কলকাতা: বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্য়েই সাধারণের মনে দাগ কেটেছেন অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে ছোটপর্দায় নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে আজ অন্যতম পরিচিত মুখ শন বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এই দুই প্রতিভাবান অভিনেতাকে এক পর্দায় আনলেন পরিচালক অবন্তি চক্রবর্তী, তাঁর প্রথম স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি 'এ মিডনাইট টেম্পেস্ট' (A Midnight Tempest)-এ। যদিও এর আগেও একসঙ্গে কাজ করেছেন ঋতব্রত ও শন। তবে দু'জনেরই বক্তব্য, 'একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি এই ছবির কাজে। অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি।'
'এ মিডনাইট টেম্পেস্ট' একটি ৪ মিনিটের শর্টফিল্ম। উইলিয়ম শেক্সপিয়রের দুটি বিখ্যাত নাটকের দুটি খুব পরিচিত চরিত্রের একান্ত কথোপকথন ধরা পড়েছে এই ছবিতে। 'এ মিডসামার নাইটস ড্রিম' নাটকের অতিজাগতিক চরিত্র 'পাক' ও 'দ্য টেম্পেস্ট' নাটকের অতিজাগতিক চরিত্র 'এরিয়েল'-এর কথোপকথন ঘিরে তৈরি সিনেমাটি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, কলকাতার এক বারে মধ্যরাতে মদ্যপান করতে করতে দুই চরিত্রের কথোপকথন। আজও এই দুই 'ক্লাসিক' চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতাই উঠে এসেছে এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে। ওঁরা দু'জনেই দুই মেরুর চরিত্র। তাঁরা নিজের নিজের মতো করে, নিজেদের সময়ে দাঁড়িয়ে কীভাবে 'স্বাধীনতা'-এর মানে খুঁজছে বা বুঝছে, সেটাই ফুটে উঠেছে ছবিতে।
'পাক'-এর চরিত্রে ঋতব্রত এবং 'এরিয়েল' চরিত্রে অভিনয় করেছেন শন বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই অভিনেতার কথায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই ছবির জন্য একাধিক অনলাইন সেশন করা হয়। তাড়াহুড়ো নয়, বরং ধারাবাহিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে অনেক কিছু শিখতে শিখতে শেষ করা হয় ছবির কাজ। ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, 'পরিচালক বলে দিয়েছিলেন চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে গিয়ে নিজেদের সত্ত্বাকে হারিয়ে ফেললে চলবে না। বরং ওই দুইয়ের মেলবন্ধন ফুটিয়ে তুলতে হবে অভিনয়ের মাধ্যমে।' শন জানাচ্ছেন, 'জীবনের যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও সময়ে শেক্সপিয়র অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ফলে নিজেদের সত্ত্বাকে জিইয়ে রেখে কাজ করতে সুবিধেই হয়েছে।'
এই শর্টফিল্মের পরিচালক অবন্তি চক্রবর্তী এর আগে বহু নাটক পরিচালনা করেছেন। তবে চিত্র পরিচালনা এই প্রথম। তিনি জানাচ্ছেন, 'পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরির পরিকল্পনা আছে। তবে এখনও স্ক্রিপ্টিংয়ের কাজ চলছে।'
এযাবৎ বহু নাটক ও সিনেমায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। শেক্সপিয়রের একাধিক নাটক নিয়েও তাঁর কাজ নেহাত কম নয়। এই শর্টফিল্মে তাঁকে 'পাক' চরিত্রে দেখা গেছে।
কিন্তু এমন কোনও শেক্সপিরিয়ান চরিত্র যাতে ঋতব্রত নিজে অভিনয় করতে চান? প্রশ্ন শুনে অভিনেতার উত্তর, 'শেক্সপিয়রের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় পড়াশোনার মাধ্যমে হয়নি। বরং আমি শেক্সপিয়রের নাটক মঞ্চস্থ হতে দেখে এবং সেই প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত থেকে শেক্সপিয়রকে চিনেছি। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমাদের থিয়েটার গ্রুপ 'সিজার' নাটকটি মঞ্চস্থ করে। সেই সময় থেকে আমি ব্রুটাস চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। আমি ওই চরিত্রটার মতো একটা দোটানা অনুভব করতে চাই। এছাড়াও খানিক আজব শোনালেও আমি মার্ক অ্যান্টনির চরিত্রেও অভিনয় করতে চাই। বিশেষত আমার বাবা সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলে। এবং অবশেষে একটা চরিত্র আমার একান্ত পছন্দের, তা হল হ্যামলেট। আমার মনে হয় সব অভিনেতারই স্বপ্ন থাকে একবার ওই চরিত্রটিতে অভিনয় করার।' অন্যদিকে অভিনেতা শন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'শেক্সপিয়রের হ্যামলেট চরিত্রটির বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যার প্রত্যেকটা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে প্রাসঙ্গিক। হ্যামলেট নিজেকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে। তাই বোধ হয় এই চরিত্রের প্রতি সকল অভিনেতার একটা টান থাকে।'
অবন্তি চক্রবর্তীর এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির 'ডিপার্টমেন্ট অফ ইংলিশ অ্যান্ড মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেস'। ছবিটি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনলাইনে মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশেও।