কলকাতা: চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election 2024)। এরাজ্যে মোট সাত দফায় হবে নির্বাচন। যার মধ্যে তৃতীয় দফা অর্থাৎ ৭ মে ভোট রয়েছে মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে (Malda Uttar)। এবছর এই কেন্দ্রের তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন প্রাক্তন IPS অফিসার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি প্রার্থী করেছে খগেন মুর্মুকে। মালদা উত্তর থেকে আইএসএফ প্রার্থী মহম্মদ সোহেল, মালদা উত্তরে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলম।

বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে কে কোথায়?

২০০৯-এ আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে মালদহ লোকসভা কেন্দ্র ভেঙে তৈরি হয় মালদা উত্তর এবং মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র। মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতিপুর, রতুয়া, হবিবপুর, গাজোল এবং মালদহ। এর মধ্যে ২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতিপুর,রতুয়া এই কেন্দ্রগুলিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বাকি তিন অর্থাৎ হবিবপুর, গাজোল এবং মালদহে ফুটেছিল পদ্মফুল।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফল
বিধানসভা নাম বিধায়কের নাম রাজনৈতিক দল
হবিবপুর(ST) জোয়েল মুর্মু বিজেপি
গাজোল (SC) চিন্ময় দেব বর্মন বিজেপি
চাঁচল নিহার রঞ্জন ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেস
হরিশচন্দ্রপুর তাজমুল হোসেন তৃণমূল কংগ্রেস
মালতিপুর আব্দুর হামির বক্সি তৃণমূল কংগ্রেস
রতুয়া সমর মুখোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস
মালদহ (SC) গোপাল চন্দ্র সাহা বিজেপি

লোকসভা কেন্দ্রের সামগ্রিক ছবি: এই লোকসভা কেন্দ্রে সাক্ষরতার হার ৫২,৩১ শতাংশ। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ২৩.৮ শতাংশ তফশিলি জাতির ভোটার, ১০.৩ শতাংশ তফশিলি উপজাতির ভোটার রয়েছে। সংখ্যালঘু ভোটারের শতকরা হার ৪৫ শতাংশ। গ্রামীণ ভোটারের হার মোট জনসংখ্যার ৯৩.৭ শতাংশ। শহরের থাকেন এমন ভোটারের হার ৬.৩ শতাংশ। ২০১৯ সাল অর্থাৎ এর আগের লোকসভা ভোটের নিরিখে মালদা উত্তরের মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৯৭। মোট বুথের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭১৩।

ফিরে দেখা: এক সময় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির গড় হিসেবে পরিচিত মালদা। বিশেষত মালদার উত্তরাংশে ছিল কংগ্রেসের এই দাপুটে নেতার রমরমা। কিন্তু অসুস্থতার পর থেকে সেই ছবি কিছুটা বদলে যেতে শুরু করে। ২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর মালদা উত্তরের থেকে কংগ্রেস প্রার্থী করে প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর ভাগ্নি মৌসম বেনজির নুরকে। পরপর দুই লোকসভা নির্বাচন অর্থাৎ ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে তিনিই কংগ্রেসের টিকিটে জিতে সাংসদ হন। কিন্তু জেতা আসন ২০১৯ সালে ‘হাত’ ছাড়া হয়। তৃণমূলে যোগ দেন মৌসম বেনজির নুর। তৃণমূলের টিকিটে লড়েও জিততে পারেননি। ওই কেন্দ্রে ফোটে পদ্মফুল। ২০১৯ সালে জেতেন বিজেপির খগেন মুর্মু। চিরকাল কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত মালদা লোকসভা কেন্দ্রে এবারও ভরসা সেই খগেন মুর্মু। আর এবার মৌসমের উপর আর 'আস্থা' রাখতে পারেনি তৃণমূল। প্রার্থী করল প্রাক্তন IPS অফিসার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। 

শেষ তিন লোকসভা নির্বাচনে জয়ী কারা?

২০০৯ মৌসম বেনজির নুর কংগ্রেস
২০১৪ মৌসম বেনজির নুর কংগ্রেস
২০১৯ খগেন মুর্মু বিজেপি

 

শেষ লোকসভা নির্বাচনের ফল কোন দলের কেমন ছিল?

২০১৯ এর লোকসভা ভোটে, মালদা উত্তর থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছিলেন প্রায় ৮০ হাজার ভোটে। গত লোকসভা নির্বাচনে খগেন মুর্মুর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ৭ হাজার ৭৯৮, মৌসম পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৫১৭। ওই বছর কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করেন ইশা খান চৌধুরী। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ লক্ষ ৪ হাজার ৯৬৪। সিপিএমের বিশ্বনাথ ঘোষ পেয়েছিলেন ৫০ হাজার ৩১৫ ভোট। বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৭.৮ শতাংশ, তৃণমূল পায় ৩১.৬ শতাংশ ভোট। বাকি দুই দল কংগ্রেস ও সিপিএমের শতকরা হিসেবে প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ২২.৭ এবং ৩.৭ শতাংশ।

 

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল
প্রার্থী
রাজনৈতিক দল
ভোট
শতকরা হার
খগেন মুর্মু
বিজেপি
৫০৭৭৯৮
৩৭.৮
মৌসম বেনজির নুর
তৃণমূল কংগ্রেস
৪২৪৫১৭
৩১.৬
ইশা খান চৌধুরী
কংগ্রেস
৩০৪৯৬৪
২২.৭
বিশ্বনাথ ঘোষ
সিপিএম
৫০৩১৫
৩.৭

মালদা উত্তরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ছিল চতুর্মুখী। আসন সমঝোতা নিয়ে জট প্রথম দিকে থাকলেও পরে তা কেটে যায়। বিজেপি, তৃণমূল নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি প্রার্থী ঘোষণা করেছে কংগ্রেস এবং আইএসএফও। বামেদের সমর্থন নিয়েই প্রার্থী ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি জোট নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বামেদের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে কংগ্রেসকে ভিলেন বলেও কটাক্ষ করেছেন। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ISF একাই লড়বে। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে বাম, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার কথা শোনা গেলেও সেই সমঝোতা হচ্ছে না লোকসভা নির্বাচনে।

ক্ষোভের পাহাড়: মৌসম বেনজির নুর একসময় মালদায় তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী ছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ। সেই মৌসমকে এবার টিকিট দেয়নি তৃণমূল। বিজেপিকে হারানো নিয়ে তিনি আশাবাদী ছিলেন বলেও দাবি করেছেন। টিকিট না পাওয়ায় মুখ খুলেছেন মৌসম বেনজির নুর। ১৯-এর লোকসভা ভোটে একই পরিবার থেকে ২ জন প্রার্থী হওয়ায়, ভোট ভাগাভাগিতে হেরে যান বলে দাবি তাঁর। মালদা উত্তরের দুবারের সাংসদ বলেন, "প্রত্যাশা তো ছিলই। জেলা সভাপতি ছিলাম এবং দু'বারের সাংসদও ছিলাম মালদা জেলায়। উত্তর মালদার সাংসদ ছিলাম আমি। যেহেতু শেষবার ২০১৯-এ আমি হেরেছিলাম বিজেপির কাছে এবং যেহেতু এই পরিবার থেকেই দু'জন প্রার্থী হয়েছিল, তো ভোট ভাগাভাগি হয়েছি। সেই কারণেই আমি হেরেছিলাম। তো অবশ্যই তখনই আমি একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম যে পরবর্তী সময়ে আগামীদিনে, আমি যদি সুযোগ পাই তো এই আসনটা আমি পুনরুদ্ধার করব। আমি তৃণমূলে গিয়েছিলাম, বিজেপিকে হারানোর জন্য। একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল যে ২০২৪-এ দল আমাকে সুযোগ দেবে এবং আমি আসনটা পুনরুদ্ধার করব। যাইহোক দল আমাকে সুযোগটা দেয়নি।'' যদিও ক্ষোভের কথা বলার পরই মৌসম বেনজির নুরকে দেখা যায় মালদা দক্ষিণের প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হানের হয়ে প্রচার করতে।

হুঁশিয়ারির সুর: গত ১০ মার্চ ব্রিগেডে জনগর্জন সভা থেকে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে তৃণমূল। চমক দিয়ে মালদা উত্তর থেকে প্রার্থী করা হয় অবসরপ্রাপ্ত IPS অফিসার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর প্রচারে নেমে কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁর মন্তব্যে তীব্র বিতর্কও তৈরি হয়। তিনি বলেন, "নির্বাচন সদনকে বসিয়ে রাখতে হবে এখানে। এই স্কুলেই। ভাল করে জল-টল মা-বোনেরা আপনারা দিয়ে দেবেন। ওঁদেরকে অযত্ন করবেন না। ওঁরাও চাকরি টাকরি করে। কোনও অযত্ন করবেন না। শুধু বলবেন প্রসূন ব্যানার্জি খেলতে এসেছে।নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হোক।''     

তথ্যসূত্র: চাণক্য

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।   

আরও পড়ুন: Cooch Behar Lok Sabha Constituency : নিশীথে কি এবারও ফুটবে 'পদ্ম', নাকি প্রত্যাবর্তন জোড়া ফুলের ? কী সমীকরণ কোচবিহারে ?