কলকাতা: চোখে চশমা, গাঢ় লিপস্টিক ঠোঁটে। দার্জিলিং নিবাসী এক চিকিৎসকের ভূমিকায় পর্দায় ঝলমল করছেন তিনি। উচ্ছসিত গলায় ভাগ করে নিলেন অঞ্জন দত্তের সঙ্গে প্রথম কাজ করার অভিজ্ঞতা। শুধু কি তাই, একসঙ্গে সামলাচ্ছেন ছোটপর্দা আর বড়পর্দার শ্যুটিং। অভিনেত্রীর কথায়, এটা তাঁর 'লাকি জুলাই'। ব্যস্ততা সামলে বৃষ্টির সন্ধ্যায় এবিপি লাইভের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় সন্দীপ্তা সেন।


 



 


প্রশ্ন: ছোটপর্দায় সারদাদেবীর চরিত্র অন্যদিকে 'একান্নবর্তী'-র হাত ধরে বড়পর্দায় প্রথম পা রাখা। একসঙ্গে এত কিছু সামলাবেন কী করে?


সন্দীপ্তা সেন: আমার জন্য এটা লাকি জুলাই বলা যেতে পারে।(হাসি) অনেকদিন পর ছোটপর্দায় ফিরছি। সেটাও এমন একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র নিয়ে। একসঙ্গে তিনটে প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি। মা সারদার চরিত্র তো বাঙালির মনে গেঁথে রয়েছে। ওই চরিত্রটা নিয়ে আমি খুব উৎসুক। 'মার্ডার ইন দ্য হিলস' -র শ্যুটিং হয়ে গিয়েছে। স্ট্রিমিং শুরু হবে। আর জীবনে প্রথমবার বড়পর্দায় পা রাখছি মৈনাক ভৌমিকের ছবির হাত ধরে। ভীষণ এক্সাইটেড আমি। ঠিক সামলে নেব। আর কবে কোথায় শ্যুটিং করতে যাব সেটা তো আমার টিম ঠিক করে। সেই চাপটা আমায় নিতে হয় না। 'একান্নবর্তী' একটা মজার বিষয় হল, আমার চরিত্রটা সন্দীপ্তা সেনেরই। কাজেই 'রাণী রাসমনি' ধারাবাহিক আর একান্নবর্তী'-তে দুটো চরিত্রে একসঙ্গে অভিনয় করতে সমস্যা হবে না।


 


প্রশ্ন: ছোটপর্দায় 'তুমি আসবে বলে' ধারাবাহিকের নন্দিনী, তার আগে 'দুর্গা', এখন সারদাদেবী, সন্দীপ্তা কি টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছে?


সন্দীপ্তা: 'দুর্গা' ধারাবাহিক দিয়ে আমার কাজ শুরু। তারপর 'টাপুর টুপুর'। ওই ধারাবাহিকে আমার চরিত্রটা ছিল ভীষণ মুখরা একটা মেয়ের। এরপর 'তুমি আসবে বলে'-তে আমার চরিত্রটা আবার এক্কেবারে আলাদা। 'প্রতিদান'-এ আবার ১০ রকম সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি। 'আস্তে লেডিস' সিরিজে মেঘার চরিত্রটা বেশ সাহসী ছিল। শেষমেষ বলতেই হয় অঞ্জনদার সঙ্গে 'মার্ডার ইন দ্য হিলস'। ডঃ নিমা প্রধান আবার বেশ অন্যরকম চরিত্র। আর মা সারদা তো বাঙালির মনে একটা অন্যরকম জায়গায় রয়েছেন। আমার টাইপকাস্ট হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।


 



 


প্রশ্ন: সারদাদেবীর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কেমন করে নিজেকে তৈরি করছেন?


সন্দীপ্তা: আমি 'শতরুপে সারদা' বলে একটা বই পড়ছি। আরও অনেকে অনেক বইয়ের নাম বলছেন। পড়ব। এই চরিত্রটায় নিজেকে তৈরি করার জন্য রিসার্চ ছাড়া উপায় নেই।


 


প্রশ্ন: করোনা পরিস্থিতিতে একজন অভিনেত্রী নয়, একজন মনোবিদ হিসাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এমন কোনও ঘটনা আছে যেটা মন ছুঁয়ে গিয়েছে?


সন্দীপ্তা: প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেরই একটা গল্প থাকে। আর সেই গল্পটায় সেই নায়ক, সেই নায়িকা। যখন তাঁদের কথা শুনেছি, আমার দেওয়া টিপস তাঁদের কাজে লেগেছে, আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে এটা খুব বড় প্রাপ্তি এটা। অনেক মানুষ নিজের মনের কথা বলেছেন। একজন নার্সের সঙ্গে কথা হয়েছিল। হসপিটালে ডিউটি করতে করতেই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর লড়াইয়ের গল্প শুনলাম। একজন নিজে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর তাঁর ঠাকুমা মারা যান। ওনার মনের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করত, যে ঠাকুমার মৃত্যুর জন্য উনিই দোষী।


আরও দেখুন -


দার্জিলিং-এ শ্যুটিং করতে গিয়ে একা করবস্থানে ঘুরতে গিয়েছিলেন সন্দীপ্তা!


 


প্রশ্ন: সন্দীপ্তা সবার মনখারাপ সারান, আর সন্দীপ্তার মনখারাপ হলে?


সন্দীপ্তা: আমার জীবনে দুজন বন্ধু আছেন। বাবা আর মা। মনখারাপ হলে ওদের সঙ্গে গল্প করি। তাতেই মন ভালো হয়ে যায়। আর যদি কখনও খুব ডিপ্রেশানে ভুগি, নিজেই সেখান থেকে বেরনোর উপায় খুঁজি। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি। অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিস্থিতিটা দেখার চেষ্টা করি। তবে যদি কখনও নিজের হাতের বাইরে পরিস্থিতি চলে যায়, তাহলে তো মনোবিদের কাছে যেতেই হবে।


 


প্রশ্ন: অভিনেতা রাহুল অরুনোদয় বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন রয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত?


সন্দীপ্তা: বহুবার বলেছি, আবার বলছি, রাহুল আর আমি শুধু বন্ধু। আমাদের মধ্যে এর বাইরে আর কোনও সম্পর্ক নেই। এই সত্যিটা পাঠকরা বিশ্বাস করুন প্লিজ। আমি ক্লান্ত এই বিষয়টা নিয়ে বলতে বলতে। মানুষ আমায় এতদিন ভালোবেসেছেন আমার অভিনয়ের জন্য। এর মধ্যে সম্পর্ক, জটিলতা টানার কী প্রয়োজন? বুঝি, দর্শকদেরও আগ্রহ থাকে। কিন্তু রটনায় কান দেবেন না। ঘটনাটা জানা খুব জরুরি।


 


প্রশ্ন: 'মার্ডার ইন দ্য হিলস'-এর শ্যুটিং করতে গিয়ে দার্জিলিংকে অন্য চোখে দেখলেন?


সন্দীপ্তা: আমি ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসি। অঞ্জনদার সৌজন্যে এমন এমন জায়গায় গিয়েছিলাম, যেখানে ঘুরতে গেলে কখনও যাওয়ার অনুমতি পেতাম না। একদিনের কথা মনে আছে, খুব তাড়াতাড়ি শ্যুটিং শেষ হয়েছে। আমি অঞ্জনদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'এখানে কাছাকাছি কোথায় করবস্থান আছে বলো তো'? জানলাম, নর্থ পয়েন্টের কাছে। একটা ক্যাব বুক করে একা চলে গেলাম। ঘুরলাম। ওখানে একটা ছোট্ট গ্রাম আছে, সেখানেও গেলাম। মানুষদের সঙ্গে কথা বললাম। অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। এছাড়াও মনে পড়ে সেন্ট পলসে শ্যুটিং-এর কথা। সেন্ট পলসে অঞ্জনদা পড়তেন। শ্যুটিং-এর ফাঁকে ফাঁকেই আমাদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন, 'ওই যে জানলাটা আছে, ওর নীচে যে বিছানাটা.. আমি ওখানেই শুতাম'। এই ছোট ছোট অভিজ্ঞতাগুলো অনবদ্য। সিরিজটা শেষ হয়ে যেতে মন খারাপ হয়েছিল। গোটা টিমটা একটা পরিবারের মত হয়ে গিয়েছিল তো। এখন অপেক্ষা করছি, কবে আবার দ্বিতীয় সিজন শুরু হবে, আবার দার্জিলিং যাব...


 


প্রশ্ন: এমন কোনও চরিত্র আছে যেখানে অভিনয়ের সুযোগ পেলে স্বপ্নপূরণ হবে?


সন্দীপ্তা: অনেক আছে। তবে সুযোগ পেলে একজন স্কিৎজ়োফ্রেনিকের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।