আমদাবাদ: প্রায় তিন দশক ধরে গুজরাতে একচেটিয়া আধিপত্য তাদের। গোটা দেশে 'গুজরাত মডেলে'র (Gujarat Assembly Election Result 2022) স্বপ্ন ফেরি করেছেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তার  পরেও কংগ্রেসের রেকর্ড ছোঁয়া হয়নি বিজেপি-র (BJP)। ২০০২ সালে দাঙ্গার পরেও গুজরাত বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে আসে বিজেপি। কিন্তু ১৯৮৫ সালে গুজরাতের তৎকালীন কংগ্রেস (Congress) সরকারের রেকর্ড আজও অধরা। 


দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে গুজরাতে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি


প্রথম বার ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০-এর মার্চ, দ্বিতীয় বার ১৯৮০-র জুন থেকে ১৯৮৫-র জুলাই, ১৯৭৬-র ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৭-এর এপ্রিল-মোট দফায় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের মাধবসিংহ সোলাঙ্কি (Madhavsinh Solank)। ১৯৮৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১৮৩ আসনের বিধানসভায় ১৪৯ আসন জিতে তাঁর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। 


নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি-র সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা পর্যন্ত মাধব সিংহের ওই রেকর্ড ছুঁতে পারেননি। বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিহত করতে ক্ষত্রিয়-হরিজন-আদিবাসী-মুসলিম সমন্বয়ের (খাম) ভাবনা বাস্তবায়িত করেন মাধবসিংহ। কিন্তু তাতে পাটিদাররা কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে পড়ে। 


এর পর, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বিজেপি-কেও। শঙ্করসিং বাঘেলার মতো বিদ্রোহী নেতাদের আসা-যাওয়াও তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বরং যত সময় এগিয়েছে, বিজেপি-র পক্ষে হিন্দু ভোটের পাল্লা ততই ভারী হয়েছে। শুধু উচ্চবর্গ বা ব্যবসায়ীদের নয়, নিম্নবর্গের, তৃণমূলস্তরের হিন্দু ভোটকেও নিজেদের সমর্থনে আনতে সফল হয় বিজেপি। 


আরও পড়ুন: Gujarat Election 2022: ভবিষ্যতের নিরাপত্তা বিজেপি-র কাছেই, বললেন গুজরাতে দলের প্রার্থী হার্দিক


তবে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি গুজরাত ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হলে, রাশ খানিকটা আলগা হয়। তাতেই ২০১৭ সালে বিজেপি-কে সমানে সমানে চক্কর দিয়ে সকলকে কার্যত চমকে দেয় কংগ্রেস। কিন্তু তার পর আহমেদ পটেলের মৃত্যু, সাংগঠনিক দুর্বলতা ফের ব্যাকফুটে নিয়ে চলে যায় কংগ্রেসকে। হাত প্রতীকে জয়ী হয়েও, দলে দলে নেতারা বিজেপি-তে গিয়ে ওঠেন। অশোক গহলৌত পাটিদার আন্দোলনে হাতিয়ার করার চেষ্টা করেছিলেন বটে। হার্দিক পটেল, অল্পেশ ঠাকুরের মতো তরুণ নেতাদের কংগ্রেসে নিয়ে আসেন। এ বছর বিজেপি-র প্রতীকেই বিধানসভা নির্বাচনে লড়ছেন তাঁরা। পটেলদের বিক্ষোভ সামাল দিতে অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসরদের জন্য পৃথক সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়। 


এর মধ্যে বিজয় রুপাণিকে আচমকা মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানো হয়। শুরুতে উন্নয়নকে সামনে রেখেই প্রচার শুরু করে বিজেপি। কিন্তু নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসতে থাকে, ততই বরাবরের মতো তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। উঠে আসে গোধরা, ২০০২ সালের দাঙ্গার প্রসঙ্গও। ভারতীয় রাজনীতিতে সোশ্য়াল মিডিয়ার  সদ্ব্যবহার বিজেপি-র হাত দিয়েই শুরু। গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ৫০ হাজার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়। বার্তা পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োগ করে বিজেপি। 


আজও কংগ্রেসের একটি রেকর্ড ছুঁতে পারেনি বিজেপি


এত দিন গুজরাতে বিজেপি এবং কংগ্রেস পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এ বছর নয়া চরিত্র হিসেবে প্রবেশ ঘটেছে আম আদমি পার্টির। বিজেপি-বিরোধীদের দাবি, প্রকাশ্যে বিজেপি-র বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চাইলেও, আসলে বিজেপি-র হয়ে কংগ্রেসের ভোটে ভআগ বসানোই লক্ষ্য আপের। তাই যদি হয়, তাহলে এ বার বিজেপি মাধবসিংহের রেকর্ড ছুঁতে পারে কিনা, সেদিকে নজর সকলের।