কলকাতা: সাধু-সংঘাত নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই কি এবার খানিক ড্যামেজ কন্ট্রোলের (Damage Control) চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)? সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলকে মোদির (Narendra Modi) আক্রমণের জবাব দিলেন মমতা। 'সংরক্ষণ সংবিধান প্রদত্ত, কেউ কাড়বে না', কড়া আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর।
সাধু-সংঘাত নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি
সাধু-সন্ত-সন্ন্যাসীদের নিয়ে মমতার মন্তব্যের সমালোচনার ঝড়। সেই আবহে সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলকে মোদির আক্রমণের জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'মোদি বলছেন, মুসলিমরা এখানে জিতলে তফশিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, কোনও মুসলিম আপনার গায়ে হাত দেবে না। সংরক্ষণ নিয়ে মিথ্যে বলছেন নরেন্দ্র মোদি। সংরক্ষণ সংবিধান প্রদত্ত, কেউ কাড়বে না', সংরক্ষণ নিয়ে মোদির আক্রমণের জবাব মমতার।
১৮ মে গোঘাটের সভা থেকে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ এবং ইসকনের সাধু-সন্ত-সন্ন্যাসীদের একাংশকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় রাজনীতিতে। প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। গতকালও রাজ্যে প্রচারে এসে এ নিয়ে সরব হন নরেন্দ্র মোদি। (Loksabha Election 2024)
এই ঘটনায় সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, 'সাধুর কথা বলে হিন্দু ভোট নেবে, সাধুর বিরোধিতা করে মুসলমান ভোট নেবে। এই একটা অদ্ভুত, ঘৃন্য, রাজনৈতিক খেলা চলছে বাংলায় বলে আমি মনে করি।'
ভোটের রাজনীতিতে 'সাধু-সন্ন্যাসী-মহারাজ'! মমতা-মোদি জোরালো বাগ্যুদ্ধ
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত শনিবার বলেন, 'ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি আগে খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু, যে লোকটা বলে আমি তৃণমূল কংগ্রেসকে এজেন্ট বসতে দেব না, সে লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন আছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে কী সাহায্য করিনি? যখন আমি শুনলাম আসানসোলের একটি মিশন আছে। ইস্কনও মনে রাখবেন ৭০০ একর জমি দিয়েছি। দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে, বলে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো।'
এই প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, 'আমাদের যাঁরা সন্ন্যাসী, যাঁরা ব্রহ্মচারী, তাঁরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন না। ভক্তরা স্বতন্ত্র ভোটের ব্যাপারে এবং সে ব্যাপারে আমরা ভক্তদের কী করণীয়, কী করণীয় নয়, কোনওভাবেই কোনও উপদেশ আমরা দিই না। কোনও ফতোয়া আমরা জারি করি না।'
এই প্রসঙ্গে রবিবার মমতাকে আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, 'আমার সরাসরি অভিযোগ, এখানকার মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে আমাদের সাধুদের, আমাদের মহান সংগঠনকে সবার সামনে গালাগালি করছেন, বদনাম করছেন।'
'সাধু' প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'ব্যাখ্যা' দিয়ে বলেন, 'আমি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে নই, আমি কেন একটা ইন্সস্টিটিউশনের বিরুদ্ধে হব? আর আমি অসম্মানই বা কেন করব? আমি আজ নয়, গঙ্গাসাগরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অফিস আছে, আশ্রম আছে, ওরা এত ভাল, ওরা সত্যি আমাকে খুব ভালবাসে এবং মানুষের কাজ করে। আমি একটি লোকের নাম করে বলেছিলাম, তাঁর নাম কার্তিক মহারাজ। তিনি আমাদের এজেন্ট বসতে দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের, ভোটের দু-দিন আগে, মুর্শিদাবাদে যে দাঙ্গাটা করিয়েছিলেন, তার হোতা ছিলেন উনি, আমি সেই জন্য বলেছিলাম।'
হঠাৎ কেন ভোটের ময়দানে 'সাধু-সন্ন্যাসী'? রাজনৈতিক কৌশল? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'স্বামী বিবেকানন্দ বাড়ি এক দিনে আমরা কিনিয়ে নিয়েছিলাম। বাগবাজারে সিস্টার নিবেদিতার বাড়ি পুরসভার টাকায় কিনিয়ে নিয়েছি। দার্জিলিংয়ে নিবেদিতার বাড়ি আমরা বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে কথা বলে করে দিয়েছিলাম। রামকৃষ্ণ মিশনের কাছে সেই বাড়ি দেওয়া হয়েছে।'
বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেন, 'আমাদের যে তিরিশের কাছে সিট, ওদিকে এগোচ্ছি। দিদিমণি এখন ২২ থেকে নেমে ১৫-র কাছে চলে এসেছেন। আমি জানি না আর কতদূর নামবে, সিঙ্গল ডিজিট হয়ে যেতে পারে। এতে ওর যে টেনশন বাড়ছে, এটা দেখুন প্রত্যেকটা ফেজে কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে। ভগবান এটা ওঁর মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন, কারণ ওঁর পতন এসে গেছে সামনে।'
বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী বলেন, 'যেদিন থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দলের প্রবেশ শুরু হয়েছে এবং বিজেপি দলের প্রবেশ এই বাংলায় সম্ভব হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে। সেদিন থেকে এই বাংলার রাজনীতিতে ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী উভয়ই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দুটো মেরু হতে চাইছে, দুটো পোল হতে চাইছে।' সব মিলিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।