নয়াদিল্লি: গেরুয়া শিবিরের হাত ধরেই হাতেখড়ি রাজনীতিতে। কালেক্রমে এসে পৌঁছেছেন কংগ্রেসে। পূর্বাঞ্চলের ‘বাহুবলী’ অজয় রাইয়ের কাঁধেই আরও একবার গুরুদায়িত্ব তুলে দিল কংগ্রেস। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে অজয়কে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। অর্থাৎ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন অজয়। আগে বারাণসীতে দু’-দু’বার মোদির কাছে পরাজিত হন তিনি। তবে এবার অজয়ের ভূমিহার পরিচয়কে সামনে রেখে আরও একবার তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাল কংগ্রেস। (Ajai Rai in Varanasi)


শনিবার লোকসভা নির্বাচনের জন্য চতুর্থ প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস, তাতেই বারাণসী থেকে প্রার্থী করা হয়েছে অজয়কে। হিন্দি বলয়ের রাজনীতিতে পূর্বাঞ্চলের (উত্তরপ্রদেশের পূর্ব অংশ) ‘বাহুবলী’ হিসেবেই পরিচিত তিনি।  এর আগেও বারাণসীতে দু’-দু’বার মোদির বিরুদ্ধে প্রার্থী হন, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে। দু’বারই বিরাট ব্যবধানে তাঁকে পরাজিত করেন মোদি। দু’বারই তৃতীয় স্থানে ছিলেন অজয়। তার পরও আরও একবার অজয়কেই মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামাল কংগ্রেস। (Lok Sabha Elections 2024)


আগের দু’বার পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও অজয়কে বারাণসী থেকে প্রার্থী করার নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। কংগ্রেস সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশে দলের সংগঠনের দিকটি দেখছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। সেখানে একাধিক বিষয়ে দলের দলিত নেতা ব্রিজলাল খবরির সঙ্গে মতভেদ ঘটে প্রিয়ঙ্কার, যে কারণে ব্রিজলালকে সরিয়ে গতবছর অগাস্টে অজয়কেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। উত্তরপ্রদেশের তৃণমূল স্তরের মানুষের মনে কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে সেই থেকে কাজ করছিলেন অজয়। সেই কারণেই বারাণসীতে তৃতীয় বারের জন্য তাঁকে মোদির বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর।


আরও পড়ুন: I.N.D.I.A Alliance: লোকসভা নির্বাচনের আগে পথে নামছে I.N.D.I.A, কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির প্রতিবাদে ‘মহামিছিল’


অজয়কে প্রার্থী করা নিয়ে আরও যে একটি কারণ উঠে আসছে, তা হল, বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের হাত ধরে রাজনীতিতে অভিষেক অজয়ের। বিজেপি-র টিকিটে তিন তিন বার কোলাসলা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি, ১৯৯৬, ২০০২ এবং ২০০৭ সালে। ২০১৯ সালে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন অজয়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র মুরলি মনোহর জোশীর কাছে পরাজিত হন। ২০১২ সালে কংগ্রেসের হাত ধরেন অজয়। সেবার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীকে পরাজিত করেন। কিন্তু ২০১৭ এবং ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আবার পরাজিত হন।


নির্বাচনী রাজনীতিতে অজয়ের যা রেকর্ড, তাতে মোদির বিরুদ্ধে তিনি আদৌ যোগ্য প্রার্থী কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসের অন্দর থেকেই। কিন্তু দলের তরফে অজয়ের ভূমিহার পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জমির মালিকানার নিরিখে উত্থান ভূমিহার সম্প্রদায়ের। উত্তরপ্রদেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ ভূমিহার সম্প্রদায়ের মানুষ। ব্রাহ্মণ এবং রাজপুতের পরই সমাজে স্থান এই ভূমিহারদের। দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সঙ্গে ভূমিহারদের দহরম মহরম রয়েছে।


পূর্বাঞ্চলের রাজনীতিতে তিনটি আসনে ভূমিহারদের প্রভাব রয়েছে বেশ, ঘোসী, গাজিপুর এবং বারাণসী। এখনও পর্যন্ত ওই তিন কেন্দ্র থেকে ভূমিহার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ১৯ বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বালিয়া, গাজিপুর, ঘোসী এবং বারাণসীতে ভূমিহার সম্প্রদায়ের মানুষই মোটামুটি নির্বাচনী ফলাফল ঠিক করে দেন। সব মিলিয়ে সেখানে ভূমিহার ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। বারাণসীর দুই প্রাক্তন সাংসদ রঘুনাথ সিংহ এবং সত্যনারায়ণ সিংহ ভূমিহার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁরা দু’জনই ছিলেন কংগ্রেসের।


কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বারাণসীতে বিজেপি-র আধিপত্য। যদিও সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব না থাকা নিয়ে বিজেপি-র উপর ক্ষুব্ধ ভূমিহারদের একাংশ।  সম্প্রতি রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক পদ থেকে ভূমিহার সম্প্রদায়ের প্রতিবিধি অশ্বিনী ত্যাগীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অজয়কে প্রার্থী করার নেপথ্যে এই ভূমিহার ভোটের সমীকরণকে কংগ্রেস প্রাধান্য দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতি মহল। তবে তৃতীয় বার লড়াই নেমে মোদির বিরুদ্ধে আদৌ সফল হন কি না অজয়, ফলাফল বেরোলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।