বর্ধমান : রায়না, জামালপুর, কালনা, মেমারি, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, পূর্বস্থলী উত্তর ও কাটোয়া। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে বর্ধমান পূ্র্ব লোকসভা কেন্দ্রের (Burdwan Purba Loksabha Constituency) অন্তর্গত এই সাতটি আসনেই জয়লাভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে সংগঠন কার্যত মজবুত রাজ্যের শাসক দলের। কিছু এলাকায় ক্ষমতা বাড়িয়েছে বিজেপিও। শুধু তাই নয়, শেষ বিধানসভা ভোটে এই লোকসভা কেন্দ্রের সাত এলাকায় ভোটের হারও খারাপ ছিল না গেরুয়া শিবিরের। প্রায় ৪০.৪ শতাংশ। তৃণমূলের অবশ্য বেশ কিছুটা বেশি ছিল ৪৭ শতাংশ। সেই তুলনায় অনেকটাই কম সিপিএম বা কংগ্রেসের। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলে থাকে, এই কেন্দ্রে বামফ্রন্টের ভোট যত কমেছে, ততই বেড়েছে বিজেপির। এই পরিস্থিতিতে বর্ধমান পূর্বে এবার লড়াই ত্রিমুখী। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে চিকিৎসক শর্মিলা সরকারকে। বিজেপি ভরসা রেখেছে অসীম সরকারের উপর। অন্যদিকে, সিপিএম প্রার্থী শিক্ষক সংগঠনের নেতা নীরব খাঁ। Lok Sabha Election 2024

বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় কোন কোন বিধানসভা এলাকা ?

রায়না
জামালপুর
কালনা
মেমারি
পূর্বস্থলী দক্ষিণ
পূর্বস্থলী উত্তর
কাটোয়া

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে উপরের ৭ কেন্দ্রে জয়ী কোন দল ?

বিধানসভা কেন্দ্র বিধায়ক রাজনৈতিক দল
রায়না শম্পা ধাড়া তৃণমূল কংগ্রেস
জামালপুর অলোক কুমার মাঝি তৃণমূল কংগ্রেস
কালনা দেবপ্রসাদ বাগ (পল্টু) তৃণমূল কংগ্রেস
মেমারি মধুসূদন ভট্টাচার্য তৃণমূল কংগ্রেস
পূর্বস্থলী দক্ষিণ স্বপন দেবনাথ তৃণমূল কংগ্রেস
পূর্বস্থলী উত্তর তপন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস
কাটোয়া রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস

শেষ ৩ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী কে বা কারা ?

২০০৯ অনুপ কুমার সাহা সিপিএম
২০১৪ সুনীল কুমার মণ্ডল তৃণমূল
২০১৯ সুনীল কুমার মণ্ডল তৃণমূল

বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য-

১. বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে সাক্ষরতার হার ৬৭.৯৯%
২. এসসি ভোটারের হার ৩১. ২ % (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৩. এসটি ভোটারের হার ৮.১ % (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৪. মুসলিম ভোটারের হার ২২.১% (ভোটার তালিকা অনুযায়ী)
৫. গ্রামীণ এলাকায় ভোটার ৮৫.৫ % (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৬. শহর এলাকার ভোটার ১৪.৫ % (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৭. ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্রে মোটার ভোটার ১৬৯৬৫২৮
৮. ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্রে মোট বুথ ছিল ১৯১৯
৯. ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৪.৭%

বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে জাতির ভিত্তিতে কত শতাংশ ভোটার ?

বৌদ্ধ ০.০২%
ক্রিশ্চান ০.২৭%
জৈন ০.০২%
মুসলিম ২২.১%
এসসি ৩১.২%
এসটি ৮.১%
শিখ ০.২২%

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে প্রতিন্দ্বন্দ্বী করা মূল রাজনৈতিক দলগুলির ভোট শতাংশ-

তৃণমূল ৪৪.৯
বিজেপি ৩৮.৬
সিপিএম ১২.৩
কংগ্রেস ২.৭

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এই লোকসভা কেন্দ্রে কোন দলের কত শতাংশ ভোট ?

তৃণমূল ৪৭
বিজেপি ৪০.৪
সিপিএম
কংগ্রেস ১.৮

একনজরে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র ও প্রার্থীরা -

২০১৯-এ এই আসনে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সুনীলকুমার মণ্ডল। কিন্তু, এবার তাঁকে টিকিট দেয়নি দল। তাঁর বদলে বর্ধমান পূর্বে এবারের তৃণমূল প্রার্থী চিকিৎসক শর্মিলা সরকার। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সরকার কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও এবার পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূলের প্রার্থী তিনি। কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ গ্রামের মেয়ে শর্মিলা সরকার কাটোয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে কলকাতায় চলে যান পড়াশোনার জন্য। তারপরে সেখান থেকেই মেডিক্যাল নিয়ে পড়াশোনা ও চাকরি।

টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সুনীল মণ্ডল। জেলা নেতৃত্বকে একহাত নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "এই প্রার্থী সম্পর্কে আমার কোনও অভিজ্ঞতা নেই বা জানাও নেই। জানি না উনি কীরকম মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। জেলা সভাপতি এবং মন্ত্রীমশাই...জানি না কী অপরাধ আমি করেছি। রবিবাবু পুনরায় কংগ্রেসকে সাপোর্ট করার জন্য ...শুধু আমাকে নয় ভাল ভাল লোককে জেলা থেকে সরানো হয়েছে। আমাকে সরানো হল। ওঁদের বশ্যতা স্বীকার করতে হবে। ওঁদের মতে চলতে হবে। সেটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এঁদের পদতলে যাঁরা থাকবেন না, তাঁদের কেউ জেলায় থাকতে পারবেন না। রবি এবং স্বপন, এঁদের দাদা বলতে আমার ঘৃণা হয়। একটাই দুঃখ যে, দিদি যাঁদের বেশি ভালবাসেন, তাঁরাই দিদির সঙ্গে গদ্দারি করেন।" 

পেশায় কবিয়াল। গান বেঁধে ঘায়েল করেন প্রতিপক্ষকে। নদিয়ার হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক এবার লোকসভার ময়দানে। জেলার সীমানা ছাড়িয়ে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে লড়াই করছেন অসীম।হলফনামা অনুযায়ী, বিজেপি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ। পেশায় কবিয়াল। স্ত্রী শিক্ষক। এহেন অসীম সরকারের কখনও অনুব্রত মণ্ডল, কখনও রামপুরহাট হত্যাকাণ্ড - তাঁর গানের বিষয় হয়ে ওঠে সব কিছুই।  গান বেঁধে তৃণমূলকে বিঁধতে যিনি সিদ্ধহস্ত, সেই অসীম সরকার কখনও কখনও নিশানা করেছেন, তাঁরই দল বিজেপির একাংশকেও! অন্য ময়দানে প্রার্থী হয়ে তাঁর প্রচারের উঠে এসেছে সন্দেশখালি থেকে নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গ। 'কবিয়াল' প্রার্থী নজর কেড়েছেন নিজের সুরেও। এই কেন্দ্রে তাঁর হাত ধরে পালাবদলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি।

অন্যদিকে, তাঁদের দিক থেকে যাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তাঁদের একটা বড় অংশ পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই আবার তাঁদের দিকে ঝুঁকছেন বলে আশাবাদী অনেক বাম নেতৃত্ব। তৃণমূলকে নিয়োগ দুর্নীতি ও বিজেপিকে নির্বাচনী বন্ডের মতো ইস্যুতে একযোগ বিঁধে পালে হাওয়া লাগাতে চাইছেন সিপিএম প্রার্থী তথা শিক্ষক সংগঠনের নেতা নীরব খাঁ। গঙ্গায় ভাঙন, পূর্বস্থলীতে আর্সেনিকযুক্ত পানীয় জল-সহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে শেষমেশ কোন দল শেষ হাসি হাসে সেটা জানা যাবে ৪ জুন ভোটগণনার দিন।

আরও পড়ুন ; গড় অক্ষত থাকবে অধীরের ? নাকি TMC-র হয়ে বহরমপুরে 'ছক্কা হাঁকাবেন' পাঠান  

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।