কাঁথি: দক্ষিণ কাঁথির জনসভায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ধমক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে তাঁর নিশানায় ছিলেন প্রার্থী অখিল গিরি। তাঁকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমি এত অসুস্থ শরীরে চিৎকার করতে পারছি, তোমরা পারছো না? অখিলের কি গলায় ব্যাথা? স্লোগান না দিলে মঞ্চে উঠতে দেব না।’
আজই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন কাঁথির অধিকারী পরিবারের প্রবীণতম সদস্য শিশির অধিকারী। একসঙ্গে শিশির-শুভেন্দু-সৌমেন্দুকে আক্রমণ করে মমতা বলেছেন, ‘কারা এল গেল যায় আসে না। এদের ভালবেসেছিলাম, আজ সেই গদ্দার, মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতকের দল বিজেপিকে হাত ধরে নিয়ে এসেছে। বলছে, ২০১৪ থেকে সম্পর্ক ছিল। এদের হাত থেকে মেদিনীপুরকে মুক্ত করতে হবে। গদ্দারদের অনেক টাকা। আমি একটা বড় গাধা, আমি বুঝতে পারিনি এরা এত টাকা করেছে, সেই টাকায় এরা গুন্ডা পোষে। ভোটের আগে ৫০০ টাকা দেয়। টাকা নিয়ে ভোট দেবেন না।’
উত্তর কাঁথির জনসভাতেও অধিকারী পরিবার ও বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে আসতে গেলে পারমিশন নিতে হত, কত বড় নেতা না ন্যাতা। কাঁথি, দিঘা, এগরায় আসতে গেলে অনুমতি নিতে হবে! গল্প করেছিলাম, আমরা এখানে একটা ছোট্ট বাড়ি করব। ছেলেটা শুনল তিনদিন, পালিয়ে গেল। নন্দীগ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। হলদি নদীর তীরে ছোট্ট পারমানেন্ট বাড়ি করব। এবার দেখব কার পারমিশন নিতে হয়? অনেক সম্মান করতাম। আমি মানুষকে অন্ধবিশ্বাস করি, তাই আমাকে ঠকতে হয়। বিশ্বাসঘাতকদের মুখোশ খুলে যায়। আমার মুখোশ নেই, তাই খোলে না।’
আরও পড়ুন ছবিতে আমার মাথায় লাথি মারছেন মমতা, বাংলার উন্নয়নকে লাথি মারতে দেব না’
তৃণমূল নেত্রী এদিন আরও বলেন, ‘প্রার্থী যেই হোক, সরকার আমার হবে। আমি একটাকাও মাইনে নিই না। আমি চাকর-বাকরের মতো কাজ করি। সার্কিট হাউসে ভাড়া দিই। ৭ বার এমপি ছিলাম, এক পয়সা নিই না। আমি বই, গান লিখি, ক্যাসিও বাজাই, সেই টাকাও নিই না। আমার কীসে লাগবে? একা মানুষ, কো অপারেটিভ ব্যাঙ্কে হাত সরিয়ে রাখব কেন? আমার বাড়ির বৌয়েরা খুব ভাল। পেতলের চুড়ি, শাড়ি আনলে খুশি হয়। বাড়তি কোনও চাহিদা নেই। আমার মা বলে দিয়েছে, তুমি জনগণের, তুমি সবার। আমার ১০ বছরে বাবা মারা যায়। মা বলত বাবাকে, তুমি তো ছেলে মেয়ের জন্য কিছু রাখলে না। বাবা বলত, ছেলে মেয়েদের ভাল করে মানুষ করে দাও, ওরাই টাকা করবে, দেশকে গর্বিত করবে। কবে রবীন্দ্র, নজরুল প্রেমী হয়ে গেছি জানি না। আজ ওরা আমাদের কী শেখাবে? ১৫-২০টা গাড়ি নিয়ে চলে, যেন কেউ মেরে ফেলবে! আমার গাড়ির পেছনে দুটো গাড়ি, প্যাঁ প্যাঁ করি না। ওরা ২০০ বছর করে বাঁচুক, সেটাই চাই। আমার সঙ্গে গদ্দারি করেছো। নরেন্দ্র মোদির মতো বড় ডাকাত কোথাও আছে? সিঙ্ঘুতে কৃষকরা আন্দোলন করছে। কৃষকরা নন্দীগ্রামে এসেছিল আমাদের সমর্থন দিতে। গ্রাম আটকে ক্যাম্প করে দিতে চাইছে বহিরাগত গুন্ডারা, যাতে কেউ ভোট দিতে না পারে। ভোট হলে, পুলিশ বলবে বাড়ি যাও। কিন্তু দলের ছেলেমেয়েদেরই পাহারা দিতে হবে। ভোট মেশিনে পাহারা না দিলে সব গেল। সব জায়গায় মেরে একে পারা যায় নি, এরা আমায় চেনে না। আমি ভাঙি তবু মচকাই না। কাল নরেন্দ্র মোদি বলেছে, বাঙালির ডিএনএ টেস্ট করে দেখতে হবে। বাঙালির ডিএনএতে নাকি বিজেপি আছে। একপায়ে এমন শট মারব না, একেবারে বোল্ড আউট হয়ে যাবে। প্লিজ মা বোনেরা এই নির্বাচনটা একটু দেখে দেবেন।’