কলকাতা: রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফায় ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ শনিবার, ২৭ মার্চ। আদর্শ আচরণবিধি অনুযায়ী প্রথম দফার জন্য প্রচারপর্ব শেষ হল তার ঠিক দুদিন আগে, অর্থাৎ ২৫ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায়।


প্রথম দফায় যে ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে, সেই কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের আদিবাসি অধ্যুষিত এলাকা। এক সময় যে এলাকাকে বামেদের দুর্গ মনে করা হতো। প্রচারে খামতি রাখেনি কোনও দলই। বিজেপির হয়ে এই জেলাগুলিতে প্রচার করতে এসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাংলায় 'আসল পরিবর্তন' করে 'সোনার বাংলা' গড়ার ডাক দিয়েছেন তাঁরা। মোদি ও শাহর পাশাপাশি বিজেপির হয়ে প্রচারে এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, স্মৃতি ইরানিরা। সারদা কেলেঙ্কারি, নারদা কাণ্ড, আমফানের ত্রান নিয়ে দুর্নীতি, করোনা পরিস্থিতি সামলানোর ব্যর্থতা - এই সব প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারকে বিঁধেছেন তাঁরা। পাশাপাশি আয়ুষ্মান ভারত, পিএম কিষাণ সম্মান নিধি-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্প চালু করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অনিচ্ছাকে কাঠগড়ায় তুলে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা-নেত্রীরা। বারবার করে বলা হয়েছে রাজ্যে দুর্নীতির কথা। গরুপাচার, কয়লা পাচার কাণ্ডে সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলেছেন, এমনকী প্রধনমন্ত্রী মোদিও।


প্রায় প্রত্যেক জনসভায় কাটমানি ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে বিঁধেছে বিজেপি। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যকে। শেষ লগ্নে বিজেপিতে যোগ দিয়ে বাঁকুড়া ও জঙ্গলমহলে প্রচার করেছেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। করোনা আতঙ্ক সরিয়ে 'মিঠুন'দাকে দেখতে উপচে পড়েছে জনতা।


'প্রার্থী আমি হব না, কারণ তাহলে আমি স্বার্থপর হয়ে যাব', জবাব মিঠুনের


প্রচারে খামতি রাখেনি তৃণমূলও। আহত অবস্থায় হুইলচেয়ারে চেপেই সর্বত্র জনসভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে জনবিরোধী দল হিসাবে বারবার তুলে ধরেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি 'মিথ্যুক' বলে কটাক্ষ করেছেন মমতা। এমনকী, বাংলার মানুষকে বিনামূল্যে করোনার প্রতিষেধক দিতে দেওয়া হয়নি বলেও কেন্দ্রকে বিঁধেছেন তিনি। নন্দীগ্রামে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন তাঁর ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন মমতা। কেন্দ্র গোটা দেশকে বেচে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। পাশাপাশি বারবার বহিরাগত বলে রাজ্যে প্রধান বিরোধী হিসাবে উঠে আসা বিজেপির নেতা-নেত্রীদের আক্রমণ করেছেন মমতা। তাঁর মুখেও শোনা গিয়েছে জনপ্রিয় 'খেলা হবে' স্লোগান।


পেট্রোপণ্য, রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বারবার কেন্দ্রকে তুলোধনা করেছেন মমতা। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান তুলেছেন, বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।


২০১১ ও ২০১৬, পরপর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে এই ৩০টি কেন্দ্রে কার্যত দাপট দেখিয়েছিল তৃণমূল। যদিও ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে সেই ছবি কিছুটা পাল্টায়। মাথাচাড়া দেয় বিজেপি। এবার কী হবে? ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে ২ মে, ভোটের ফল ঘোষণার দিন।