নয়া দিল্লি: জীবন যে সবসময় সোজা পথে চলে, এমনটা সবসময় হয় না। শৈশব থেকে বার্ধক্য, এক এক সময় এক এক কঠিন মুহূর্তর মধ্য দিয়ে যেতে হয় আমাদের। কিন্তু সেই বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে চলাই জীবন। যেকোনও কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিকূলতা কাটিয়ে সামনের পথে পাড়ি দিতে হবে তা শেখা যায় সেই সকল লড়াই করে শিখরে ওঠা ব্যক্তিদের কাছ থেকে। তেমনই লড়াইয়ের আরেক নাম- উম্মুল খের।
রাজস্থানের পালির বাসিন্দা উম্মুল শৈশব থেকেই লড়াই করেছেন। কখনও শারীরিক অক্ষমতার সঙ্গে, কখনও পরিবারের সঙ্গে, কখনও আবার ভাগ্যের সঙ্গে। কিন্তু হার মানেননি কর্মের কাছে। ছোটবেলা থেকেই 'হাড় ভেঙে যাওয়ার' মতো কঠিন অসুখে আক্রান্ত ছিলেন উম্মুল। পরিবারের সকলেই চিন্তিত ছিল আদৌ তিনি স্কুলের গণ্ডি পেরতে পারবেন না কি না। আজ সেই তিনিই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস অফিসার হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
উম্মুল খের রাজস্থানের পালিতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মারওয়ার পরিবার থেকে বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু ছোট থেকেই তাঁর শরীরের হাড় দুর্বল ছিল। প্রায়ই তা ভেঙে যেত। এখনও পর্যন্ত ১৬টি ফ্র্যাকচার এবং আটবার অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। পরিবার বলতে বাবা-মা এবং তিন ভাইবোন। রাজস্থান থেকে দিল্লির একটি বস্তিতে থাকতেন উম্মুল। তাঁর বাবা দিল্লিতে কাপড় বিক্রি করতেন। কিন্তু সেই সময় বস্তি ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় মাথার ছাদও চলে যায় তাঁদের।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল ছিল উম্মুলকে পড়াশুনো ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলে তাঁর পরিবার। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তাঁর মা মারা যান। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর পরই তাঁকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। এই লড়াইয়ের কাছেও মাথা নত করেননি তিনি। পড়াশুনো চালিয়ে যেতে বাড়ি ছেড়ে ত্রিলোকপুরির ঝুগি ঝোপরিতে একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের ভরণপোষণের জন্য তিনি বস্তির শিশুদের টিউশনি দেওয়াও শুরু করেন।
আরও পড়ুন, অল্প বয়সেই UPSC-তে বাজিমাত, সাফল্যের নেপথ্যে ঠিক কী? টিপস IAS অফিসার শিবানীর
তবে কথায় আছে, যারা কর্ম করতে পারে, ঈশ্বর তাঁদের সহায় হন। অমর জ্যোতি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সেই সময় তাঁর পড়ার জন্য সাহায্য করে। দ্বাদশ শ্রেণিতে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পান উম্মুল। কলেজে পড়াশুনো করার সময়ও টিউশনি করে যেতেন তিনি। মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এই ছাত্রীর জীবনে ২০১২ সালে নেমে আসে আঁধার। একটি ছোট দুর্ঘটনা তাকে এক বছরের জন্য হুইলচেয়ারে বন্দী করেছিল।
তবে ভাগ্যের কাছে বার বার মার খেয়েও হার তিনি মানেননি। JNU-তে ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে স্নাতকোত্তরের জন্য একটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, পেয়ে যান স্কলারশিপও। সেই সময়ই স্বপ্ন দেখেন আইএএস হওয়ার। এরপর চলে মেধার সঙ্গে লড়াই। ২০১৬ সালে 420th rank করে UPSC exam উত্তীর্ণ হন উম্মুল খের। নজির রাখেন এক হার না মানা লড়াইয়ের।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI