সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, সন্দেশখালি : সন্দেশখালিতে ( Sandeshkhali ) নতুন করে শুরু হয়েছে তীব্র অশান্তি। একদিকে যখন একের পর এক ভাইরাল নিয়ে বিজেপির ( BJP ) বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে তৃণমূল ( TMC ) । শাসক দল যখন দাবি করছে, সন্দেশখালির বেশির ভাগ অভিযোগই সাজানো, ঠিক তখনই আতঙ্কের ছবি সন্দেশখালির বাগদি পাড়ায়। সেখানে কারও ঘরে পুরুষ নেই। কে কখন গ্রেফতার হয়ে যায়, সেই আতঙ্কে ঘর ছাড়ছেন তাঁরা। পুলিশি অত্যাচারের ভয়ে ত্রস্ত বাগদিপাড়া। লাঠিহাতে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন যাঁরা, তাঁরা কেউ বলছেন তাঁরা বিজেপি করতেন, কেউ বলছেন বিজেপি করতেন না। শুধু শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টার ছেড়ার প্রতিবাদ করেছেন বলেও বাড়ির পুরুষ মানুষকে তুলে যাওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগও উঠে এল বাগদিপাড়া থেকে।
হাতে লাঠি নিয়ে রাতের পর রাত জাগছে প্রমিলা বাহিনী। কারও অভিযোগ, ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ, কোথায় তিনি, এখনও জানেন না মা। থানায় থানায় ঘুরেছেন, কিন্তু ছেলের খোঁজ এখনও পাননি। আবার কারও ভাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ছে পুলিশ। কী অভিযোগে জানা নেই তাঁদের। মুখে বলছেন, মরতে ভয় পাই না ! তাই রাত জেগে পাহারায় তাঁরা।
ঝাঁটা-লাঠি হাতে মহিলাদের রাত পাহারা দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে আগেই। এবিপি আনন্দ সেখানে গিয়ে দেখল, বাগদিপাড়া গ্রাম এখন কার্যত পুরুষ শূন্য। রাতে গ্রামে ঢুকে অত্যাচারের অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, রাতবিরেতে গ্রামে হানা দিচ্ছে পুলিশ। ঢুকে পড়ছে বাড়িতে। সোমবার তুলে নিয়ে যাওয়া হয় দুই বিজেপি কর্মী জুলফিকর মোল্লা ও সুশান্ত মণ্ডলকে। রাত হলেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গ্রামে এসে ভয় দেখাচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে খুনের হুমকিও।
এদিন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেখানে পৌঁছন রেখা পাত্র। বসিরহাটে বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, 'শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ, সন্দেশখালি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার মোজাফ্ফর গ্রামে এসে বেছে বেছে বিজেপি কর্মীদের চিনিয়ে দিচ্ছে। তার প্রেক্ষিতেই চলছে পুলিশি ধরপাকড়। '
বাগদিপাড়ায় মহিলাদের রাত পাহারার কথা শুনে এদিন গ্রামে যান রেখা পাত্র। ধৃত দুই বিজেপি কর্মী জুলফিকর মোল্লা ও সুশান্ত মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রেখা। বিজেপি কর্মীদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী।
অন্যদিকে, এদিন সন্দেশখালিতে পৌঁছান বিজেপি নেত্রী আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। তিনি বলেন, যেখান তদন্ত করছে সিবিআই, সেখানে পুলিশ কীভাবে গ্রেফতার করছে? এক মহিলা-সহ ৫ বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ও বিজেপি নেত্রী। তিনি জানান, বিজেপির লিগাল সেল পিয়ালি ওরফে মাম্পি-সহ ধৃতদের আইনি সহযোগিতা দেবে।
এরই মধ্যে সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতাকে হেনস্থা ও তৃণমূল কর্মীকে মারধরের ঘটনায় আরও এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই নিয়ে রবিবারের ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৫। বিজেপি কর্মী গীতা বর-সহ ধৃতদের বিরুদ্ধে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো ও তৃণমূলের সন্দেশখালি নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় নেতা দিলীপ মল্লিককে হেনস্থা ও তৃণমূল কর্মী তাতান গায়েনকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। যদিও গীতা বরের স্বামীর অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা প্রত্যাখ্যান করাতেই প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন :