কলকাতা: লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এমন কিছু কিছু বিষয় থাকে যার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয় একেবারে স্কুল স্তরে। এমনকী স্কুল স্তর পেরিয়েও স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরেও সংশ্লিষ্ট বিষয় পড়ার সুযোগ মেলে। যা পড়লে বা জানলে পারিপার্শ্বিক বিষয় সম্পর্কেও ধারনা পেতে পারি। এমনই এক বিষয় হল ভূগোল। WBCS পরীক্ষায় যা অন্যতম একটি বিষয়। এবিপি লাইভে আলোচনার বিষয় WBCS মেনসে ভূগোলের প্রস্তুতি। আলোচনা করলেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ২ দেশপ্রাণ ব্লকের বিডিও শুভজিৎ জানা। 


 


এবিপি লাইভ: ভূগোলের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ম্যাপ পয়েন্টিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ?


শুভজিৎ জানা: WBCS- এ যে সিলেবাস আছে তাতে প্রিলিমসে ২৫ নম্বর থাকে ভূগোলের জন্য। মেনসে থাকে ১০০ নম্বরের প্রশ্ন। আমরা যেভাবেই প্রস্তুতি নিই না কেন অন্তত ৩০ শতাংশ অংশ থাকবে যার সঙ্গে ম্যাপ পয়েন্টিং সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, WBCS পরীক্ষা দেয় ৩ থেকে ৪ লক্ষ জন। কিন্তু আমার প্রতিযোগিতা থাকবে, ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে থাকার। আমি যদি অংশ বাদ দিয়ে পড়ি তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাব। ধরা যাক, গঙ্গা নদীর গতিপথ পড়ব। সেটা পড়তে গিয়ে আমায় জানতে হবে তার গতিপথ। অর্থাৎ মধ্যগতি, নিম্নগতি সহ কোন কোন রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি ম্যাপ দেখে না পড়ি তাহলে এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা স্বচ্ছ হবে না। এখন প্রশ্নের ধরণ অনেক বদলে গিয়েছে, যা ম্যাপের সঙ্গে পড়লেই উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে।


এবিপি লাইভ: ভূগোলের কোন অংশের জন্য কতটা সময় বরাদ্দ করা উচিত?


শুভজিৎ জানা: ধরে নেওয়া হয় যে প্রশ্নপত্র হয় তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের প্রশ্ন থাকে। বাকিটা থাকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে প্রশ্ন। শুধু এটাই নয়। এখন প্রশ্নের ধরণ অনেক বদলে গিয়েছে। যেমন পরিবেশকে এখন ভূগোলে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিছু সাম্প্রতিক বিষয়, আন্দোলন যোগ হচ্ছে ভূগোলের সিলেবাসে। তাই সবটাকে গুরুত্ব দিয়েই রুটিন সাজানো উচিত।


 


এবিপি লাইভ: সাধারণ ভূগোল পড়ার জন্য কি মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের সাহায্য় নেওয়া যেতে পারে?


শুভজিৎ জানা: আমরা যখন প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি তখন মাধ্যমিক স্তরের বইটাই বেসিক হিসেবে ধরে নিই। অর্থাৎ এই বই পড়ার বেসটা তৈরি করে দেবে।  এখন যেটা করতে হয়, তা হল একটা মূল বই বেছে নিতে হবে। সঙ্গে রেফারেন্স হিসেবে দুটো বই পড়া যায়। তাতে প্রশ্নের ধরণ বোঝা যায়। এর পাশাপাশি একাদশ শ্রেণির বইয়ের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে।


 


এবিপি লাইভ: ভূগোলের ঘটনাপ্রবাহ মনে রাখার উপায় কী?


শুভজিৎ জানা: মনে রাখার উপায় বারবার পড়তে হবে। ধরা যাক কোনও একটা রাজ্য ভেঙে আরেকটা রাজ্য হল , তাহলে কোন কোন অংশ অন্তর্ভুক্ত হল তার পাশাপাশি  কোন কোন অংশ নতুন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হল না সেটাও পড়তে হবে। এটাই প্রস্তুতির ধরণ। এর প্রস্তুতির অ্যাপ্রোচ অন্যান্য পরীক্ষার থেকে আলাদা হতে হবে। নিজে অ্যানালাইসিস করলে এটা সম্ভব হবে। 


 


এবিপি লাইভ: সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভূগোলের গুরুত্ব কতটা?


শুভজিৎ জানা: সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় যে বিষয়গুলি রয়েছে তার মধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ভূগোল গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই বেশি যেহেতু প্রিলিমস এবং মেনস দুটোতেই এই বিষয় রয়েছে। প্রিলিমসে ২৫ নম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ নম্বর পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে প্রিলিমস পাশ করতে সুবিধা হয়। মেনসের ক্ষেত্রে নম্বর পাওয়া গেলে সব মিলিয়ে স্কোরটা অনেক বাড়ে। ফলে কোয়ালিফাই করতে সুবিধা হয়।


 


এবিপি লাইভ: পশ্চিমবঙ্গে মধ্যে কোন কোন অংশ গুরুত্বপূর্ণ?


শুভজিৎ জানা: পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, সারা দেশের ভূ-প্রকৃতি সহ নদ-নদীর অবস্থান জানা দরকার। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে শিল্প- শিল্পাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


 


এবিপি লাইভ: ভূগোলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার স্ট্যাটেজি কী হবে?


শুভজিৎ জানা: যাঁরা প্রথমবার পরীক্ষা দিচ্ছে বা আগেও পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশে বলব, আগের বছরের প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করতে হবে। ভূগোল সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই ধারণা আছে। কারণ আমরা ভূগোল মাধ্যমিক স্তরে পড়েছি। পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে প্রায় সব প্রশ্নেরই রিপিটেশন আছে। ভূগোলের যে প্রশ্ন হয় তার মধ্যে  ৩০ শতাংশই থাকে মানচিত্র ভিত্তিক। ৩০ শতাংশ প্রশ্ন প্রায় সবারই পারার মতো।  ম্যাপ নির্ভর বা কনসেপ্ট নির্ভর পড়াশোনা করলে তবেই নম্বর ভাল পাওয়া যাবে। প্রত্যেকেই আগের বছরের প্রশ্ন বা ম্যাপ দেখে পড়াশোনা করছে। এটা করতে গিয়ে নোটস করার সময় দেখা যাবে এমন প্রশ্ন পাওয়া গেল যা বইতেও নেই। এভাবে নিজের উপর কনফিডেন্সও বাড়বে। ব্যক্তিগতভাবে এটা করে আমি নিজে উপকার পেয়েছি।


 


এবিপি লাইভ: বিভিন্ন অংশ পড়ার সময় কেস স্টাডি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?


শুভজিৎ জানা: ধরা যাক আমি কোনও নদীর বিষয়ে পড়ব, সেক্ষেত্রে নদীর উৎপত্তি, নদীর গতিপথ, এলাকা ভিত্তিতে নদীর নাম জানতে হবে। এর পাশাপাশি উৎপত্তি অনুযায়ী নদীর শ্রেণী বিভাজনও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এক বছর অন্তর অন্তর এই সংক্রান্ত প্রশ্ন আসে। চার পাঁচটা নদীর ওয়াটার ক্যাপাসিটির উপর বেস করে রিভার র্যা ঙ্কিং  তৈরি করে নিতে হবে। আবার নদীর ফ্লো বা এলাকার উপর নির্ভর করে একইভাবে র্যা ঙ্কিং  তৈরি করতে হবে। আমি যখন পড়ব তখন নদীর সঙ্গে কোন কোন ড্যাম, রিসার্ভার, মাল্টিপারপাস প্রোজেক্ট রয়েছে তা দেখতে হবে। একাধিক নদীর সংযোগস্থলে কী রয়েছে তাও পড়া প্রয়োজন। কোনও নদীর পার্শ্ববর্তী কোন শহর রয়েছে, নজর দেওয়া প্রয়োজন সেদিকেও। আগে যেটা হত, প্রশ্নের মধ্য়ে কমন পাওয়ার বিষয়টা থাকত। এখন ব্যতিক্রম ঘটনার উপরও নজর দেওয়া হয়। এখন আর কোনও সাজেশন নিয়ে পড়ার দিন নেই। যেটা পড়তে হবে সেটাই খুল ভাল করে, খুঁটিয়ে পড়তে হবে।


 


এবিপি লাইভ: ভূগোলের ক্ষেত্রে উদাহরণের ভূমিকা কী?


শুভজিৎ জানা: উদাহরণ না জানলে বা পড়লে কোনও টপিককে মাথায় রাখতে পারব না। যেমন ফিজিওগ্রাফি জিওগ্রাফির ক্ষেত্রে চারটি পর্বতশ্রেণি পড়ছি।  এটা পড়তে গিয়ে খেয়াল রাখতে হবে উত্তর থেকে দক্ষিণে কার অবস্থান কোথায়। এখন শুধু একটা বিষয়ের উপরই নির্ভর করা হয় না। তিন চারটে বিষয়কে একইসঙ্গে মাথায় রাখতে হয়।


 


এবিপি লাইভ: পরীক্ষার্থীদের জন্য কোনও টিপস দিতে চাইবেন?


শুভজিৎ জানা: সবার আগে দরকার নিজের মানসিক স্থিতাবস্থা। প্রস্তুতির আগে নিজেকে এভাবে তৈরি করতে হবে, আমি কী করতে চলেছি এবং কেন করছি। অনেকেই একসঙ্গে ৫ -৬টা বই কিনে নেয়। সব বই থেকেই একটু একটু করে পড়তে থাকে। প্রথমে পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন দেখে নিতে হবে। পর্যালোচনা করতে যদি এক মাসের জায়গায় তিন মাস যায়, তাতে কোনও অসুবিধা নেই। পর্যালোচনা করে যদি বোঝা যায় আমাকে এই জায়গাগুলি বুঝতে হবে, তখন তার জন্য প্রস্তুতির পথটা অনেক সহজ হবে। কিন্তু কেউ যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সিলেবাস শেষ করব মনে করে, সেই ধারণা একদম ভুল। স্ট্যাটেজি মানে সিলেবাস ওরিয়েন্ট কমপ্যাক্ট একটা প্রস্তুতি। তার জন্য পূর্ববর্তী বছরের সিলেবাস জানা দরকার। আর ম্যাপের উপর নির্ভর করে কেউ যদি প্রস্তুতি নেয়, আমি বলতে পারি তাতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সঠিক উত্তর দেওয়া যাবে।


আরও পড়ুন: WBCS Exam Preparation: WBCS পরীক্ষায় লক্ষ্য়ভেদ! ভয় নয় গল্পের ছলেই পড়া শুরু হোক ইতিহাস


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI