কলকাতা: "মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা।'' আমাদের প্রতিদিনের জীবনেই যে ভাষার ব্যবহার সবথেকে বেশি তা হল বাংলা। বিশেষত আমাদের যাদের মাতৃভাষা বাংলা তাদের ক্ষেত্রে এই ভাষায় ব্যবহার ঠিক কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ভাষার গুরুত্ব রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেও। ইংরেজির পাশাপাশি যে কোনও সরকারি পরীক্ষাতে মাতৃভাষাকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম নয় WBCS পরীক্ষা। ডব্লিউবিসিএস মেনস পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের একটি পেপার থাকে মাতৃভাষার ওপরে। এবিপি লাইভে আলোচনার বিষয় বাংলা। বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডিপুর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ মণ্ডল জানাচ্ছেন অবহেলা নয়, অন্য বিষয়ের মতো বাংলাকেও দিতে হবে গুরুত্ব।
এবিপি লাইভ: কম্পালসারি বাংলার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রশ্নটা আসে তা হল পড়া কীভাবে শুরু করব, বই নাকি খবরের কাগজ, এক্ষেত্রে আপনার সাজেশন কী হবে?
অনির্বাণ মণ্ডল: আমাদের যেহেতু মাতৃভাষা বাংলা, তাই পরীক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাটা খুব সহজভাবে নিয়ে নিই। যা কোনওভাবেই উচিত নয়। ২০০ নম্বরের একটি পেপার থাকে। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বই এবং কাগজ দুটোই একইসঙ্গে পড়তে হবে। পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলছি, কাগজ পড়লে শুধু সাম্প্রতিক ঘটনাই যে জানতে পারি তা নয়, আমাদের যে ভাষাশৈলি সহ সম্পাদকীয় চিঠি, প্রতিবেদন সম্পর্কেও ধারনা পাওয়া যায়। WBCS পরীক্ষায় আশাই করা হয় যে ভাষার উপর পরীক্ষার্থীর দখল রয়েছে। এই চাকরি করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও প্রান্তেই যেতে হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে একাধিক প্রান্তে যেমন হিন্দি ভাষারও প্রচলন আছে। তাই দেখা হয় যে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজির উপর দখল রয়েছে পরীক্ষার্থীর। তাই যে কোনও সংবাদপত্র প্রতিদিন পড়া উচিত। কারণ ব্যাকরণ চর্চা অনেকদিন পরে আবার আমরা শুরু করি। অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাই পড়ার অভ্যেসটা তৈরি করে ফেলতে হবে।
এবিপি লাইভ: সম্পাদকীয় চিঠি লেখার ক্ষেত্রে একটি বাক্যের মধ্যে কত শব্দ লিখতে হবে?
অনির্বাণ মণ্ডল: সম্পাদকীয় চিঠি লেখার ক্ষেত্রে প্রাঞ্জল ভাষাই চাওয়া হয়। তাই একটা বাক্যে ১৫টার বেশি শব্দ না হওয়াই ভাল। বাক্য দীর্ঘায়িত করলে মূল বিষয় থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছোট, সহজ এবং সরল বাক্যে লেখার অভ্যেসটা করতে হবে। যাতে আমি যা লিখতে চাইছি তা যেন সহজেই পরীক্ষক বুঝতে পারেন।
এবিপি লাইভ: প্রতিবেদন লেখার সময় তথ্য সংগ্রহ কোথা থেকে করবে ছাত্রছাত্রীরা?
অনির্বাণ মণ্ডল: সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে থেকে প্রতিবেদন লিখতে দেওয়া হয়। তাই সাম্প্রতিক ঘটনার উপর নজর রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন বলা যেতে পারে অনলাইন শিক্ষা। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ২ বছর আগেও যা ছিল বিকল্প মাধ্যম। একাধিক লার্নিং অ্যাপ আগেও ছিল। কিন্তু এখন মূল মাধ্যম। যেহেতু স্কুল, কলেজ বন্ধ, তাই অনলাইন শিক্ষা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটা বিষয়। আবার সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহল থাকার পরেও দেখা যায় কমন টপিক আসেনি। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে যতটুকু তথ্য রয়েছে তা পরিবেশনের উপর জোর দিতে হবে। পরীক্ষায় বুদ্ধিমত্তাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
এবিপি লাইভ:বাংলায় কি ভালো স্কোর করা আদৌ সম্ভব?
অনির্বাণ মণ্ডল: যে কোনও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় জোর দেওয়া হয় সমাজ বিজ্ঞানের উপর। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতিবিদ্যা সবটাই সমাজ বিজ্ঞানের অঙ্গ। সিভিল সার্ভিসের যে কোনও পরীক্ষার ট্রেন্ড বিজ্ঞানের থেকে ঝুঁকে সমাজ বিজ্ঞানের দিকেই। সেক্ষেত্রে বাংলায় ভাল স্কোর করা সম্ভব। বাংলার থেকে অনেকে অন্য বিষয় যেমন অর্থনীতিবিদ্যা, পলিটিকে জোর দেন। কিন্তু বাংলাকে কোনওভাবেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ এই বিষয়ও ২০০ নম্বর থাকে। যার প্রাপ্ত নম্বরের গুরুত্ব মেনসে রয়েছে। যেভাবে ইংরেজি বা অন্য বিষয় চর্চা করা হচ্ছে সেভাবে বাংলাটাও করতে হবে। কারণ, যে কোনও ভাষা চর্চা করলেই তার উপর দখল বাড়ে। যে শব্দ পড়ি তাই কিন্তু পরীক্ষায় লিখি। তাই যথেষ্ট শব্দ না থাকলে লেখা সম্ভব হবে না। লেখা হবে এমন যা প্রাঞ্জল কিন্তু বাহুল্য বর্জিত। তাই অন্যান্য বিষয়ের মতো বাংলাতেও ভাল স্কোর করা সম্ভব।
এবিপি লাইভ: সম্পাদকীয় এবং প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে শব্দ সংখ্যা মেনে চলা কতটা জরুরি?
অনির্বাণ মণ্ডল: প্রশ্নপত্রে শব্দ সংখ্যা নির্দিষ্ট করা থাকে। তা মেনে চলা হয়। খুব বড় করে বা ছোট করে লেখাটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যে শব্দ সংখ্যা নির্দিষ্ট লেখা থাকে, তা মেনেই চলাই ভাল। এই ধরনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে হলে গিয়ে এই মনোভাব থাকলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চর্চা না করলে পরীক্ষার সময়ই ধাক্কা খাবেন পরীক্ষার্থী। প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় শব্দ সংখ্যা মেনে চর্চা করলে অনেক বেশি এগিয়ে থাকবেন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী। নির্ধারিত শব্দ সংখ্যার মধ্যে লিখলে ফেললে পরীক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মিলবে। ধরা যাক একটা রেল দুর্ঘটনার বিষয়ে লিখতে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ঘটনার সময় থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সব তুলে ধরতে হবে। নির্ধারিত শব্দ সংখ্যা মানে কোনও কিছু বাদ দেওয়া নয়। এখানেই চর্চার বিষয় উঠে আসে। যিনি চর্চা করে যাবেন, তাঁর পরীক্ষার সময় কোনও সমস্যা হবে না।
এবিপি লাইভ: বানান ভুলের ক্ষেত্রে কি নম্বর কাটা যেতে পারে?
অনির্বাণ মণ্ডল: যিনি বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দিচ্ছেন তাঁর থেকে আশা করা হয় বানান ঠিক হবে। যাতে বানান ভুল না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। বানান ভুল হলে নম্বর কাটা যাবে এরকম ব্যাপার নয়। তবে একটা নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে। একটা বাক্যে ৪টে বানান ভুল হলে পরীক্ষার্থীর বাংলা জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন উঠবে।
এবিপি লাইভ: বাংলা কম্পালসারির ক্ষেত্রে ফরম্যাট কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অনির্বাণ মণ্ডল: প্রতিবেদন বা সম্পাদকীয় লেখার সময় ক, খ, গ, ঘ বলে নিজের নাম, ঠিকানা উল্লেখ করতে বলা হয়। নিজের নাম, ঠিকানা প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সম্পাদকীয়, প্রতিবেদন লেখার যে নিয়ম রয়েছে তা মানা উচিত। যে কোনও ভাষার ক্ষেত্রেই এটা নির্দিষ্ট ফরম্যাট।
এবিপি লাইভ: সারাংশ কত শব্দের মধ্যে লিখতে হবে?
অনির্বাণ মণ্ডল: সারাংশের প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর যেটা করা উচিত তার মধ্যে থাকা শব্দ সংখ্যা গুনে ফেলা উচিত। যত শব্দ রয়েছে তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ লিখতে হবে। সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে উপমা, উদাহরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক ব্যাখ্যা থাকে। সারাংশের উত্তর হবে ব্যাখ্যা বর্জিত। উপমা বর্জিত। ধরা যাক ফুটবল খেলা নিয়ে চার লাইনের এ়কটা সারাংশ লিখতে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্য়ে মূল বিষয়টা নিয়ে লিখতে হবে। মানে পরিবর্তন না করে নিজের ভাষায় লিখতে হবে।
এবিপি লাইভ: বঙ্গানুবাদ লেখার নিয়ম কী?
অনির্বাণ মণ্ডল: মূল ভাবধারা যেন পাল্টে না যায়। শব্দ থেকে শব্দে বঙ্গানুবাদ করলে হবে না। বারবার পড়া উচিত। মূল প্রতিপাদ্? বিষয় খুঁজে বের করতে হবে। কারণ ভাষার মারপ্যাঁচ লুকিয়ে থাকে। ইতিবাচক কোনও বাক্যকে নেতিবাচক করা যাবে না।
এবিপি লাইভ: বোধ পরীক্ষণ লেখার ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মানতে হবে?
অনির্বাণ মণ্ডল: বাংলা যে অংশ থাকে তা ভাল করে পড়তে হবে। যার মধ্যে থেকেই প্রশ্ন আসে। আগে প্রশ্ন পড়ে তারপর প্যারাগ্রাফটা পড়েন অনেকে। যা একেবারেই ভুল। ভাষার ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। কোনওভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
এবিপি লাইভ: পরীক্ষার্থীদের জন্য আপনার কোনও সাজেশন?
অনির্বাণ মণ্ডল: WBCS একেবারেই সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা। বাংলা হোক বা অন্য যে কোনও বিষয়কে সময় দিতে হবে। অনেকের দুর্বলতা থাকে কোনও বিষয়ে, সেটা নিয়ে সারাদিন পড়তে থাকে। সব বিষয় ব্যালেন্স করে পড়া এবং লেখায় নজর দিতে হবে। দুই বা তিনটে টেক্সট বই পড়ে ফেলতে হবে। কত প্রশ্ন সঠিকভাবে লিখলাম সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার চর্চা লাগাতার করতে হবে। না হলে অভ্যেস নষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: WBCS Exam Preparation: ইংরেজিতে ভয়! WBCS-এ কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি?
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI