কলকাতা: ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত ছবি '৮/১২' (8/12)। ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতকে স্বাধীন করার ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকে বিনয়, বাদল, দীনেশের (Binay-Badal-Dinesh) নাম। তাঁদের গল্পই এবার পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চলেছেন পরিচালক অরুণ রায় (Arun Roy)। তাঁর প্রথম ছবি জনপ্রিয় 'এগারো'। বিনয়, বাদল, দীনেশের বীরগাঁথা নিয়ে এক্সক্লুসিভ আড্ডা দিলেন এবিপি লাইভের (ABP Live) সঙ্গে।
প্রশ্ন: আপনার পরিচালিত ছবির তালিকা দেখলে স্পষ্ট ইতিহাসের প্রতি একটা ঝোঁক আছে।
অরুণ রায়: আমাদের ইতিহাস এত সমৃদ্ধ, সেটা আমাকে আকর্ষণ করে। চারিপাশে দেখি, সকলে ভাবে কী নিয়ে ছবি বানাবে। কিন্তু আমাদের ইতিহাসের ভাণ্ডার তো বিপুল। এত গল্প-ঘটনা থাকলে আমি সেই নিয়ে কাজ করব না কেন! সেই সঙ্গে এত ধরনের চরিত্র। কত মানুষ বাংলার জন্য কত কাজ করেছেন। এটা আমার প্যাশন বলতেই পারেন। বাঙালি হিসেবে আমি সবসময়ে খুব গর্ববোধ করি। তাই বাঙালির ইতিহাসটাকে ঠিকঠাক করে ধরে রাখাটা আমার একটা ইচ্ছে। ইতিহাসের বাইরে আমি একটা মাত্র ছবি করেছি, যেটা 'ডার্ক কমেডি'। নাম ছিল 'চোলাই'। কিন্তু রাজনৈতিক ডার্ক কমেডি ঘরানার ছবি ভারতে করা বেশ কঠিন, বুঝতেই পারছেন।
প্রশ্ন: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ছবি তৈরি তো বেশ কঠিন। মানুষের আবেগ জড়িয়ে থাকে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। সেটা কি আলাদা চাপ সৃষ্টি করে?
অরুণ: না। আমার সেই চিন্তা একেবারেই থাকে না। আমার কাছে প্রত্যেকটা সিনের একটা করে বিস্তারিত রিসার্চ পেপার থাকে। কোন সিন কেন দেখাচ্ছি সেটা লেখা থাকে। সমস্ত তথ্য, নথি সব নিয়েই কাজ শুরু করি আমি। কেউ যদি আমার সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে তর্ক করতে চান তাহলে আমিও তর্কে অংশ নিতে রাজি। আমি যা যা পর্দায় দেখাচ্ছি সমস্ত ১০০ শতাংশ সত্যি।
প্রশ্ন: এই ছবির রিসার্চ কীভাবে সেরেছেন?
অরুণ: বিনয়-বাদল-দীনেশের ওপরে অজস্র বই রয়েছে। ছবিতে শুধু বিনয়-বাদল-দীনেশের কথাই নয়, রয়েছে 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স', 'যুগান্তর', 'অনুশীলন সমিতি'-র প্রসঙ্গও। সেই সময়কার বিখ্যাত গুপ্ত বিপ্লবী দল এগুলো। যারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। স্বভাবতই এসব নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে। প্রত্যেকটা বিষয়ে খুঁটিয়ে জানা, চরিত্রগুলিকে চেনা, কে কী কাজ করতেন, সমস্ত কিছুই জানতে হয়েছে। অনেকটা সময় শুধু পড়াশোনার জন্য়ই কাটাতে হয়েছে।
প্রশ্ন: বিনয়, বাদল, দীনেশের চরিত্রে সঠিক অভিনেতা খুঁজে পাওয়া কতটা কঠিন ছিল?
অরুণ: আমি সবসময় চেষ্টা করি এই ধরনের চরিত্রগুলিকে যেমন আমরা বইয়ের পাতায় দেখেছি, অভিনেতাদেরও যেন যতটা সম্ভব সেই রকমই দেখানো যায়। কিঞ্জল, অর্ণ এঁরা সকলেই থিয়েটারের পরিচিত মুখ। এঁদের অভিনয় নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন: মঞ্চের অভিনেতাদের দিয়ে ক্যামেরার সামনে কাজ করানো কি কঠিন?
অরুণ: দেখুন, মঞ্চে অভিনয়ের যে ধরন আর সিনেমার ধরন তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু কিছু থিয়েটার অভিনেতা আছেন যাঁরা ক্যামেরার সামনের ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করে নেন। তেমনই অনেকে ব্যতিক্রমও হন। যদিও সেই সংখ্যাটা বেশ কম। আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি তাঁদের ক্ষেত্রে সেরকম সমস্যা হয়নি। কারণ অভিনয় জিনিসটা তো এঁরা সকলেই জানে। কেবল মঞ্চের থেকে পর্দায় তার মাত্রাটা ভিন্ন। এঁদের সকলের মূল কাজ তো অভিনয় করা, সেটা তাঁরা পুরোদমে করেছেন। আমি বরং আমার এই টিমের সঙ্গে একটা কমফোর্ট জোনে থাকি। যাঁরা অভিনয়ের বিন্দুবিসর্গ জানেন না, তাঁদের নিয়ে কাজ করা খুব সমস্যার। তাই আমি চেষ্টা করি থিয়েটারে কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কাউকে নিতে।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা পূর্ব কলকাতা একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় তুলে ধরলেন কীভাবে?
অরুণ: ১৯৩০ সালের কলকাতা দেখানো হয়েছে। কলকাতার রাস্তাঘাট, অলিগলি, রাইটার্স বিল্ডিং সমস্ত কিছু আমাদের তৈরি করতে হয়েছে। এই গোটা কৃতিত্বটাই প্রোডাকশন ডিজাইনার তন্ময় চক্রবর্তী ও আমাদের ভিএফএক্স আর্টিস্ট ইন্দ্রনীল রায়ের। এঁরা দু'জন মিলে অসামান্য কাজ করেছেন।
প্রশ্ন: এরপর কী কাজ দেখতে পাব আপনার?
অরুণ: কাজ তো অনেক করতেই পারি, প্রযোজকদের ওপর নির্ভর করছে। আমার কাজ সহজে লক হয় না কারণ কাস্টিং নিয়ে আমি প্রযোজকের সঙ্গে আলোচনা করি না। ফলে অধিকাংশ প্রযোজকই আমার সঙ্গে কাজ করতে চান না। যদিও কান জি (কান সিং সোধা, "৮/১২" ছবির প্রযোজক) আরও একটা কাজের কথা বলে রেখেছেন। ছবির বিষয় এখনও স্থির হয়নি।