কলকাতা: প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান- যাঁর সঙ্গে পরিচিত আমরা সবাই। জীবনে গণ্ডি পেরিয়ে পরীক্ষাতেও বিজ্ঞানের (Science) কতটা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একেবারে স্কুল স্তর (School) থেকে উচ্চশিক্ষা (Higher Study), প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন অংশ থাকে পাঠ্যসূচিতে। একইভাবে এই বিষয় পড়তে হয় WBCS পরীক্ষার্থীদেরও। বিজ্ঞানের সিলেবাসে কোন কোন অংশ রয়েছে? কীভাবে শুরু করবেন পড়া? তা নিয়ে এবিপি লাইভে আলোচনা করলেন কোচবিহারে কর্মরত Asst Registrar of Cooperative Societies সায়ন্তন ঘোষ।
এবিপি লাইভ: জেনারেল সায়েন্সের মধ্যে মূলত কোন কোন অংশ থাকে?
সায়ন্তন ঘোষ: প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যাবে, এর সিলেবাসের সঙ্গে মিল রয়েছে মাধ্যমিক বা সমতুল্য স্তরের সিলেবাসের। নবম-দশম শ্রেণির পাশাপাশি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসের অ্যাডভান্স অংশের কিছু মিলও রয়েছে। পার্থক্য এই জায়গাতেই যে তখন যে টপিক পড়েছিলাম, এখন যেভাবে পড়ব তা অনেকটাই আলাদা। জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞানে যা ছিল তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞান। এই ধরনের পরীক্ষায় শুধুই যে মেধার বিচার করা হয় তা নয়, একইসঙ্গে সাধারণ জ্ঞান কতটা তাও পরীক্ষা করা হয়। বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনে যে খবরগুলি উঠে আসছে তাও গুরুত্বপূর্ণ।
এবিপি লাইভ: স্ট্যাটিক অংশের মধ্যে কি সবটাই গুরুত্বপূর্ণ?
সায়ন্তন ঘোষ: সিলেবাসকে মূলত দুটি অংশ ভাগ করে পড়লে পড়ার সুবিধা হবে। একটা হল স্ট্যাটিক অংশ। যেটা ছোটবেলা থেকেই আমরা পড়ে এসেছি। আরেকটা ডায়নামিক বলে ধরে নিতে পারি। অর্থাৎ যেটা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমরা যদি রোজ খবরের কাগজ বা বিজ্ঞান সম্পর্কিত ম্যাগাজিন পড়ি, তাহলে এই বিষয়টা খুব সহজ হবে। কিন্তু এই ডায়নামিক পার্টটা বোঝার জন্য কিন্তু স্ট্যাটিক পার্টটা ভাল করে পড়তে হবে। এর জন্য আগে বলা হত দশম শ্রেণির বই পড়তে। কিন্তু আমার সাজেশন নির্দিষ্ট কিছু বই পড়া ভাল। একটা বিষয় বুঝতে হবে জেনারেল সায়েন্সে কিন্তু বিজ্ঞানের সব বিষয়ই পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ও পড়তে হচ্ছে। এই পরীক্ষায় টাইম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। হ্যান্ড বুক বা রেফারেন্স বুক থেকে প্রথমে পড়া শুরু করা যেতে পারে। তাতে পুরনো পড়া মনে পড়ে যাবে। বই পড়ার পাশাপাশি পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নও সমাধান করতে হবে।
এবিপি লাইভ: বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে আবগত থাকা যাবে কীভাবে?
সায়ন্তন ঘোষ: প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে যে যে অংশ গত এক দুবছরে সংবাদ হিসেব উঠে এসেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও কিছু আবিষ্কার হলে তা অনেক সময়ই সংবাদে উঠে আসে, সেটাও মনে রাখতে হবে। যেমন বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস, ভ্যাকসিন, কারা আবিষ্কার করছেন, এই বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে। রোজ খবরের কাগজ বা মোবাইলে ই-পেপার পড়া বা অন্য কোনও অনলাইন মাধ্যম খবর কিন্তু পড়তে হবে। একইসঙ্গে এটা অভ্যাস করে ফেলতে হবে।
এবিপি লাইভ: ফিজিক্স পড়া শুরু করবে কীভাবে?
সায়ন্তন ঘোষ: ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি কেউ আলাদাভাবেও পড়তে হবে। আবার হ্যান্ডবুকে দেখা যায় এই অধ্যায়গুলি পরপর থাকে। সেভাবেও পড়া যায়। প্রথমে অ্যাটোমিক স্ট্রাকচার পড়া শুরু করা যেতে পারে। যেটা ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি দুটো ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের পার্টটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার অভিজ্ঞতায় গতিবিদ্যা থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন আসে। নিউটন ল, আইনস্টাইন থিওরি, ফটো ইলেক্ট্রিক এফেক্ট, সোলার সেল, এই সবটাই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। যা থেকে প্রশ্ন আসে।
এবিপি লাইভ: পিরিওডিক টেবিল মনে রাখার উপায় কী?
সায়ন্তন ঘোষ: সবার বাড়িতেই আগে ক্যালেন্ডারের মতো পিরিওডিক টেবিল ঝুলত। চর্চা করার বিকল্প কিছু নেই। পরপর পর্যায়-সারণীতে যে সারিগুলি রয়েছে তা গ্রুপ অনুযায়ী পড়লে মনে রাখার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। প্রথম অক্ষর ধরে পরপর শব্দ বা বাক্য তৈরি করে মনে রাখা যায়। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। পড়তে পড়তে মনে রাখা যাবে।
এবিপি লাইভ: যাঁরা বিজ্ঞানের ছাত্র তাঁদের ক্ষেত্রে জেনারেল সায়েন্স পড়ার ক্ষেত্রে সুবিধা কী?
সায়ন্তন ঘোষ: সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড যাঁদের থাকে তাঁদের ক্ষেত্রে একটা ওভার কনফিডেন্স কাজ করে। তাঁরা মনে করেন, এগুলো পড়ে এসেছি। ফলে সবটাই পারব। পরীক্ষায় গিয়ে খুব কমন জিনিস পারেনি। জানা জিনিস ভুল করে এসেছে। সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড আছে মানেই আমি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি এই ধারণা নিয়ে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দিতে যায়, তাহলে তার থেকে বড় ভুল কিছু হবে না। ভাল স্টুডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও এই পেপার খারাপ করেছে শুধুমাত্র অভার কনফিডেন্সের জন্য। সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থাক বা না থাক সব অংশই সমান গুরুত্বের সঙ্গে পড়তে হবে। যাঁরা আর্টস নিয়ে পড়ে এসেছেন তাঁদের মধ্যে আড়ষ্টতা কাজ করে। একশো শতাংশের মধ্যে ৭০ শতাংশ মাধ্যমিক বা সমতুল্য স্তরের। বাকিটা অ্যাডভান্স অংশের। যেটা পড়ে এসেছি সেটা থেকে আগে পড়া শুরু করতে হবে। তাতে ভয়টা কেটে যাবে। আমার মতে ধাপে ধাপে পড়া শুরু করতে হবে। আর্টস এবং সায়েন্সের ব্যাকগ্রাউন্ডের যে সেটা অতিক্রম করা যাবে।
এবিপি লাইভ: ইকোলজির সঙ্গে এনভারমেন্ট সায়েন্সের পার্থক্য মনে রাখার উপায় কী?
সায়ন্তন ঘোষ: শুধুমাত্র বায়োলজি এর মধ্যে থাকে না, কিছুটা কেমিস্ট্রির অংশও থাকে। বিশেষ করে দূষণের অংশের ক্ষেত্রে প্রয়োজন। আবার দেশের ভূগোল জানাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশবিদ্যা যে গড়ে উঠেছে সেটা ইকোলজি ঘিরেই আবর্তিত। ইকোলজিকে আলাদাভাবে না দেখে এনভারমেন্টে সায়েন্সের একটা অংশ হিসেবে পড়লে সহজ হবে। বিশেষ কিছু টপিক যেমন দূষণ, দূষণ মাপক বিষয়, এই সংক্রান্ত আইন, বিশ্বের জৈব বৈচিত্র, সংরক্ষণ, আন্তর্জাতিক সম্মেলন দেখে নেওয়া জরুরি।
এবিপি লাইভ: একাধিক বৈজ্ঞানিক নাম থাকে বায়োলজিতে, এই নাম মনে রাখার উপায় কী?
সায়ন্তন ঘোষ: পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন দেখলে দেখা যাবে, খুব বেশি বৈজ্ঞানিক নাম পরীক্ষায় আসেনি। তিন-চারটে জায়গা মূলত এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কোনও রোগের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এরকম ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া নাম মনে রাখতে হবে। মানব সভ্যতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এরকম ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ার নাম পড়তে হবে। WBCS এর মেনসের ক্ষেত্রে গাছের রোগের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এমন জীবাণুর বৈজ্ঞানিক নাম মনে রাখতে হবে। এছাড়া হ্যান্ড বুকে বেশ কিছু নাম থাকে, সেটাও পড়তে হবে।
এবিপি লাইভ: সায়েন্স পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কী সাজেশন দিতে চাইবেন?
সায়ন্তন ঘোষ: কয়েকটি ধাপে ধাপে এগোতে হবে। প্রথমে সায়েন্সের গোটা সিলেবাসটা পড়ে ফেলতে হবে। এরপর পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো দেখে নিতে হবে। প্রথমে কিছু না পড়ে প্রশ্ন দেখতে গেলে একটা ভীতি কাজ করবে। কিন্তু সারাংশটা জানা থাকলে সেটা হবে না। নিজের যে বই ভাল লাগছে, বুঝতে সুবিধা হচ্ছে সেই বই থেকেই পড়া ভাল। কঠিন কঠিন ভাষা পড়ে না বোঝার থেকে, সহজ ভাষায় লেখা এমন বই পড়াই ভাল। চ্যাপ্টার ধরে ধরে পড়তে হবে। পাশাপাশি পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নও সমাধান করতে হবে। একই ধরনের প্রশ্ন না এলেও যাতে প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, তাই এটা সমাধান করা জরুরি। পড়ার অভ্যাস নিয়মিত করলেই সবটাই সহজ হবে।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI