সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: বারুণী মেলা নিয়ে কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের। করোনা নিয়ে সরকারি নির্দেশিকা না থাকলে মেলা হবেই, দাবি করেছেন আরেক সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুরও।


 


৮ এপ্রিল থেকে বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায়। কিন্তু, মতুয়া সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ এই মেলাকে ঘিরেই শুরু হয়েছে বিভ্রান্তি।অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের অভিযোগ, কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি মেলা ভণ্ডুল করতে সক্রিয়। তারাই মেলা নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।  


 


মেলা যাতে বানচাল না হয়, সেজন্য তড়িঘড়ি বৈঠকে বসে মতুয়া মহাসঙ্ঘ। বৈঠকে ছিলেন সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। বৈঠকের পর তিনি দাবি করেন, এবার মেলা বন্ধ হওয়ার প্রশ্নই নেই।


 


প্রসঙ্গত করোনা মহামারীর জেরে গত বছর বন্ধ ছিল বারুণী মেলা। কিন্তু, এবার মতুয়া ঠাকুরবাড়ির দুই শিবিরই একসঙ্গে মেলা করতে চলেছে। এই প্রেক্ষিতে মেলা নিয়ে বিভ্রান্তি দানা বাঁধায় মতুয়া মহাসঙ্ঘের আরেক সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুরও জোর গলায় জানিয়ে দিয়েছেন, মেলা হচ্ছেই। মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘‘করোনা মহামারী নিয়ে সরকারি নির্দেশিকা না থাকলে মেলা এবছর হবে ৷’’বড় মা বীণাপানি দেবীর শেষকৃত্য থেকে ভোটের লড়াই,  মতুয়া ঠাকুর বাড়ির অন্দরের ফাটল বারবারই প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু বারুণী মেলা নিয়ে দেখা গেল ঐক্যের ছবি।


 


উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব ইস্যুতে মতুয়া ঠাকুর বাড়ির দুই শিবিরের সংঘাত সামনে এসেছে।


 


বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দেড়মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব কার্ড চালু করা হবে। কয়েকদিন আগে ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হাবড়ার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিন্হা। নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপির মিথ্যে প্রচার, পাল্টা দাবি করেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের।


 


রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট ধরে রাখতে ইস্তেহারে নাগরিকত্বকে প্রাধান্য দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির ইস্তেহারে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় এলে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


 


 


এই প্রেক্ষিতে এবার নাগরিকত্ব কার্ড চালুর কথা বলেছে গেরুয়া শিবির। হাবড়ার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিন্হার প্রতিশ্রুতি, রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দেড়মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব কার্ড চালু হবে। গত শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে যান বিজেপি প্রার্থী। সেখানে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তারপরই প্রতিশ্রুতি দেন নাগরিকত্ব কার্ডের। এরপরই বনগাঁর সাংসদও দাবি করেন, মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গেই আছে।


 


২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে ভোট শুরুর দিন, বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে, মতুয়া সমাজের সবচেয়ে বড় পীঠস্থান, হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মভিটেয় শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী।পাশাপাশি, শান্তনু ঠাকুরকে সামনে বসিয়ে, নরেন্দ্র মোদি বারবার একটাই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তিনি মতুয়াদের পাশেই রয়েছেন।মতুয়াদের বারবার কাছে টানার চেষ্টা নিয়ে বিজেপিকে তুলোধনা করেছে তৃণমূল।মমতাবালা ঠাকুর বলেছেন, নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যা প্রচার ও ভাঁওতাবাজি করছে বিজেপি। অসমই তার উদাহরণ।


বাংলায় প্রায় ২ কোটি ৮৭ লক্ষ মানুষ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের। যার সিংহভাগই মতুয়া।বাংলার অন্তত ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মতুয়া ভোট।উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি সংরক্ষিত বিধানসভা আসনে তো কার্যত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয় মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক।