Puja Banerjee Exclusive: ছোটবেলায় সিনেমা দেখা 'পাপ' মনে হত, অভিনয়কেই পেশা করলেন পূজা
ওয়েবসিরিজের ২টি পর্বের মধ্যে ২ বছরের বিরতি। তার মধ্যে আমূল বদলে গিয়েছে ব্যক্তিগত জীবন। মা হওয়ার পর প্রথমবার পর্দায় ফিরলেন অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়িতে একরত্তিকে রেখে করোনা পরিস্থিতিতে পুরোদমে শ্যুটিং করতে হয়েছে পূজাকে। 'পাপ' করার মধ্যে মিশে রয়েছে অসুস্থ ছেলেকে ছেড়ে যাওয়ার অপরাধবোধ? কেমন ছিল পূজা থেকে পার্বণী হয়ে ওঠার যাত্রাটা? মনে পড়ে ছোটবেলায় করা 'পাপ'? এবিপি লাইভ আড্ডা দিল নায়িকা পার্বণী ও নতুন মা পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
কলকাতা: ওয়েবসিরিজের ২টি পর্বের মধ্যে ২ বছরের বিরতি। তার মধ্যে আমূল বদলে গিয়েছে ব্যক্তিগত জীবন। মা হওয়ার পর প্রথমবার পর্দায় ফিরলেন অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়িতে একরত্তিকে রেখে করোনা পরিস্থিতিতে পুরোদমে শ্যুটিং করতে হয়েছে পূজাকে। 'পাপ' করার মধ্যে মিশে রয়েছে অসুস্থ ছেলেকে ছেড়ে যাওয়ার অপরাধবোধ? কেমন ছিল পূজা থেকে পার্বণী হয়ে ওঠার যাত্রাটা? মনে পড়ে ছোটবেলায় করা 'পাপ'? এবিপি লাইভ আড্ডা দিল নায়িকা পার্বণী ও নতুন মা পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
প্রশ্ন: দুটো পর্বের মধ্যে ২ বছরের বিরতি। 'পাপ' অন্তিম পর্বের জন্য দর্শকদের সঙ্গে সঙ্গে পার্বণীকেও কি অপেক্ষা করতে হয়েছিল?
পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়: পার্বণী নিজেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। কারণ আমিও জানতাম না গল্পের শেষে কী হবে। তবে আমার থেকে বেশি বোধহয় দর্শকরা অপেক্ষা করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত যারা পাপ দেখেছেন, প্রত্যেকে প্রশংসা করেছেন। ভালো লাগছে।
প্রশ্ন: 'পাপ' এর দুটো পর্বের মধ্যে পূজার জীবনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে, কোলে এসেছে ছোট্ট কৃশিব। মাতৃত্ব আর অভিনেত্রী সত্ত্বা সামলানোটা কতটা কঠিন ছিল?
পূজা: দুটো সত্ত্বার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলা সহজ নয়। তবে আমার জন্য পরিস্থিতিটা আরও কঠিন করে তুলেছিল করোনাকাল। কৃশিবকে বাড়িতে রেখে শ্যুটিং করতে যাওয়াটা আমার জন্য বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল। ও খুব ছোট, তাই সংক্রমণের ভয় পেয়েছিলাম। তবে পাপ সিরিজটা নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল। ইতিমধ্যেই সবাই ২ বছর অপেক্ষা করেছেন। আমি দর্শকদের আর অপেক্ষা করাতে চাইনি। আমার টিম খুব সাহায্য করেছে আমায়। আমার সময় মতই শ্যুটিং ফেলত। সবার সাহায্যেই অন্তিম পর্বের শ্যুটিংটা শেষ করতে পেরেছি। একটা ঘটনা মনে আছে, একদিন কৃশিবের খুব জ্বর। আমার শেষদিনের শ্যুটিং ছিল তারপরের দিন। সারারাত ওর সঙ্গে জেগেছি। পরের দিন শ্যুটিং-এ যাব। কৃশিব আমায় ছাড়তে চাইছিল না। শ্যুটিং-এ গিয়ে কাজে মন লাগছিল না। খারাপ লাগছিল। একজন মা হিসাবে অসুস্থ বাচ্চাকে বাড়িতে ছেড়ে আসাটা অনুচিত। আবার একজন অভিনেত্রী হিসাবে, জীবনে যাই হোক না কেন.. শো মাস্ট গো অন। নিজের জীবনে এই টানাপোড়েনটা প্রথম অনুভব করেছিলাম।
প্রশ্ন: চেহারা থেকে জীবনযাত্রা, মা হওয়ার পর অনেক কিছু বদলে যায়। ফ্লোরে ফিরতে ভয় হয়েছিল?
পূজা: আমি বিশ্বাস করি, একজন অভিনেত্রী নিজের অভিনেত্রী সত্ত্বাকে কখনও ভুলে যেতে পারেনা। ক্যামেরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আমি এখনও সব ভুলে অভিনয়টাই করি। তবে হ্যাঁ.. জীবনযাত্রী বদলেছে। শট শেষ হলেও মনে হয় কৃশিব খাবার খেয়েছে তো.. ঠিক আছে তো! আগে যেমন সমস্ত চিন্তা ভুলে কেবল কাজটাই করতাম, এখন কৃশিবের ভাবনা সবসময় থাকে।
প্রশ্ন: করোনার জন্য বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠান পিছিয়েছে। কী পরিকল্পনা?
পূজা: আমার খুব ইচ্ছা ছিল বেনারসি পরে কনে সাজব। পিঁড়িতে চড়ে ঘুরব। বাঙালি বিয়ে ঠিক যেমনটা হয়। আমি এখনও ঠিক শুধু আইনি বিয়েতে বিশ্বাসী নই। কিন্তু এখন এত খারাপ পরিস্থিতি, মানুষ ভালো নেই। আনন্দ করে বিয়ের কথা ভাবতে ভালো লাগছে না। অপেক্ষা করছি.. পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।
প্রশ্ন: 'পাপ'-এর নায়িকার ছোটবেলায় করা কোনও পাপের কথা মনে পড়ে?
পূজা: (হাসি) আমার বাড়িতে খুব কড়াকড়ি ছিল। টিভি দেখতে দিত না। ছোট্ট একটা সাদাকালো টিভি ছিল বাড়িতে। সেটা দেখারও অনুমতি ছিল না। কেবল লাইনও ছিল না। সেইসময় পড়তে যাওয়ার নাম করে পাশের বাড়িতে সিনেমা দেখতে চলে যেতাম। সবজি খেতে ভালোবাসতাম না আমি। তাই খাবার সময় আগে উচ্ছে, শাক এইগুলো পাতে দিত। খেয়ে নিলে তবে ভালো খাবারটা পেতাম। আমি রোজ পিছনের জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতাম সব। একবার ফেলতে গিয়ে গ্রিলে আটকে যায়। ধরা পড়ে যাই বাবার কাছে। ব্যাস...খুব মার খেয়েছিলাম। ও হ্যাঁ, একবার বৃষ্টিতে বন্ধুর সঙ্গে লুকিয়ে হজমোলা কিনতে গিয়ে আটকে গিয়েছিলাম। সেসময় মনে হত মা কে মিথ্যে বলে খুব পাপ করেছি। এখন মনে হয়, আমার ছেলেও যেন এই অভিজ্ঞতাগুলো পায়। গ্যাজেটের দুনিয়ার বাচ্চারা এখন বৃষ্টিতে ভেজা, খেলা করে এগুলো প্রায় ভুলতে বসেছে।
প্রশ্ন: বাড়িতে টিভি দেখার অনুমতি ছিল না। যখন অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বাছলেন, পরিবারের কী প্রতিক্রিয়া ছিল?
পূজা: বাবা বলতেন, পড়াশোনা সবার আগে। বড় হয়ে স্বনির্ভর হলে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে। তবে আমি ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। বাড়িতে কখনও তা নিয়ে কেু আপত্তি করেননি। বরং বাবা আমায় থিয়াটার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন যাতে অভিনয়টা শিখতে পারি। তবে আমি খুব ভয় পেতাম তখন। লজ্জাও। আমার এখনও মঞ্চে উঠতে ভয় লাগে। ক্যামেরার সামনে যে আত্মবিশ্বাসটা পাই সেটা মঞ্চে পাই না।
প্রশ্ন: 'পাপ'-এর শ্যুটিং সেটে কোনও মজার ঘটনা রয়েছে?
পূজা: গোটা সিরিজের শ্যুটিয়েই খুব মজা করেছি। তবে এবার করোনাবিধি মানতে গিয়ে অনেক কিছু বাদ পড়েছে। সেটে রোজ বিকেলে একসঙ্গে ঝালমুড়ি খাওয়া হত। আর আমি কড়া ডায়েটে থাকতাম। সবাই আমায় দেখিয়ে সিঙাড়া, জিলিপি খেত। তখন বলতাম খাব না। পরে ভ্যানিটিতে গিয়ে চেয়ে পাঠাতাম খাবার। অনেকবার ধরাও পড়েছি।
প্রশ্ন: অভিনয় নিয়ে আগামীদিনে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
পূজা: করোনা পরিস্থিতিতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। ছবির কাজ এখনও সব বন্ধ। ওটিটিতেই অনেকগুলো কাজ রয়েছে। একটু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই শ্যুটিং শুরু করব।