Success Story: ইউপিএসসি- র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা (UPSC Civil Service), ভারতের সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার যাবতীয় পরীক্ষার মধ্যে অন্যতম কঠিন বিষয়। এই পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁরাই জানেন চাকরির এই পরীক্ষা ঠিক কতটা কঠিন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় একবারে উত্তীর্ণ হওয়া অনেকেরই স্বপ্ন। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই তা পূরণ হয় না। অনেকেই রয়েছে, বেশ কয়েকবার পরীক্ষা দেওয়ার পর ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়েছে। তবে আইপিএস অমৃত জৈন এই সকলের থেকে এক্কেবারে আলাদা। একবার, দু'বার নয়, চার চারবার ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন অমৃত। তাও আবার পরপর চারবার এবং কোনও প্রকার কোচিংয়ের সাহায্য ছাড়াই।
শুনে অবিশ্বাস্য লাগলেও, বাস্তবে এটাই সত্যি। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলায় এএসপি পদে আসীন রয়েছে অমৃত জৈন। আদতে তিনি রাজস্থানের ভিলওয়াড়ার বাসিন্দা। ওয়ারেঙ্গলের এনআইটি- তে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন অমৃত। বি টেক ডিগ্রি পাওয়ার পর সুদূর চেক প্রজাতন্ত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান তিনি। প্রাগের Czech Technical University- তে উচ্চস্তরের শিক্ষালাভ করার পর হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থার নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন অমৃত। তখন থেকেই ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসে সাফল্য লাভের আকাঙ্খা দেখা দেয় তাঁর মধ্যে। আর তারপরই শুরু হয় কঠোর পরিশ্রম।
অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের ছেলে অমৃত। তবে মেধায় তিনি মোটেই সাধারণ নন। শুধু মেধাবী বললেও যেন কম বলা হয়। আক্ষরিক অর্থেই তিনি যেন 'বিস্ময় বালক' কিংবা 'ম্যাজিক বয়'। প্রথমে সিভিল সার্ভিসে বসেন ২০১৬ সালে। আগে থেকে তেমন কোনও প্রস্তুতি ছিল না অমৃতের। অন্তত ইউপিএসসি- র সিভিল সার্ভিসে বসার জন্য যে সাংঘাতিক পর্যায়ের প্রস্তুতি প্রয়োজন হয়, তা একেবারেই ছিল না তাঁর। অমৃত জানিয়েছেন, নিজের ব্যাপারে অতিরিক্ত বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন পরীক্ষায় সব মাল্টিপল চয়েজ প্রশ্ন থাকবে। প্রথমবার পরীক্ষায় ফেল করেন তিনি।
এরপর ২০১৭ সালে আবারও সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দেন অমৃত। মাত্র এক নম্বরের জন্য পিছনে থেকে যান তিনি। এবার জেদ চেপে গিয়েছিল তাঁর। একরোখা হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত জৈন। তবে কোথাও থেকে কোচিং নেননি। শুধু বদলে ফেলেছিলেন পড়াশোনার ধরণ। উন্নত করেছিলেন নিজের পড়ার স্ট্র্যাটেজি। পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কেও আরও বেশি করে অবগত হয়েছিলেন অমৃত। তবে শুধু যে পড়াশোনার কৌশল বদলে ফেলেছিলেন তাই নয়, অধ্যয়নে যোগ করেছিলেন আরও অনেক বেশি পরিশ্রম। সেই সময় তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র ছিল 'প্র্যাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট'। এক থেকে দেড় ঘণ্টার ১৪০টি মক টেস্ট দিয়েছিলেন অমৃত জৈন।
মূল পরীক্ষার ফরম্যাটের সঙ্গে সহজাত হওয়ার আগে এইসব মক টেস্ট দেওয়া যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পরবর্তীতে সে কথাও বলেছেন অমৃত। পরীক্ষার সময় লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যেও সরে যাননি তিনি। প্রতিটি প্রশ্ন অন্তত তিনবার করে পড়েছিলেন, যাতে বিন্দুমাত্র ভুল হওয়ার অবকাশও না থাকে। শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে যাওয়া, নিয়মিত অভ্যাস করা, অধ্যয়নে সঠিক ভাবে মনযোগ দেওয়াকেই নিজের সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন অমৃত। অপশনাল সাবজেক্ট হিসেবে পলিটিকাল সায়েন্স বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৬ এবং ২০১৭ সালে সাফল্য আসেনি ঠিকই। তবে তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাননি অমৃত জৈন। ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ - পরপর চার বছর ইউপিএসসি- র সিভিল সার্ভিসে সফল হয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে রিজার্ভ তালিকায় নাম ছিল তাঁর। পরে ইন্ডিয়ান ডিফেন্স অ্যাকাউন্ট সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। ২০১৯ সালে তাঁর র্যাঙ্ক ছিল ৩২১, ২০২০ সালে ৯৬ এবং ২০২১ সালে ১৭৯ র্যাঙ্ক হয়েছিল অমৃত জৈনের।
তবে চারবার ইউপএসসি সিভিল সার্ভিসে সফল হলেও একটা স্বপ্ন অধরা রয়েছে অমৃতের। আইএএস অফিসার এখনও হতে পারেননি তিনি। তবে এ নিয়ে কোনও খেদ নেই তরুণের মনে। অমৃতের কথায়, ইউপএসসি- র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার সময় সকলেই চান আইএএস অফিসার হতে। কিন্তু সকলের সেই চাওয়া পূর্ণ হয় না। কিন্তু লক্ষ্যে অটল থেকে অবিরাম কঠোর পরিশ্রম করে গেলে, সাফল্য জীবনে আসবেই।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI