কলকাতা: সন্দেশখালি (Sandeshkhali) থেকে দুর্নীতি (Scam)। বাংলার ভোটে বিরোধীদের সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল মূলত এই দুটোই। কিন্তু এসবের কোনও কিছুই লোকসভা ভোটে প্রভাব ফেলল না। সন্দেশখালি বিধানসভা যে কেন্দ্রের মধ্যে, সেই বসিরহাটে (Basirhat) বিপুল জয়ের মুখ দেখল তৃণমূল। 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বলেছেন, 'মা দুর্গার সত্যিকারের পূজারী রেখা পাত্র। বাংলায় শাহজাহান শেখের মতো অত্যাচারীদের সাহস বেড়ে গিয়েছিল। এদের সাহস যাতে আর না বাড়ে, সেই জন্য রেখা পাত্রকে জয়ী করা জরুরি।' ED-র উপর হামলা, শেখ শাহজাহানদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন অত্যাচারের অভিযোগ, রাস্তায় নেমে মহিলাদের আন্দোলন। চাপের মুখে শেখ শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের গ্রেফতারি। 


লোকসভা ভোটের মুখে মুখে, বিজেপিকে কার্যত অক্সিজেন জুগিয়েছিল সন্দেশখালি। কিন্তু ভোটে মোদি-অমিত শাহর দলকে খালি হাতেই ফেরাল 'সন্দেশখালি' ইস্যু। সন্দেশখালি যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেই বসিরহাট কেন্দ্রে, ২ লক্ষের বেশি ভোটে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম। পরাজিত হলেন বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র।


যদিও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, 'যে সন্দেশখালি নিয়ে এত অপপ্রচার, কুৎসা, আমরা সেখানেও জিতেছি।' সন্দেশখালির আন্দোলনকে হাতিয়ার করতে সন্দেশখালির প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্রকে। প্রার্থী করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। 


কিন্তু রেখা পাত্রকে সংসদে পাঠাল না বসিরহাট। বসিরহাট আস্থা রাখল তৃণমূলেই। বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত ৬টি বিধানসভাতেই এগিয়ে রইল তৃণমূল, শুধু সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৮ হাজার ভোটে এগিয়ে রইল বিজেপি।


সন্দেশখালি উত্তপ্ত হয়েছিল শাহজাহানের কীর্তিকলাপের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। ওয়াকিবহাল মহলের মত শাহজাহানের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, তার শাগরেদ শিবু-উত্তমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে নিয়েই শাসক বিরোধী লড়াই শুরু করেছিল বিজেপি। লোকসভা নির্বাচন শুরুর আগে থেকে সপ্তম দফা ভোটের পরও জারি ছিল অশান্তি। দফায় দফায় উত্তেজনা যেমন ছড়ায় তেমন একাধিক 'ভাইরাল ভিডিও'ও প্রকাশ্যে আসে। 


ভাইরাল ভিডিও-১ 


শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ-গ্রেফতারির মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছিল সন্দেশখালি ২-এর মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের ভাইরাল ভিডিও। সন্দেশখালির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের ভিডিও ভাইরাল হতেই রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়। ভিডিওতে বিজেপির মণ্ডল সভাপতিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, সন্দেশখালি আন্দোলনে অনেকটাই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। লোক দিয়ে পাঠাতেন টাকা। ধর্ষণের ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও গলা বিকৃত করার অভিযোগ তুলেছেন ওই মণ্ডল সভাপতি ও বিরোধী দলনেতা। 'সন্দেশখালিতে বিপুল অস্ত্রের বরাত দিয়েছিল বিজেপি! সন্দেশখালিতে বিপুল অস্ত্র মজুতের নেপথ্যেও শুভেন্দু অধিকারী', ভিডিও পোস্ট করে দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের। যদিও গঙ্গাধর কয়ালের স্ত্রীর দাবি, 'বিজেপি করে বলেই স্বামীকে ফাঁসিয়েছে তৃণমূল'। 


ভাইরাল ভিডিও-২


ভোটের মধ্যে সন্দেশখালির আরেক ভাইরাল ভিডিও হয়েছিল। ভাইরাল ভিডিওয় বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। সন্দেশখালির আন্দোলনকারী হিসেবে যাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র ও আন্দোলনকারী মাম্পি দাসের। এই ভিডিও নিয়েও জোর চর্চা চলে রাজ্য রাজনীতিতে। 


এই দুই ভাইরাল ভিডিও নিয়েই এঁকে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিল তৃণমূল এবং বিজেপি। যদিও সেই সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল সন্দেশখালিকাণ্ডে এই নতুন মোড় ভোটযুদ্ধে কি কোনও প্রভাব ফেলবে?


ভাইরাল ভিডিওর পাশাপাশি রেখা পাত্রকে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভও চরমে উঠেছিল সন্দেশখালিতে। সেই সময় বসিরহাটে রেখাকে নিয়ে প্রার্থী ক্ষোভ সামাল দিতে সাফাইও দিতে হয় শুভেন্দু অধিকারীকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল-বিজেপির এই লড়াইয়ের প্রভাব পড়তে পারে ভোট ব্যাঙ্কে।  


ভোটবাক্স খুলতে অবশ্য দেখা যায়, সন্দেশখালিতে দাপট দেখাচ্ছে তৃণমূলই। হাজি নুরুল ৫ লক্ষের বেশি ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিলেন। ভোট গণনার কয়েকঘন্টা পর রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সত্যি 'অপারেশন সন্দেশখালি' কেবল ভোট জেতার জন্য সাজিয়েছিল বিজেপি? বিজেপির এই ভরাডুবি আসলে মান্যতা দিল তৃণমূলের সন্দেহ-অভিযোগকেই? ভাইরাল ভিডিও থেকে শাহজাহান-ইস্যু, সন্দেশখালির জনতার বিশ্বাস মমতা-অভিষেকেই, ভোট বাক্স উত্তর দিল সেখানেই। 


আরও পড়ুন, ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর


 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে