কলকাতা: 'দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি', সম্প্রতি INDIA জোটের এমনটাই সংজ্ঞা বুঝিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi)। বলাইবাহুল্য মমতা-অধীরের মধ্যে প্রায় তিন দশকের তিক্ততা, আজও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। তাই জাতীয় স্তরে জোট সঙ্গী হলেও, আজও বাংলায় একলা চলার নীতিই নিয়ে এগোচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। আর লোকসভা ভোটের মাঝে এই সবকিছুর জন্য অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেই দায়ি করেছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। খাড়গে বলেছেন, 'অধীররঞ্জন চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন।' সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি নিজে আছেন, দল আছে ,  হাইকমান্ড আছে। অর্থাৎ  দলের সিদ্ধান্ত না পোষালে, অধীর বেরিয়ে যেতে পারেন।  খাড়গের এমন ধারার মন্তব্যে চুপ বসে নেই অধীরও। ম্যানগ্রোভের মতোই শিকড় ছড়িয়ে নিজের জায়গায় অটুট অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। কী বললেন তিনি ?


মূল বিষয়টা কী ? কেন অধীরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন খাড়গে ?


এবার মূল বিষয়ে আসা যাক। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের বছরে, জাতীয় স্তরে গড়ে ওঠে বিরোধী জোট I.N.D.I.A যেখানে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সামিল বামেরাও। একাধিক বৈঠকে প্রায় সবদলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সমস্যা বাংলায়। বাংলায় আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। বিধানসভায় শূন্যে পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও, বাংলায় কংগ্রেস অন্যায়ভাবে অধিক আসনের দাবি জানিয়েছেন, বলে অভিযোগ তাঁদের। এরপরেই বাংলায় কংগ্রেস সঙ্গে না থেকে একা লড়াইয়ের কথা জানান তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মমতাকে বলতে শোনা যায়,' INDIA জোটকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সবরকম সাহায্য করে আমরা সরকার গঠন করে দেব যাতে বাংলায় আমার মা বোনেদের কোনওদিন অসুবিধা না হয়।' এরপরই রাজনৈতিকমহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।  


 কী বলেছিলেন মমতা ? কেন অধীরকে হুঁশিয়ারি দিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ?


বিতর্ক জোরালো হতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বলেন, 'সর্বভারতীয় স্তরে অনেকে আমাকে ভুল বুঝেছে। সর্বভারতীয় স্তরে INDIA জোট আমি তৈরি করেছিলাম এবং INDIA জোটে আমরা থাকব।'আর এরপরেই আর চুপ বসে থাকতে পারেননি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি। মমতার পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সোজা কট্টর মমতা বিরোধী অধীর হুঁশিয়ারিই দিয়ে বসেছেন খাড়গে। খাড়গে স্পষ্ট জানিয়েছেন,' অধীররঞ্জন চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমি আছি, কংগ্রেস দল আছে, হাইকমান্ড আছে। তাই আমরা যেটা ঠিক করব সেটাই সঠিক। আমরা যা সিদ্ধান্ত নেব সেটা মেনে চলবেন। যদি কেউ না মানেন, তাহলে তিনি বাইরে যাবেন।' 


খাড়গের পাল্টা এবার অধীর


পাল্টা কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী স্পষ্ট বলেছেন, 'আমার বিরোধিতা নৈতিক বিরোধিতা। কংগ্রেসকে কেউ খতম করবে, আমি তাঁকে খাতির করব, তাতো হতে পারে না। আমার বিরোধিতার মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। আমার বিরোধীতা নৈতিক বিরোধীতা। আমার বিরোধীতা,পশ্চিমবঙ্গে দলকে রক্ষা করার জন্য লড়াই। এটা আমি কোনওভাবেই থামাতে পারি না, কারণ আমি দলের একজন যোদ্ধা।'


আরও পড়ুন, দিদি যদি আমাদের দুঃখটা দেখতেন, তাহলে দিদির সঙ্গেই থাকতাম : সন্দেশখালির BJP নেত্রী মাম্পি দাস


মূলত অধীর ও মমতার এই তিক্ততা প্রায় তিন দশকের। ১৯৯৬ সালে মমতা আর্জি জানিয়েছিলেন যে, বিধানসভায় যেনও অধীরকে প্রার্থী করা না হয়। তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতার সেই প্রতিবাদ, আজও দুজনের মাঝের বরফ গলায়নি। মাঝে বরং একাধিক ইস্যু সংযোজন হয়েছে। সম্পর্কের উত্তরণ তো হয়নি, বরং অবনতিই হয়েছে। সেই তিক্ততার ছায়া থেকে বাদ গেল না চব্বিশের ভোটও। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।