গ্যাংটক: সিকিমে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে প্রেম সিংহ তামাং, যিনি PS Golay নামেই পরিচিত। রবিবার সিকিম বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হয়েছে। রাজ্যেরপ ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টিতেই জয়ী হয়েছে তাঁর দল সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা। স্কুল শিক্ষক থেকে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী, দীর্ঘ পথ পেরিয়েছেন ৫৬ বছর বয়সি PS Golay, বার বার বিতর্কেও জড়িয়েছেন। (Prem Singh Tamang Profile)


১৯৬৮ সালে নেপালি পরিবারে জন্ম PS Golay-এর। সিকিমের সিংলিং বস্তিতে জন্ম তাঁর। দার্জিলিং গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করে সরকারি স্কুলে চাকরি পান। সামাজিক কাজকর্ম এবং রাজনীতিতে বরাবরই আগ্রহ ছিল। যে কারণে তিন বছরের মাথায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে সিকিম ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে বিধায়ক হিসেবে সিকিম বিধানসভায় প্রবেশ। (Sikkim Assembly Elections 2024)


সিকিম ডেমোক্র্যাটিক পার্টির যুবশাখার আহ্বায়কের পাশাপাশি, দলের ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন PS Golay. ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সিকিমের পশুপালন, ধর্ম এবং শিল্প দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত শিল্প এবং পশুপালন বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যের নির্মাণ গৃহ এবং নির্মাণ বিভাগের মন্ত্রিত্ব হাতে ছিল। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শিল্প বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনিত হন PS Golay. 


আরও পড়ুন: Bhaichung Bhutia: ফুটবল মাঠের রূপকথা এখন অতীত, রাজনীতির ময়দানে আবারও পরাজিত বাইচুং, এই নিয়ে ষষ্ঠবার


পবনকুমার চামলিংয়ের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন PS Golay. পবনকে নিজের রাজনৈতিক গুরু হিসেবেও অভিহিত করতেন তিনি। কিন্তু PS Golay-এর সঙ্গে মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে পবনের সঙ্গে মতানৈক্য শুরু হয়। মন্ত্রিত্বের পরিবর্তে শিল্প বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয় PS Golay-কে। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। পবন এবং দলের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্র এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন প্রকাশ্যে। 


২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর রলু ময়দানে বিরাট সমাবেশের আয়োজন হয়। সেখানে দাঁড়িয়েই পবন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন PS Golay. ওই সমাবেশের পর PS Golay-এর উপর চটে যান পবন। যে বা যাঁরা ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে তাঁর সরকার। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে সিকিম ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে ইস্তফা দেন PS Golay. নিজের দল সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার প্রতিষ্ঠা করেন। 


২০১৪ সালে সিকিম বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে PS Golay-এর দল। সেবার ৩২টির মধ্যে ১০টি আসনে জয়ী হয় তারা। কিন্তু ২০১৬ সালে সরকারি টাকা তছরুপ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন PS Golay. ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পশুপালন দফতরের দায়িত্বে থাকার সময় ১০ লক্ষ টাকা তিনি এদিক ওদিক করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। সিকিম বিধানসভার সদস্যতাও হারাতে হয় PS Golay-কে। সিকিমের রাজনীতিতে PS Golay-এই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে বিধানসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। নিম্ন আদালতের রায়কে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানালেও খালিহাতে ফিরতে হয় PS Golay-কে। তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। 


কিন্তু এই গ্রেফতারিই PS Golay-এর জনপ্রিয়তা একধাক্কায় বাড়িয়ে দেয়। পবনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করারই মাশুল গুনতে হচ্ছে বলে মানুষের মনে ধারণা জন্মায়। ২০১৮ সালে জেল থেকে যখন বেরোন PS Golay, তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁকে নিয়ে বিরাট শোভাযাত্রা বেরোয়। এর পর আর পিছন ঘুরে তাকাতে হয়নি PS Golay-কে। 


২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম বার জয়ী হয় PS Golay-এর সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা পার্টি। ৩২টির মধ্যে ১৭টি আসনে জয়ী হয় তাঁর দল। আর্থিক তছরুপের মামলা থাকায় মুখ্যমন্ত্রী পদে বসা উচিত কি না, তা নিয়ে দোটানায় ছিলেন PS Golay. তাই সেবার নির্বাচনেও লড়েননি।  শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের ২৭ মে  মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। পরে উপনির্বাচনেও জয়ী হন। 


রবিবার সিকিম বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, পবনের সিকিম ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টকে কার্যতই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন PS Golay. এবার দু'টি আসন থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন পবন, দু'টিতেই পরাজিত হয়েছেন তিনি। এই প্রথম সিকিম বিধানসভায় প্রবেশ করতে পারবেন না তিনি। তাঁর দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইচুং ভুটিয়াও পরাজিত হয়েছেন। তাই PS Golay-এর এই জয়ে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।



PS Golay-কে ইতিমধ্যেই জয়ের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'সিকিম বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী PS Tamang Golay-কে সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চাকে অভিনন্দন। সিকিমের উন্নয়নের জন্য রাজ্যের সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে রইলাম'।