নয়াদিল্লি: সংখ্যার জোরে এতদিন বিরোধিতা কানে না তুললেও, এবার শরিকদের কাছেই চাপ বাড়ল বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। এবারের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নায়ডুদের প্রাপ্ত আসনে ভর করে কেন্দ্রে জোট সরকার গঠনের পথে তারা। আর সেই সরকার গঠনের আগেই 'অগ্নিপথ' প্রকল্প নিয়ে চাপ বাড়ল বিজেপি-র উপর। কারণ নীতীশ কুমাররে দল সংযুক্ত জনতা দল ওই প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করে দেখার দাবি জানাল। (Agnipath Scheme)
সংযুক্ত জনতা দলের মুখপাত্র কেসি ত্যাগী জানিয়েছেন, একাধিক রাজ্যে 'অগ্নিপথ' প্রকল্প নিয়ে বিরোধিতা রয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে আর্জি জানাতে চলেছেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যমে ত্যাগী বলেন, "আমরা প্রকল্পের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। তাই বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে আর্জি জানাব আমরা।" (Narendra Modi 3.0)
২০২২ সালে 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের সূচনা করে কেন্দ্রের দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশের সেনাবাহিনীতে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগের জন্য় এই প্রকল্প চালু করা হয়, যার আওতায় স্বল্প সময়ের জন্য অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের নিযুক্তি শুরু হয়, যাঁদের 'অগ্নিবীর' বলে উল্লেখ করা হয়। ১৭.৫ থেকে অনূর্ধ্ব ২১ বছর বয়সিদের নিযুক্তি শুরু হয় চার বছরের জন্য। মেয়াদ শেষে 'অগ্নিবীর'দের মধ্যে থেকে বাছাই করা ২৫ শতাংশকে আরও ১৫ বছরের জন্য রেখে দেওয়ার বিধান রয়েছে।
সেনাবাহিনীতে বয়সের ভারসাম্য ফেরাতেই এই প্রকল্প বলে দাবি ছিল সরকারের। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়।দেশের জাতীয় নিরাপত্তা যে সেনাবাহিনীর উপর ন্যস্ত, সেখানে নামমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়োগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সেনার পেশাদারিত্ব, রণকৌশল, সংস্কৃতির সঙ্গে 'অগ্নিবীর'রা একাত্ম হওয়ার সুযোগই পাবেন না বলে যুক্তি সামনে আসে। যুদ্ধক্ষেত্রে নামার আগে যেখানে সাত থেকে আট বছরের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ে, সেখানে কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না কি, প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা।
শুধু তাই নয়,'অগ্নিবীর'দের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে এই প্রকল্পে। চার বছর পর যাঁদের সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেওয়া হবে, তাঁরা ফিরে এসে কী করবেন, সেই প্রশ্নও ওঠে। তাঁদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কথা সরকার একেবারেই ভাবছে না বলে দাবি করেন বিরোধীরা। সেনার স্থায়ী কর্মীরা যেখানে একাধিক সুযোগ-সুবিধা পান, 'অগ্নিবীর'রা তার কিছুই পাচ্ছেন না বলেও সরব হন তাঁরা। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা অস্ত্র চালানোর শিক্ষা পেয়ে আবার সাধারণের মধ্যে আবার যে ফিরে আসবেন, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারেও 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের উল্লেখ ছিল। ক্ষমতায় এলে ওই প্রকল্প বাতিল করা হবে বলে জানায় তারা। সৈনিকদের যে বেতন, পেনশন দেওয়া হয়, সেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতেই অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের কেন্দ্র মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে একযোগে সরব হয় বিরোধীরা। কিন্তু এত বিরোধিতা সত্ত্বেও এযাবৎ বিষয়টি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি কেন্দ্র। কিন্তু জোট সরকার গঠন হওয়ার আগে এবার শরিকদের কাছেই সেই নিয়ে চাপ আসতে শুরু করেছে।
শুধুমাত্র 'অগ্নিপথ' প্রকল্পই নয়, দেশ জুড়ে জাতিগণনার দাবিও বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরেছে নীতীশের দল। বিহারে তেজস্বী যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং কংগ্রেসের সঙ্গে নীতীশের সরকার থাকাকালীনই রাজ্যে জনগণনা করে তারা। রাহুল গাঁধী নিজেও একাধিক বার দেশ জুড়ে জাতিগণনার দাবি জানিয়েছেন, যাতে হিন্দু-মুসলিম বিভেদের রাজনীতির চিত্রটা পরিষ্কার হয়। বিজেপি বরাবরই সেই দাবি খারিজ করে এসেছে। এবার নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের সামনে জাতিগণনার দাবিও জানিয়েছে নীতীশের দল।