অর্ণব মুখোপাধ্য়ায় ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা: লোকসভা ভোটে বিরোধীদের কার্যত ধূলিসাৎ করে বাংলায় ফের সবুজ-ঝড় বইয়ে দিয়েছে তৃণমূল। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের ধাক্কা সামলে আসন সংখ্যা বেড়ে এবার ঘাসফুল ফুটেছে ২৯টি আসনে। গতবারের হারা আসন পুনরুদ্ধার হয়েছে। বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে সেই আসন এই প্রথম তৃণমূলের দখলে এসেছে। প্রাপ্ত ভোট শতাংশও অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু 'পদ্ম কাঁটা' যে এখনও বিঁধে রয়েছে তা টের পাওয়া গিয়েছে ভোটের পর্যালোচনার পরেই। তৃণমূলের এই বিপুল জয়ের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা যেমন আলোচনায় উঠে এসেছে, তেমনই আবার ১০০ দিনের প্রকল্পে টাকা আটকে যাওয়া নিয়ে তৃণমূলের প্রচারে গ্রামীণ জনতা ভরসা করেছে বলেও মনে করা হয়েছে। তাই গ্রামীণ এলাকায় ঝুলি উপুর করে ভোট পেতে পারে তৃণমূল। কিন্তু শহর এলাকায় একেবারে অন্য ছবি।


এবার ১৮ থেকে ১২-য় নেমে গেছে পদ্ম শিবির। এসবের মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, লোকসভার ফল ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুরসভায় কিন্তু বড়সড় থাবা বসিয়েছে বিজেপি। ১৪৪ ওয়ার্ড বিশিষ্ট কলকাতা পুরসভায় বছর দুয়েক আগে পুরভোটে যেখানে মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে জিতেছিল বিজেপি, সেখানে এবার লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ৪৫টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তারা। উল্টোদিকে, ২০২২-এ কলকাতা পুরসভায় ১৩৪টি ওয়ার্ডে জিতেছিল তৃণমূল এবার তাদের লিডের সংখ্যা কমে হয়েছে ৯৮। 


কলকাতার ২টি লোকসভা আসন। সেখানে তৃণমূল জিতলেও বহু ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। একাধিক হেভিওয়েট কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। তৃণমূল বিধায়ক, দক্ষিণ কলকাতার জেলা সভাপতি ও মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার- তাঁর ওয়ার্ড ৮৫। সেখানে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন শশী পাঁজার নিজের ওয়ার্ড এবং তাঁর মেয়ে পূজা পাঁজার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও পিছিয়ে তৃণমূল। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ও মেয়র পরিষদ অসীম কুমার বসুর ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। একই ছবি ৭২ নম্বরের তৃণমূল কাউন্সিলর ও মেয়র পরিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সীর ওয়ার্ডেও। এছাড়াও তৃণমূলের হেভিওয়েট কাউন্সিলর ও বরো চেয়ারপার্সন জুঁই বিশ্বাস, সুশান্ত ঘোষ, সুদীপ পোল্লে,  সাধনা বসু, সুস্মিতা ভট্টাচার্যের ওয়ার্ডে তৃণমূলের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তৃণমূল কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডেও ফুটেছে পদ্ম। তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে-র ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডেও এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। 


অন্যদিকে উত্তর কলকাতার কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও তৃণমূল কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য়ে আসে। সেখানেও লোকসভা ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে এগিয়ে গেছে বিজেপি। 


রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেন, 'তৃণমূল কাউন্সিলরদের বেশিরভাগই তোলাবাজ, তাঁদের সাধারণ মানুষ পছন্দ করেন না। শহুরে মানুষ যাঁরা বিশ্বের, ভারতের খবর বেশি রাখেন। অর্থনৈতিকভাবে যাঁরা গ্রাম্য মানুষ থেকে একটু এগিয়ে, যাঁদের ৫০০-১০০০-এ কেনা যায় না। শহরাঞ্চলে-শহরতলি এলাকায় দেখুন বিজেপির ভোট বেশি হয়।'


সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, 'লোকসভার ভোট পুরভোটের ইস্যুতে হয়নি। পুরভোট যখন আসবে তখন সেটা পুরসভার ইস্যুতে হবে। এত ভোটলুঠের পরে বরানগরে ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম। সেটা আমরা ধরে রাখতে পারলাম না কেন?'


অন্য ছবিও রয়েছে। বামেদের হাতে থাকা কলকাতা পুরসভার ১০৩ ও ৯২ নম্বর ওয়ার্ডে এবার এগিয়ে গেছে তৃণমূল। তৃণমূল কাউন্সিলর ও রাজ্য মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। 


সূত্রের খবর, শনিবারই কালীঘাটে বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী জানান বহুতলগুলিতে তৃণমূলের ভোট কমেছে। বিধানসভায় এর বদল হবে বলে তিনি মনে করেন- এমনটাই জানিয়েছেন। এদিকে বাড়তি নজর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।


আরও পড়ুন: 'আমার বাড়িতে হামলা, আমাকেই গ্রেফতার' ! বোমা মারার অভিযোগে প্রতিবাদে গিয়ে ধৃত BJP নেতা


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।