কলকাতা : অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা। 'বিউটি উইথ ব্রেন' বলে যদি কিছু হয়, তিনি তাঁর প্রকৃষ্টতম উদাহরণ। তিনি ঐশ্বর্য শেওরান। UPSC-র মতো কঠিন পথ পার করেছেন চূড়ান্ত ৯৩ র্যাঙ্ক করে। ২০১৯-এ। পরিশ্রম যে কতটা করেছেন তা তাঁর অধ্যাবসায়ই বলে দেয়। একইসঙ্গে আরও একটি তথ্যের জন্য প্রত্যাশীদের কাছে অনুপ্রেরণা ঐশ্বর্য। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পথকে গুডবাই জানিয়ে আমলা হওয়ার স্বপ্নকে বুনেছেন তিনি। সাকারও করেছেন। কীভাবে ? সেই জার্নিটাই শেয়ার করেছেন তিনি।  

  


কেন ৩৬০ ডিগ্রি বদল ? 


মডেলিং থেকে কেন আমলার পথ বাছলেন তিনি ? একসময়ের মিস ইন্ডিয়া ফাইনালিস্ট কেন চলে এলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন পেশায় ?  এই প্রশ্নই অনেকের মনে ঘুরপাক খায় এখনও। এবিপি নিউজকে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ঐশ্বর্য জানিয়েছিলেন, ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন তিনি। সায়েন্স নিয়ে পড়েছেন । ক্লাস টুয়েলভে পেয়েছিলেন ৯৭.৫ শতাংশ নম্বর। টপার ছিলেন স্কুলে। সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীতেও তাঁর উৎসাহ ছিল নজরকাড়া। প্রায়শই সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন নাচ, বিতর্কে। পরে করেছেন মডেলিং। তবে একসময় এসে মনে হয়েছে, না আর শখের মডেলিং করবেন না। তখনই সিদ্ধান্ত নেন স্বপ্নপূরণের। শুরু হয় প্রস্তুতি। 


আদতে রাজস্থানের বাসিন্দা। তবে পরিবার থাকত দিল্লিতে। বাবা সেনা কর্নেল। মা গৃহিণী। দিল্লির চাণক্যপুরীতে স্কুল শিক্ষা ঐশ্বর্যর। পরে দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অফ কমার্স স্নাতক হন। তাঁর মডেলিংয়ে আসার ঘটনাটাও বেশ অবাক করার মতো। ঐশ্বর্য নিজের মুখেই জানিয়েছেন সে কথা। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে তখন পড়েন। মায়ের সঙ্গে মলে শপিং করতে গিয়েছেন একদিন। মলেই তখন চলছিল মডেলিং সংক্রান্ত একটি প্রতিযোগিতার। মা শপিংয়ে ব্যস্ত। সেই ফাঁকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নেন ঐশ্বর্য। জিতেও যান। মেলে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস। পরে একবার মুম্বই যেতে হয়েছিল ঐশ্বর্যকে। একটি ওয়ার্কশপে।  চোখে পড়েন মিস ইন্ডিয়া অর্গানাইজেশনের। মায়ের প্রবল ইচ্ছে ছিল মিস ইন্ডিয়া হোন তাঁর মেয়ে। মায়ের ইচ্ছেতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নেন। সেই শুরু। মডেলিংয়ে অফার আসতে থাকে। ঝাড়াই-বাছাই করে অংশ নিতে থাকেন তিনি। একইসঙ্গে চলতে থাকে কলেজের পড়াশোনা। 


একসময় স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ করেন। এরপরই সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করেন চিন্তাভাবনা। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মন পুরোপুরি দেন প্রস্তুতিতে। একবছর লাগাতার লেগে থাকা। প্রথমবারের প্রচেষ্টাতেই বাজিমাত। UPSC-তে একেবারে ৯৩ তম স্থানে নিজেকে স্থাপন করেন ঐশ্বর্য। 


 



ঐশ্বর্য শেওরান


কিন্তু কীভাবে প্রথমবারের প্রচেষ্টাতেই বাজিমাত ? 


রসায়ন কী ? 


ঐশ্বর্য বলছেন, জীবনে ব্যালেন্স রাখা খুব জরুরি। যেটা তিনি অনুসরণ করেছেন। UPSC প্রস্তুতি চলাকালীন তিনি ১০+৮+৬ এই ব্যালেন্সে চলেছেন। ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা। ৮ ঘণ্টা ঘুম। বাকি ৬ ঘণ্টা যা খুশি তাই। অর্থাৎ ইচ্ছেমতো ইচ্ছেপূরণ ওই বাকি সময়টুকু। একইসঙ্গে পরিকল্পনাও করেছিলেন নিখুঁত। যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিলেবাস যেহেতু বিশাল তাই সেটা কভার করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করা জরুরি। পড়া, লেখা আর অনুশীলন।ইন্টারভিউ নিয়েও পরামর্শ দিয়েছেন ঐশ্বর্য। শেয়ার করেছেন নিজের অভিজ্ঞতাও। নিজের রাজ্য হরিয়ানা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তাঁকে করা হয়েছিল। ভারত-অ্যামেরিকা সম্পর্ক, শিক্ষা, পরিকাঠামো ইত্যাদি নিয়েও প্রশ্ন এসেছিল। তবে ঐশ্বর্য জানিয়েছেন, তাঁর শখ মডেলিংয়ের কথা ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা নোট করলেও প্রশ্ন কিছু করেননি। 


প্রস্তুতি চলাকালীন ফোকাস, নিয়মানুবর্তিতার উপরও জোর দিয়েছেন ঐশ্বর্য। নিজের প্রস্তুতি চলাকালীন ইন্টারনেট ব্যবহার শুধুমাত্র নিজের প্রস্তুতির জন্যই লাগিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় নোট ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতেন। আর সম্পূর্ণ বিরতি নিয়েছিলেন সোশাল মিডিয়া থেকেই। নিজে নিজে মক প্রস্তুতিও নিয়েছেন অনেকবার। তাঁর পাখির চোখ ছিল একটাই। প্রথমবারের চেষ্টাতেই UPSC-র কঠিন দরজাটা পেরোতে হবে তাঁকে। আর নিজের নিয়মানুবর্তিতার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বাবার পেশা আর নিয়মানুবর্তিতার কথাও বলেছেন তিনি। জোর দিয়েছেন বাবার শেখানো মূল্যবোধে। ঐশ্বর্যর বাবা বলতেন - তুমি কোথায় যাবে সেটা ব্যাপার নয়, মনে তুমি কোথা থেকে এসেছ। সংস্কার আর মূল্যবোধে ভর করে জীবনের অন্যতম বড় পরীক্ষায় পাশ করেন ঐশ্বর্য। পরে আমলা হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। IFS অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন।


আরও পড়ুন  : চারবার ব্যর্থ, পাঁচবারে সেরা তিনে ; ঘুরে দাঁড়ালেই সাফল্য, বার্তা উমার



 


 


 


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI