিত এবং রসায়নের কঠিন কঠিন অঙ্ক নাকি সহজেই কষে ফেলতে পারত। তিন বছর বয়সে ব্যাটারি নিয়ে সে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শুরু করে দেয় বলে শোনা যায়। (Soborno Isaac Bari Profile)


ছোট্ট সুবর্ণর ওই সব কাণ্ড-কারখানা তখন থেকেই রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়তে শুরু করেন তার মা-বাবা। সেই থেকে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং কলেজগুলির নজর কাড়ে সুবর্ণ।  Medgar Evers College-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড পোজম্যান প্রথম সুবর্ণের সাক্ষাৎকার নেন।  বাংলা ভাষার একটি ওয়েবসাইটেও সুবর্ণর কথা লেখা হয়। তার বুদ্ধিমত্তা পরখ করেও দেখা হয় সেখানে।



স্কুলজীবনেও অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে সুবর্ণ। চতুর্থ শ্রেণি থেকে একেবারে অষ্টম শ্রেণিতে তুলে দেওয়া হয় তাকে। এর পর নবম থেকে সোজা দ্বাদশ শ্রেণীতে পৌঁছে যায়। চার বছর বয়সে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সুনজরে পড়ে সুবর্ণ।  চিঠি লিখে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন ওবামা। ২০১৮ সালে ভারতীয় নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর কাছ থেকে 'গ্লোবাল চাইল্ড প্রডিজি অ্যাওয়ার্ডও' পায় সে। মাত্র ছ'বছর বয়সে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কাছ থেকে সুবর্ণ অধ্যাপক এবং বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পায় বলে জানা যায়।


নিউ ইয়র্কের তদানীন্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বিশ্বের 'কনিষ্ঠতম অধ্যাপক' হিসেবে সুবর্ণকে বিশেষ সম্মান প্রদান করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও চিঠি পায় সে।  ২০২০ সালে মুম্বইয়ের রুইয়া কলেজ বিজ্ঞানী এবং পদার্থবিজ্ঞানের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে সুবর্ণকে। অসমের কোকরাঝড় বিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতাও করে গিয়েছে। 'দ্য লাভ' এবং 'মণীশ' নামের দু'টি বইও লিখে ফেলেছে সুবর্ণ।



সুবর্ণকে আইনস্টাইনের সঙ্গেও তুলনা করেন কেউ কেউ। কিন্তু সুবর্ণের মতে, চাইলে যে কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন। শুধু অধ্যাবসায় জরুরি। কঠিন পরিস্থিতিতে হার না মেনে পরিশ্রম করে যেতে হবে। ঘৃণা মুছে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভালবাসা সঞ্চার করতে চায় সুবর্ণ। সন্ত্রাস, নাশকতার অবসান চায়। যদিও সুবর্ণকে নিয়ে বিতর্কও রয়েছে ঢের। 


অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী হিসেবে সুবর্ণকে যেভাবে তুলে ধার হচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত বলে মত সমালোচকদের। বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া তথ্যাদি যাচাইয়ের যে স্বাধীন সংস্থা রয়েছে, সেই FactWatch-ই সুবর্ণের পরিবারের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কম বয়সে নানা আবিষ্কারের জন্য গিনেস বুকে নাম উঠেছে যাঁদের, যাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের যদিও বা অধ্যাপক বলা যায়, সুবর্ণের ক্ষেত্রে এই উপমা খাটে না বলে মত সংস্থার সম্পাদক সুমন রহমানের।


'প্রথম আলো'কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে মুখ খোলেন সুমন। তিনি জানান, কনিষ্ঠতম অধ্যাপক হিসেবে আলি সবুরের নাম রয়েছে গিনেস বুকে। মেয়রের অফিসে বা প্রেসিডেন্টের অফিসে যে কেউ চাইলে আবেদন করতে পারেন। তথ্য পাঠালে সেই মতো প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। কারণ পশ্চিমি দুনিয়ায় নাগরিকরে উৎসাহিত করার চল রয়েছে। কিন্তু সুবর্ণর পরিবারের দাবি অতিরঞ্জিত। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে সুবর্ণকে নিয়ে কোনও তথ্য় নেই কেন, প্রশ্ন তোলে Fact Watch। বরং হার্ভার্ডের স্বীকৃতিপত্র হিসেবে যা তুলে ধরা হচ্ছে, তা নেহাতই জন্মদিনের শুভেচ্ছাপত্র বলে জানায় তারা। শুধু Fact Watch-ই নয়, সুবর্ণর পরিবারের একাধিক দাবিকে ভুয়ো বলে দাগিয়ে, উইকিপিডিয়াও সুবর্ণর পেজ সরিয়ে দিয়েছে। 


আরও পড়ুন: UAE Abortion Law: সিদ্ধান্ত নেবেন মেয়েরাই, ধর্ষণে গর্ভপাতে সায় আমিরশাহির, আমেরিকা এখনও লড়ছে


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI